ঢাকা ১০:৩৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

    এবার নেতানিয়াহুকে ক্ষমার আহবান জানালেন ট্রাম্প!

    ঢাকা প্রেস ডেস্ক
    • আপডেট সময় ১২:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
    • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দুর্নীতির মামলা বাতিল বা তাঁকে ক্ষমা করার আহ্বান। এই ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। 

    বুধবার ২৫ জুন,  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে “একজন যোদ্ধা” এবং “মহান নায়ক” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের ইতিহাসে বোধ হয় নেতানিয়াহুর মতো যোদ্ধা আর কেউ ছিলেন না। তিনি ইরানের মতো শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন।”

    ট্রাম্প দাবি করেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বাঁচিয়েছে, এবার যুক্তরাষ্ট্রই নেতানিয়াহুকে বাঁচাবে।” তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলাকে “অন্যায় শিকার” (Witch Hunt) হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই বিচার অবিলম্বে বাতিল করা উচিত, নয়তো তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।”

    ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৯ সালে ঘুষ, প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতরটি হলো “কেস ৪০০০” বা বেজেক-ওয়ালা কেস।

    এই মামলায় অভিযোগ, নেতানিয়াহু বেজেক টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির মালিক শাউল এলোভিচকে শত কোটি শেকেলের নিয়ন্ত্রক সুবিধা দিয়েছেন, বিনিময়ে এলোভিচের মালিকানাধীন ওয়ালা নিউজ সাইট থেকে তাঁর পক্ষে ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

    এছাড়া, তিনি একজন হলিউড প্রযোজকের কাছ থেকে হাজার হাজার ডলার মূল্যের সিগার, শ্যাম্পেন এবং উপহার গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নেতানিয়াহু এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

    নেতানিয়াহুর বিচার ২০২০ সালে শুরু হয় এবং এটি ইতিমধ্যে চার বছর ধরে চলছে। তেল আবিবের একটি আদালতে ৩ জুন, ২০২৫ থেকে তাঁর ক্রস-এক্সামিনেশন শুরু হয়েছে, যা প্রায় এক বছর ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের সময় বিচারকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল, কারণ আদালত শুধু জরুরি মামলা নিয়ে কাজ করছিল। তবে সোমবার, ৩০ জুন থেকে এই বিচার আবার শুরু হতে যাচ্ছে। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজোগের ক্ষমা দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তিনি বলেছেন, “এখনই ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনায় নেই, এবং এমন কোনো অনুরোধও করা হয়নি।”

    ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি ইসরায়েলকে অভূতপূর্ব সমর্থন দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং গোলান মালভূমির উপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব সমর্থন।

    সম্প্রতি, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং ২৩ জুন, ২০২৫-এ ঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা তাঁদের এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে। ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি “সম্পূর্ণভাবে নির্মূল” হয়েছে, যদিও মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটি কেবল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।

    ট্রাম্পের এই আহ্বান একটি গণতান্ত্রিক দেশের আইনি প্রক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভূতপূর্ব হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইসরায়েলের বিরোধী দল এবং কিছু বিশ্লেষক এটিকে ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার উপর হুমকি হিসেবে দেখছেন।

    এক্স-এ পোস্টে কেউ কেউ ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে নেতানিয়াহুর প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত সমর্থন এবং রাজনৈতিক মিত্রতার প্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য তাঁর নিজের আইনি লড়াইয়ের সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে, কারণ তিনি নিজেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় “অন্যায় শিকার” বলে দাবি করেছেন।

    এদিকে, নেতানিয়াহু নিজেও এই মামলাগুলোকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ইসরায়েলের মিডিয়া ও বিচার ব্যবস্থাকে “উদারপন্থী অভিজাত”দের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে অভিযোগ করেছেন। ২০১৭ সালের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পপুলিস্ট কৌশল অনুকরণ করছেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    এবার নেতানিয়াহুকে ক্ষমার আহবান জানালেন ট্রাম্প!

