ঢাকা ১২:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

    নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ: তিন সাবেক সিইসির মামলায় যা হতে পারে!

    বিশেষ প্রতিনিধি
    • আপডেট সময় ০১:২১:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
    • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

    গত রোববার (২২ জুন) এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দেশের সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিএনপি।

    ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আয়োজনের অভিযোগে দায়ের করা এই মামলা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরাট তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ও কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার মগবাজার থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে এবং গত রোববার উত্তরা থেকে কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    সোমবার আদালত নূরুল হুদার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, আর ডিবি জানিয়েছে, হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধেও রিমান্ড আবেদন করা হবে। এই গ্রেপ্তারগুলো দেশের বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

    বিএনপি’র করা এই মামলায় দণ্ডবিধি আইনের মোট সাতটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ধারা সরাসরি নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের কথা বলে।

    দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ ধারার অধীনে আনা এসব অভিযোগের কোনোটিতেই কারাদণ্ডের কোনো বিধান নেই, যা আইন বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

    তবে, এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ১২০(খ) ধারায় একটি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এই বিধিতে বলা হয়েছে, “কেউ যদি দুই বছরের অধিক বা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করে, আর এই অপরাধ সংঘটনের জন্য কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে, তাহলে সে ব্যক্তিও সমান সাজা পেতে পারেন।”

    তবে, এখানে একটি জটিলতা রয়েছে। আইনের ১২০(খ) ধারার এই প্রথম অংশটি তখনই প্রযোজ্য হয় যখন ষড়যন্ত্র করা হয় এমন কোনো অপরাধের জন্য, যার শাস্তি দুই বছরের বেশি, যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড।

    কিন্তু নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আনা দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ ধারার অভিযোগগুলোর কোনোটিতেই এই ধরনের বড় সাজার বিধান নেই। ফলে, যদি শুধুমাত্র ১৭১ ধারার অপরাধগুলো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে, তাহলে ১২০(খ) ধারার এই প্রথম অংশের অধীনে তাদের বড় কোনো দণ্ড দেওয়া সম্ভব হবে না বলে আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

    আইন সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, মামলার অভিযোগে আনা ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ধারা জামিনযোগ্য। এ ধরনের ধারার মামলায় আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি কারাভোগ ছাড়াই জামিন পেতে পারেন। আইন অনুযায়ী তাদের কারাগারে আটক রাখা দুষ্কর বলে জানান আইন সংশ্লিষ্টরা।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “এ মামলার ধারাগুলোতে তেমন বড় সাজার বিধান নেই। ধারাগুলোও জামিনযোগ্য। ফলে আসামিরা জামিন পাওয়ার হকদার হবেন।”

    সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলার সবগুলো ধারাই জামিনযোগ্য। এতে তাদের কারাগারে আটকে রাখাই যায় না। সেখানে আরও চারদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।”

    মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো- নির্বাচনে জালভোট প্রদান, নির্বাচনী হিসাব না রাখা, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া ইত্যাদি। ঢাকায় বসে নির্বাচন কমিশনাররা এসব অপরাধের সঙ্গেই কোনোভাবেই জড়িত থাকতে পারেন না।”

    তবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীর বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেন, “এখন তো এজাহারে কিছু ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।

    মামলাটির তদন্তকালে তাদের বিরুদ্ধে আরও অপরাধের তথ্যপ্রমাণ বের হয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও ধারা বাড়বে।” তিনি আরও আশা ব্যক্ত করেছেন যে, নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা দায়ের হবে। অভিযোগ প্রমাণের বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারার অভিযোগ রয়েছে, তা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করবো। চেষ্টা থাকবে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার জন্য।” এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, তদন্তের পরিধি আরও বাড়তে পারে এবং নতুন অভিযোগও যুক্ত হতে পারে।

    গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ‘মব’ তৈরি করে আটক করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত সাবেক এই সিইসিকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় জনতা।

    পরে তাকে উত্তরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

    আদালতে থাকাকালে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার আদালতকে বলেন, “নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করার সুযোগ নেই।” তদন্ত কর্মকর্তার এই মন্তব্য মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে।

    বিএনপি’র করা ২২ জুনের এই মামলায় মোট ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক তিন সিইসি ছাড়াও রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা।

    এছাড়া ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিবসহ প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা।

    ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

    মামলার অভিযোগে একই সময়ে দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত) এবং পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

    একই সঙ্গে মামলায় আসামিদের তালিকায় ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান সহ তৎকালীন নির্বাচন সচিবেরও নাম আছে। অর্থাৎ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সাবেক ও বর্তমান অনেককেই এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ: তিন সাবেক সিইসির মামলায় যা হতে পারে!

