সংস্কার প্রস্তাব এখন বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে: চরমোনাই পীর

- আপডেট সময় ১২:০৯:১৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে
লন্ডন বৈঠকের পর রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব এখন বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। বুধবার ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-এর প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে চরমোনাই পীর বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্দীপনা ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল, তা এখন ভাটার দিকে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে লন্ডন বৈঠকের পর সংস্কার প্রক্রিয়াটি বিএনপিকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। তারা একমত না হলে সেই প্রস্তাব আর অগ্রসর হচ্ছে না। এমনকি পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত হলেও, একটি দলের আপত্তিতে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। অথচ স্বৈরতন্ত্র রুখতে পিআর একটি পরীক্ষিত এবং কার্যকর পদ্ধতি।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহসী ও কঠোর হতে হবে। তারা যেন কোনো রাজনৈতিক চাপ বা স্বার্থের কাছে মাথানত না করে। স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো বজায় রেখে যদি কেবল একটি নির্বাচনের আয়োজন হয়, তাহলে এই সরকার ইতিহাসে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হবে। কারণ, জুলাইয়ের আন্দোলন যে পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তা বিরল এবং এর পুনরাবৃত্তি অনিশ্চিত।
রাষ্ট্র সংস্কার এবং সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির ওপর গুরুত্বারোপ করে মুফতি রেজাউল করীম বলেন, “বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সবার আগে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বদলাতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও কার্যকর করতে হবে। এরপর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কোনো দলের ক্ষমতা আকাঙ্ক্ষার জন্য যেনতেনভাবে নির্বাচন আয়োজন করা হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে।
তিনি দাবি করেন, গত জুলাইয়ের আন্দোলন শুধু সরকারবিরোধী ছিল না, বরং তা ছিল রাষ্ট্রের ভেতরে গড়ে ওঠা বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। সেই আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণদের অনেকেই প্রচলিত রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তারা প্রচলিত রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেই রাস্তায় নেমেছিল। তাই তাদের আত্মত্যাগ ছিল প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও একটি প্রতিবাদ।
বিবৃতির শেষাংশে তিনি বলেন, এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ‘জুলাই ঘোষণা’ দেওয়া হয়নি, রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য গড়ে উঠেনি, বিচার প্রক্রিয়াও অনিশ্চিত। রাজনৈতিক দলগুলো এখনো ক্ষমতা-কেন্দ্রিক চিন্তায় মগ্ন। চাঁদাবাজি, দখলবাজি, বর্বর নির্যাতনের মতো ঘটনা এখনো চলছে। স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণের মতো নৃশংসতা এখনো বিদ্যমান। অথচ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই সব বাস্তব সংস্কারের প্রশ্নগুলো আড়াল করে রাখা হয়েছে। এক বছর আগে যে স্বপ্ন নিয়ে তরুণেরা জীবন দিয়েছিল, আজ আমরা সেই স্বপ্ন থেকে অনেক দূরে।