ট্রাম্পের ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট

- আপডেট সময় ০১:২৪:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
- / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
মার্কিন রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী রায় দিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট! প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতাকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাহী আদেশ কার্যকরের ক্ষেত্রে।
এই রায়ের ফলে অবৈধ অভিবাসী এবং অস্থায়ী ভিসাধারীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করার ট্রাম্পের সেই বিতর্কিত আদেশ কার্যকরের পথ প্রশস্ত হলো।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে যা ফেডারেল বিচারকদের প্রেসিডেন্টে’র নির্বাহী আদেশ আটকে দেওয়ার ক্ষমতাকে সীমিত করে দিয়েছে।
এটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য একটি বিশাল বিজয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন এবং অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বন্ধে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন, সেটি কার্যকর হওয়ার পথ সুগম হয়েছে। ট্রাম্প নিজেই এই রায়কে ‘বিশাল জয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল বিচারকরা ট্রাম্পের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তবে তারা স্পষ্ট করেছেন যে, এই রায় সরাসরি জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়ে নয়, বরং প্রেসিডেন্টের নির্বাহী কার্যক্রমের ওপর ফেডারেল আদালতের হস্তক্ষেপের সীমা নিয়ে।
সহজ ভাষায়, আদালত বলেছে যে, প্রেসিডেন্ট যখন কোনো নির্বাহী আদেশ জারি করেন, সেগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে আটকে দেওয়া যাবে না।
এই রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবেই আইনি চ্যালেঞ্জ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আদেশের ফলে ভবিষ্যতে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
নটরডেম ল স্কুলের অধ্যাপক স্যামুয়েল ব্রে বলেছেন, আদালতের এই আদেশ ফেডারেল আদালত এবং নির্বাহী শাখার মধ্যে সম্পর্ককে মৌলিকভাবে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে। এর অর্থ হলো, এখন থেকে নির্বাহী পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সার্বজনীন নিষেধাজ্ঞাগুলো আর তেমন বড় চ্যালেঞ্জ হবে না।
মনে রাখা জরুরি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনেই ট্রাম্প যেসব নির্বাহী আদেশ স্বাক্ষর করেছিলেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে অভিবাসন বিষয়ক অধিকার গোষ্ঠী এবং ২২টি রাজ্য মামলা করেছিল।
ম্যারিল্যান্ড, ম্যাসাচুসেটস, ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন জায়গায় এই মামলাগুলো করা হয়েছিল, যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশগুলো আটকে দেওয়া, এবং প্রাথমিকভাবে সেটি সফলও হয়েছিল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়নি। তারা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে যুক্তি দিয়েছিল যে, প্রাথমিক আদেশগুলো সাংবিধানিক ছিল না। গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে একমত পোষণ করে নতুন আদেশ দিয়েছে।
ট্রাম্প শুক্রবারই এক সংবাদ সম্মেলনে আদালতের এই আদেশের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত সংবিধানের জন্য, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং আইনের শাসনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, দেশজুড়ে তার আদেশের বিষয়ে যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, সেটি ছিল গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি। তার অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, যিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বলেছেন, আদালতের এই সিদ্ধান্তের অর্থ হলো বিচারকরা এখন ট্রাম্পের নীতি আটকে দিতে পারবেন না।
অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী সেশন শুরু হওয়ার পর জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়ে নানা প্রশ্ন তারা আমলে নেবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল বন্ডি।
সুপ্রিম কোর্ট যে রুলিং দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দেশের আদালতগুলো অসাংবিধানিক বা বেআইনি মনে হলে প্রেসিডেন্টের কার্যক্রম স্থগিত করতে পারবে। তবে এটি হবে আরও বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যার অর্থ হলো প্রেসিডেন্ট তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আরও সুযোগ পাবেন।
আদালতের এই নতুন আদেশের কারণে, ট্রাম্পের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বিষয়ক আদেশটি আদালতের মতামত আসার ৩০ দিন পর কার্যকর হবে। যদিও এ নিয়ে আরও আইনি চ্যালেঞ্জ আসার সম্ভাবনা এখনো প্রবল।
বিচারক অ্যামি কোনে ব্যারেট মন্তব্য করেছেন যে, ফেডারেল আদালত নির্বাহী শাখাগুলোর কার্যক্রম তদারকি করে না, বরং তারা মামলা ও বিতর্কগুলোর সমাধান করে।
জাস্টিস ব্রেট কাভানফ বলেছেন, ফেডারেল প্রতিষ্ঠান এবং নির্বাহী বিভাগের কার্যক্রমের মধ্যে আইনগত সমস্যা হলে সুপ্রিম কোর্ট এসব ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী।
তবে বিচারক সোনিয়া সোটোমেয়র এই বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, “কোর্টের সিদ্ধান্ত সংবিধানকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের প্রতি একটি খোলা আমন্ত্রণ ছাড়া আর কিছুই নয়।”
এই রায় মার্কিন সংবিধানের ব্যাখ্যা, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং প্রেসিডেন্টে’র ক্ষমতা নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
এটি শুধু ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্তমান নীতির জন্যই নয়, বরং ভবিষ্যতে যেকোনো প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতার ব্যবহারের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করবে। এই রায়ের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হতে চলেছে, তা দেখতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।