    আপডেট সময় ০১:২১:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

    গত রোববার (২২ জুন) এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় দেশের সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, কে এম নূরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিএনপি।

    ‘প্রহসনের নির্বাচন’ আয়োজনের অভিযোগে দায়ের করা এই মামলা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিরাট তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ও কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পরপরই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। গত বুধবার মগবাজার থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালকে এবং গত রোববার উত্তরা থেকে কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

    সোমবার আদালত নূরুল হুদার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন, আর ডিবি জানিয়েছে, হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধেও রিমান্ড আবেদন করা হবে। এই গ্রেপ্তারগুলো দেশের বিচার বিভাগ ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

    বিএনপি’র করা এই মামলায় দণ্ডবিধি আইনের মোট সাতটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ধারা সরাসরি নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের কথা বলে।

    দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ ধারার অধীনে আনা এসব অভিযোগের কোনোটিতেই কারাদণ্ডের কোনো বিধান নেই, যা আইন বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে।

    তবে, এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ১২০(খ) ধারায় একটি অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। এই বিধিতে বলা হয়েছে, “কেউ যদি দুই বছরের অধিক বা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করে, আর এই অপরাধ সংঘটনের জন্য কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে, তাহলে সে ব্যক্তিও সমান সাজা পেতে পারেন।”

    তবে, এখানে একটি জটিলতা রয়েছে। আইনের ১২০(খ) ধারার এই প্রথম অংশটি তখনই প্রযোজ্য হয় যখন ষড়যন্ত্র করা হয় এমন কোনো অপরাধের জন্য, যার শাস্তি দুই বছরের বেশি, যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ড।

    কিন্তু নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আনা দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ ধারার অভিযোগগুলোর কোনোটিতেই এই ধরনের বড় সাজার বিধান নেই। ফলে, যদি শুধুমাত্র ১৭১ ধারার অপরাধগুলো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে, তাহলে ১২০(খ) ধারার এই প্রথম অংশের অধীনে তাদের বড় কোনো দণ্ড দেওয়া সম্ভব হবে না বলে আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

    আইন সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, মামলার অভিযোগে আনা ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ধারা জামিনযোগ্য। এ ধরনের ধারার মামলায় আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি কারাভোগ ছাড়াই জামিন পেতে পারেন। আইন অনুযায়ী তাদের কারাগারে আটক রাখা দুষ্কর বলে জানান আইন সংশ্লিষ্টরা।

    এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “এ মামলার ধারাগুলোতে তেমন বড় সাজার বিধান নেই। ধারাগুলোও জামিনযোগ্য। ফলে আসামিরা জামিন পাওয়ার হকদার হবেন।”

    সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলার সবগুলো ধারাই জামিনযোগ্য। এতে তাদের কারাগারে আটকে রাখাই যায় না। সেখানে আরও চারদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।”

    মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো- নির্বাচনে জালভোট প্রদান, নির্বাচনী হিসাব না রাখা, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া ইত্যাদি। ঢাকায় বসে নির্বাচন কমিশনাররা এসব অপরাধের সঙ্গেই কোনোভাবেই জড়িত থাকতে পারেন না।”

    তবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকীর বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেন, “এখন তো এজাহারে কিছু ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।

    মামলাটির তদন্তকালে তাদের বিরুদ্ধে আরও অপরাধের তথ্যপ্রমাণ বের হয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও ধারা বাড়বে।” তিনি আরও আশা ব্যক্ত করেছেন যে, নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা দায়ের হবে। অভিযোগ প্রমাণের বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারার অভিযোগ রয়েছে, তা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করবো। চেষ্টা থাকবে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার জন্য।” এই বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, তদন্তের পরিধি আরও বাড়তে পারে এবং নতুন অভিযোগও যুক্ত হতে পারে।

    গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ‘মব’ তৈরি করে আটক করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত সাবেক এই সিইসিকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় জনতা।

    পরে তাকে উত্তরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

    আদালতে থাকাকালে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার আদালতকে বলেন, “নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এর জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করার সুযোগ নেই।” তদন্ত কর্মকর্তার এই মন্তব্য মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে।

    বিএনপি’র করা ২২ জুনের এই মামলায় মোট ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক তিন সিইসি ছাড়াও রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা।

    এছাড়া ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিবসহ প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা।

    ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।

    মামলার অভিযোগে একই সময়ে দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত) এবং পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

    একই সঙ্গে মামলায় আসামিদের তালিকায় ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমান সহ তৎকালীন নির্বাচন সচিবেরও নাম আছে। অর্থাৎ, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা সাবেক ও বর্তমান অনেককেই এই মামলায় আসামি করা হয়েছে।