ঢাকা ১০:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫

    যেখানেই পাও গুলি করো, অনুমতি শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন : ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে বিবিসি

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১১:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে

    ২০২৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণবিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে মারাত্মক বলপ্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি। আজ বুধবার প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, একটি ফোনকলের ফাঁস হওয়া অডিওর ভিত্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে, যা স্বাধীনভাবে যাচাই করেছে বিবিসির অডিও ফরেনসিক দল।

    অডিওর উৎস অনুযায়ী, গত মার্চে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই কলটিতে শেখ হাসিনাকে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলছেন, “তাদের (বিক্ষোভকারীদের) যেখানেই পাও, গুলি করো।” দাবি করা হয়, এটি বিক্ষোভ দমনকাজে ‘মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহারের’ সরাসরি অনুমতি। বিবিসির মতে, রেকর্ডিংটি অডিও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যারা নিশ্চিত করেছে যে এতে কোনো সম্পাদনার চিহ্ন বা কৃত্রিম উপাদানের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা শেখ হাসিনার কণ্ঠ, ছন্দ ও ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ বিশ্লেষণ করে বলেন, এটি একটি ঘরের ভেতরে স্পিকারে বাজানো ফোনকল ধারণ করা হয়েছে।

    মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা বলেছেন, তারা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করছেন এবং এই অডিওটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন, বিবিসিকে বলেন, “এই রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো স্পষ্ট, যাচাইকৃত এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।”

    জাতিসংঘের তদন্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশজুড়ে বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। যদিও আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা ভারতে নির্বাসনে আছেন। বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে, যা পরবর্তীতে একটি গণআন্দোলনে রূপ নেয় এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকার প্রধানের বাসভবনে ছাত্র-জনতার হামলার দিন শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান। ওইদিনও ঢাকায় বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

    আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “রেকর্ডিংটি সত্য কিনা তা আমরা নিশ্চিত নই এবং এতে বেআইনি কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমন প্রমাণও আমরা দেখিনি।” উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের আওতায় গণহত্যা, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়া, ষড়যন্ত্র এবং সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে গত মাসে শুরু হয়েছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    যেখানেই পাও গুলি করো, অনুমতি শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন : ফাঁস হওয়া অডিও নিয়ে বিবিসি

    আপডেট সময় ১১:৪৭:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

    ২০২৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই দেশে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণবিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে মারাত্মক বলপ্রয়োগের অনুমতি দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি। আজ বুধবার প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তারা জানিয়েছে, একটি ফোনকলের ফাঁস হওয়া অডিওর ভিত্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে, যা স্বাধীনভাবে যাচাই করেছে বিবিসির অডিও ফরেনসিক দল।

    অডিওর উৎস অনুযায়ী, গত মার্চে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই কলটিতে শেখ হাসিনাকে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলছেন, “তাদের (বিক্ষোভকারীদের) যেখানেই পাও, গুলি করো।” দাবি করা হয়, এটি বিক্ষোভ দমনকাজে ‘মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহারের’ সরাসরি অনুমতি। বিবিসির মতে, রেকর্ডিংটি অডিও ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট দ্বারা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যারা নিশ্চিত করেছে যে এতে কোনো সম্পাদনার চিহ্ন বা কৃত্রিম উপাদানের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা শেখ হাসিনার কণ্ঠ, ছন্দ ও ব্যাকগ্রাউন্ড শব্দ বিশ্লেষণ করে বলেন, এটি একটি ঘরের ভেতরে স্পিকারে বাজানো ফোনকল ধারণ করা হয়েছে।

    মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা বলেছেন, তারা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিচার পরিচালনা করছেন এবং এই অডিওটিকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন, বিবিসিকে বলেন, “এই রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো স্পষ্ট, যাচাইকৃত এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।”

    জাতিসংঘের তদন্ত অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশজুড়ে বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়। যদিও আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে তারা ভারতে নির্বাসনে আছেন। বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে, যা পরবর্তীতে একটি গণআন্দোলনে রূপ নেয় এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকার প্রধানের বাসভবনে ছাত্র-জনতার হামলার দিন শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান। ওইদিনও ঢাকায় বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

    আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, “রেকর্ডিংটি সত্য কিনা তা আমরা নিশ্চিত নই এবং এতে বেআইনি কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এমন প্রমাণও আমরা দেখিনি।” উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের আওতায় গণহত্যা, বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়া, ষড়যন্ত্র এবং সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে গত মাসে শুরু হয়েছে।