    আপডেট সময় ১২:৪০:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দুর্নীতির মামলা বাতিল বা তাঁকে ক্ষমা করার আহ্বান। এই ঘোষণা বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। 

    বুধবার ২৫ জুন,  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি পোস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে “একজন যোদ্ধা” এবং “মহান নায়ক” হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের ইতিহাসে বোধ হয় নেতানিয়াহুর মতো যোদ্ধা আর কেউ ছিলেন না। তিনি ইরানের মতো শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছেন।”

    ট্রাম্প দাবি করেন, “যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বাঁচিয়েছে, এবার যুক্তরাষ্ট্রই নেতানিয়াহুকে বাঁচাবে।” তিনি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চলমান দুর্নীতির মামলাকে “অন্যায় শিকার” (Witch Hunt) হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই বিচার অবিলম্বে বাতিল করা উচিত, নয়তো তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।”

    ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৯ সালে ঘুষ, প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতরটি হলো “কেস ৪০০০” বা বেজেক-ওয়ালা কেস।

    এই মামলায় অভিযোগ, নেতানিয়াহু বেজেক টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির মালিক শাউল এলোভিচকে শত কোটি শেকেলের নিয়ন্ত্রক সুবিধা দিয়েছেন, বিনিময়ে এলোভিচের মালিকানাধীন ওয়ালা নিউজ সাইট থেকে তাঁর পক্ষে ইতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।

    এছাড়া, তিনি একজন হলিউড প্রযোজকের কাছ থেকে হাজার হাজার ডলার মূল্যের সিগার, শ্যাম্পেন এবং উপহার গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। নেতানিয়াহু এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, এগুলো তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।

    নেতানিয়াহুর বিচার ২০২০ সালে শুরু হয় এবং এটি ইতিমধ্যে চার বছর ধরে চলছে। তেল আবিবের একটি আদালতে ৩ জুন, ২০২৫ থেকে তাঁর ক্রস-এক্সামিনেশন শুরু হয়েছে, যা প্রায় এক বছর ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের সময় বিচারকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল, কারণ আদালত শুধু জরুরি মামলা নিয়ে কাজ করছিল। তবে সোমবার, ৩০ জুন থেকে এই বিচার আবার শুরু হতে যাচ্ছে। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট ইসাক হারজোগের ক্ষমা দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও তিনি বলেছেন, “এখনই ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনায় নেই, এবং এমন কোনো অনুরোধও করা হয়নি।”

    ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তিনি ইসরায়েলকে অভূতপূর্ব সমর্থন দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং গোলান মালভূমির উপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব সমর্থন।

    সম্প্রতি, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং ২৩ জুন, ২০২৫-এ ঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে ট্রাম্পের ভূমিকা তাঁদের এই সম্পর্ককে আরও জোরদার করেছে। ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি “সম্পূর্ণভাবে নির্মূল” হয়েছে, যদিও মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, এটি কেবল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কয়েক মাস পিছিয়ে দিয়েছে।

    ট্রাম্পের এই আহ্বান একটি গণতান্ত্রিক দেশের আইনি প্রক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভূতপূর্ব হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইসরায়েলের বিরোধী দল এবং কিছু বিশ্লেষক এটিকে ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতার উপর হুমকি হিসেবে দেখছেন।

    এক্স-এ পোস্টে কেউ কেউ ট্রাম্পের এই বক্তব্যকে নেতানিয়াহুর প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত সমর্থন এবং রাজনৈতিক মিত্রতার প্রকাশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য তাঁর নিজের আইনি লড়াইয়ের সঙ্গেও তুলনা করা হচ্ছে, কারণ তিনি নিজেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় “অন্যায় শিকার” বলে দাবি করেছেন।

    এদিকে, নেতানিয়াহু নিজেও এই মামলাগুলোকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ইসরায়েলের মিডিয়া ও বিচার ব্যবস্থাকে “উদারপন্থী অভিজাত”দের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে অভিযোগ করেছেন। ২০১৭ সালের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু ট্রাম্পের পপুলিস্ট কৌশল অনুকরণ করছেন।