ধর্ষণের পর গর্ভপাত, মামলাও নেয়নি পুলিশ

- আপডেট সময় ১১:১৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫
- / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে
১২ বছরের ওই কিশোরীর চার বছর আগে মা মারা গেছে। বাবা ঢাকায় ব্যবসা করেন। সৎ মা সেভাবে খোঁজ নেন না। এরই মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে। বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণ করেন প্রেমিক। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। ঘটনা এখানেই শেষ নয়, প্রেমিক ও তার পরিবার ওই কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে গর্ভপাত করান।
এসব নিয়ে সালিশ বৈঠক বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। কিন্তু সেখান থেকে পালিয়ে যান প্রেমিক। পরে ভুক্তভোগীর বাবা থানায় মামলা করতে গেলে মামলাও নেননি থানার ওসি। বলেছেন আদালতে যেতে। এখন মেয়ের ন্যায়বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরছেন বাবা।
অভিযুক্ত যুবক কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের মহিষাখোলা গ্রামের আকের শেখের ছেলে তুষার শেখ (২০)। তিনি একটি কলেজে পড়াশোনা করেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকালে গ্রামে সালিশ বসান সদকী ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য (মেম্বার) আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় ওই যুবক, ঘটনার শিকার কিশোরী, দুই পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সালিশে বনিবনা না হলে ওইদিন সন্ধ্যায় থানায় মামলা করতে যান কিশোরীর বাবা। তবে পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয় বলে অভিযোগ স্বজনদের।
এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় দেড় বছর আগে ওই কিশোরীর সঙ্গে প্রতিবেশী কলেজ পড়ুয়া তুষারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে তুষার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ গত ১০ জুন রাতে তুষার কিশোরীর শয়নকক্ষে ঢুকে শারীরিক সম্পর্ক করেন। এ দিনের ঘটনা তার বাবা জানতে পেরে ১১ জুন ফার্মেসি থেকে প্রেগনেন্সি কিট কিনে এনে বাড়িতে প্রাথমিক পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় ফলাফল পজিটিভ এলে বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।
এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে স্থানীয়ভাবে মীমাংসার কথা বলে ১৬ জুন কিশোরীকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে তুষারের স্বজনরা গর্ভপাত করান বলেও দাবি করেন ওই ছাত্রীর বাবা। এরপর বিয়ের আশ্বাস দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় মেম্বার আব্দুর রাজ্জাক সালিশ বসান। তবে মেম্বারের সালিশ না মেনে পালিয়ে যান অভিযুক্ত তুষার। পরে কিশোরীর বাবা সন্ধ্যায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তবে পুলিশ অভিযোগ না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়।
ঘটনার শিকার কিশোরীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, মেয়ের মা নেই। আমি ঢাকায় থাকি। সেই সুযোগে তুষার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ১৬ জুন তুষারের স্বজনরা মেয়েকে একটি ক্লিনিকে নিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে। গত বৃহস্পতিবার সকালে রাজ্জাক মেম্বার গ্রামে সালিশ বসায়। কিন্তু সালিশে তুষার বিয়ে না করে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যায় থানায় মামলা করতে গেলে ওসি সাহেব মামলা না নিয়ে আদালতে যেতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, গরিব মানুষ বলে কোথাও বিচার পাচ্ছি না। মা মরা মেয়েকে নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার পাচ্ছি না। মানসম্মান সব শেষ। মরা ছাড়া আর কোনো গতি নেই।
ওই ছাত্রী বলে, বিয়ের কথা বলে বহুবার শারীরিক সম্পর্ক করেছে তুষার। আমি অন্তঃসত্ত্বা হলে সে ও তার পরিবার জোর করে বাচ্চা নষ্ট করে। আমি তুষারের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
তুষারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তুষার ও তার বাবা আকের শেখ নেই। তার মা প্রতিবেদকের সঙ্গে কোনো কথা না বলে বাড়ির গেট বন্ধ করে দেন।
সালিশ বসানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন সদকী ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ফোনে বলেন, অন্তঃসত্ত্বার কথা শুনে সবাই মিলে তুষারের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য সালিশ বসানো হয়েছিল। কিন্তু তুষার বিয়ে না করায় সালিশ ভেঙে দেওয়া হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় সালিশ করার নিয়ম আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশ জানে। সামাজিকতা রক্ষার জন্য অনেক সময় অনেক কিছুই করা লাগে বলে ফোনটি কেটে দেন।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, ঘটনাটি মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।