ফ্যাসিস্টদের বিচার নির্বাচনের আগেই হবে: আইন উপদেষ্টা

- আপডেট সময় ০১:০৮:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, বিচার নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও বিচারব্যবস্থা পূর্ণ গতিতে চলছে এবং তা এখন দৃশ্যমান। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, নির্বাচনের আগেই ফ্যাসিস্টদের বিচার হবে।
বিচারব্যবস্থাকে গ্রহণযোগ্য করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাদের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বিচার, বিচারব্যবস্থার সংস্কার, জুলাইয়ের শহীদদের পুনর্বাসন এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তাই বিচারব্যবস্থাকে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য এবং ন্যায্য করতে হবে। সোমবার ঢাকার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে তথ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ (জুলাই আপরাইজিং)’–এর প্রিমিয়ার উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে এই তথ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন আরিফুর রহমান।
আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট দলের লোকজন হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে বসে আছে বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য। তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। এ জন্যই সরকার সর্বোচ্চ মানের একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য বিচার নিশ্চিত করতে চায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ‘জুলাই’ কখনো বেহাত হবে না, কারণ এ মাসটি শুধু একটি আন্দোলনের নয়, একটি মহাকাব্যিক সংগ্রামের প্রতীক।
তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনে একটি স্লোগান ছিল—‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়; বাংলা কি তোর বাপ-দাদার?’ এই স্লোগান বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আত্মমর্যাদার প্রতিফলন। আমার চোখে এখনও ভেসে ওঠে ছোট ভাইয়ের লাশ হাতে দুই বোনের মিছিল, এপিসি থেকে ছুঁড়ে ফেলা আহত ইয়ামিন, মাদ্রাসার ছাত্রদের প্রতিরোধ, রিকশাচালকদের স্লোগান—এসব দৃশ্য যেন এক মহাকাব্যের মতো।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, গত ১৬ বছরে দেশের মানুষ গুম, খুন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ উৎখাত হয়েছে। তাই শুধু জুলাই মাস নয়, প্রতি মাসেই শহীদদের স্মরণ করতে হবে। তিনি বলেন, শহীদদের ত্যাগ এবং শহীদ পরিবারের ভূমিকা নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। সেই কারণেই এই ধরনের অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজন করা প্রয়োজন। মাহফুজ আলম বলেন, আমাদের অনেক অর্জন থাকলেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো এখনো সম্ভব হয়নি। এ সংগ্রামের ইতিহাস এক বা দুই বছরের নয়, এটি বহু বছরের দীর্ঘ লড়াই।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, জুলাই আন্দোলন ৩৬ দিনের নয়, এটি ৫৪ বছরের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা। স্বাধীনতা অর্জনের পর কিছু সময় রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে চললেও দীর্ঘ মেয়াদে সেই স্বাধীনতা ধরে রাখা যায়নি। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো সাংস্কৃতিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সত্যের পক্ষে অবস্থানই বর্তমানে সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি বলেন, সত্যকে নানা উপায়ে মিথ্যা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চলছে, কিন্তু জনগণের ন্যায্য আন্দোলন কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। এই বাস্তবতাকে ইন্টেলেকচুয়াল ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে।
ফারুকী আরও বলেন, শহীদ পরিবার ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, তরুণদের স্লোগান ও মুখের অভিব্যক্তিতে প্রতিফলিত হচ্ছিল একটি স্পষ্ট বার্তা—তারা আর কোনো শাসকের অধীনে থাকতে চায় না। এটাই ছিল সেই আন্দোলনের মূল চেতনা।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করবে, কিন্তু তাকে প্রতিরোধ করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ বহুদিন ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ডুবে ছিল। এখন সময় এসেছে সেই ধারা ভাঙার। নতুন প্রজন্ম যেন এমন সংকটে না পড়ে, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ দেব না এবং ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে শহীদ আবু সাঈদের বাবা মো. মকবুল হোসেন বলেন, “এক বছর কেটে গেল, কিন্তু আমার ছেলেসহ শহীদদের হত্যার বিচার এখনো হয়নি। আমি দ্রুত বিচার দাবি করছি।” অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা এবং সঞ্চালনা করেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। তথ্যচিত্রটি প্রযোজনা করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।