উদ্বোধনের অপেক্ষায় ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ : চলছে শেষ প্রস্তুতি

- আপডেট সময় ০২:৪৪:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই ২০২৫
- / ২৬৫ বার পড়া হয়েছে
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন, যা একসময় ‘গণভবন’ নামে পরিচিত ছিল, সেটিকে রূপান্তর করা হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘরে’। প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে জাদুঘরের নির্মাণ ও প্রস্তুতির কাজ। আগামী ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাদুঘরটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে চলছে বিভিন্ন স্মারক ও দলিল-দস্তাবেজ সংগ্রহের কাজ। ইতোমধ্যে স্থিরচিত্র, শহীদদের ব্যবহৃত জামাকাপড়, চিঠিপত্র, আন্দোলনের সময়কার পত্রিকার কাটিং, ভিডিও, অডিও ক্লিপসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ প্রদর্শনীর অংশ হিসেবে সেখানে রাখা হবে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের স্মৃতিচিত্র।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অংশ হিসেবে এই স্মৃতি জাদুঘরটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্মিত হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের সচিব মো. সাদেকুল ইসলাম জানান, “৫ আগস্ট উদ্বোধনের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। তবে বিষয়টি সরাসরি মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করায় আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্ট গণ-আন্দোলনের উত্তাপে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গণভবনের দরজা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে যায়। এরপর আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ছাত্র প্রতিনিধিদের প্রস্তাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনটিকে ‘জুলাই স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, মিরপুর রোড ঘেঁষে অবস্থিত গণভবন হিসাবে পরিচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনকে রূপান্তর করা হয়েছে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর হিসাবে। গত বছরের ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর ‘জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯’ বাতিল করা হয়। ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের পঞ্চম সভায় গণভবনকে স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। পরে ২ নভেম্বর উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে জাদুঘর প্রকল্পের কাজ শুরু করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জাদুঘরের মূল ভবন এবং এর আশপাশের পরিকাঠামোর প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গণপূর্ত অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৭.৬৮ একর জমির ওপর অবস্থিত এই ক্যাম্পাসে রয়েছে দুই তলা ভবন, একতলা কর্মচারী ভবন, পুকুর, খেত, ফলদ বৃক্ষ ও লন। জাদুঘরটি একটি সবুজ, মনোরম পরিবেশে গড়ে তোলা হচ্ছে—যা শুধু ইতিহাস জানার জায়গা নয়, নগরবাসীর জন্য একটি বিকল্প বিনোদনকেন্দ্র হিসেবেও কাজ করবে।
আন্দোলনের সময় গণভবনে হওয়া ছাত্র-জনতার ভাঙচুরের কিছু নিদর্শন আগের অবস্থাতেই রাখা হচ্ছে। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তুলতে এসব স্থাপত্যিক উপাদান সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্য অংশগুলো নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে। জাদুঘরের স্মারক সংগ্রহে বর্তমানে কাজ করছে একটি আর্কাইভ ও কালেকশন টিম, যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কিত উপাদান সংগ্রহ করছে। এছাড়া জনসাধারণের কাছ থেকেও স্মৃতিস্মারক আহ্বান জানাতে প্রচারাভিযান চালাচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
জাদুঘর সংশ্লিষ্টরা জানান, এই জাদুঘর শুধু ইতিহাস সংরক্ষণের স্থান নয়—এটি একটি বার্তা বহন করবে। যেখানে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে কিভাবে ছাত্র-জনতা একজোট হয়ে রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য সংগ্রাম করেছে।