ঢাকা ০৮:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

    মাহরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগ : বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষিকার সাহসিকতায় জাতির শ্রদ্ধা

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০১:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬২ বার পড়া হয়েছে

    ২১ জুলাই ২০২৫, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী। স্কুল ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যাওয়ার পর মুহূর্তগুলোতে তিনি শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন সত্যিকারের রক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন।

    মাহরীন চৌধুরী ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক (কো-অর্ডিনেটর)। দুর্ঘটনার সময় ভবনজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়লেও নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে না গিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন শিক্ষার্থীদের রক্ষায়। যতজন শিক্ষার্থীকে পারা যায়, নিরাপদে বের করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। সেই সাহসিকতার পরিণতিতেই তার শরীরের প্রায় ১০০ শতাংশ পুড়ে যায়। রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

    মাহরীনের ছোট ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী এক হৃদয়বিদারক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যুর খবর জানান। তিনি লেখেন, “মাহরীন আপু আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন। তিনি নিজে বের হয়ে আসতে পারতেন, কিন্তু বাচ্চাগুলোকে আগুন থেকে বের করে আনতে গিয়ে তিনি পুড়ে যান। এখন হাসপাতালে মরদেহ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। দয়া করে তার জন্য দোয়া করবেন। তিনি রেখে গেছেন দুই ছেলেকে—আমার দুটি ভাগনে।”

    মাহরীন চৌধুরীর এই আত্মত্যাগ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাজারো মানুষ তাকে ‘বীর’ আখ্যা দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছেন। তার ছাত্রছাত্রীরা আবেগে ভেসে লিখেছে, এমন শিক্ষকের হাত ধরেই তারা সাহস, দায়িত্ববোধ এবং মানবতার শিক্ষা পেয়েছে।

    এই ঘটনা অনেককেই মনে করিয়ে দিয়েছে ফেলেসিয়া ডরোথিয়া হেমানস-এর সেই বিখ্যাত কবিতা asabianca-র সেই সাহসী ছেলেটিকে, যে আগুনে জ্বলতে থাকা জাহাজের ডেকে বাবার নির্দেশে দাঁড়িয়ে ছিল মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তবে মাহরীন চৌধুরী সেই সাহসিকতার বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকবেন, যিনি শিশুদের প্রাণ রক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন।

    নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রামের মেয়ে মাহরীন চৌধুরীর এই আত্মত্যাগ শুধু একটি স্কুল বা একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়—এটি একটি জাতির জন্য অনুপ্রেরণার মহাকাব্য। আমরা যারা বেঁচে আছি, তারা তার মতো সাহসী মানুষদের শ্রদ্ধায় মাথা নত করি, চোখ ভিজিয়ে বুক বাঁচিয়ে চলতে শেখি।

    মাহরীন চৌধুরী আজ নেই, কিন্তু তার এই সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণে থাকবে। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন—একজন জাতির বীর।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    মাহরীন চৌধুরীর আত্মত্যাগ : বিমান দুর্ঘটনায় শিক্ষিকার সাহসিকতায় জাতির শ্রদ্ধা

    আপডেট সময় ০১:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

    ২১ জুলাই ২০২৫, রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শিক্ষক মাহরীন চৌধুরী। স্কুল ভবনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যাওয়ার পর মুহূর্তগুলোতে তিনি শিক্ষক হিসেবে নয়, একজন সত্যিকারের রক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন।

    মাহরীন চৌধুরী ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সমন্বয়ক (কো-অর্ডিনেটর)। দুর্ঘটনার সময় ভবনজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়লেও নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে না গিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন শিক্ষার্থীদের রক্ষায়। যতজন শিক্ষার্থীকে পারা যায়, নিরাপদে বের করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন তিনি। সেই সাহসিকতার পরিণতিতেই তার শরীরের প্রায় ১০০ শতাংশ পুড়ে যায়। রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

    মাহরীনের ছোট ভাই মুনাফ মজিব চৌধুরী এক হৃদয়বিদারক ফেসবুক পোস্টে বোনের মৃত্যুর খবর জানান। তিনি লেখেন, “মাহরীন আপু আমাকে মায়ের মতো করে বড় করেছেন। তিনি নিজে বের হয়ে আসতে পারতেন, কিন্তু বাচ্চাগুলোকে আগুন থেকে বের করে আনতে গিয়ে তিনি পুড়ে যান। এখন হাসপাতালে মরদেহ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। দয়া করে তার জন্য দোয়া করবেন। তিনি রেখে গেছেন দুই ছেলেকে—আমার দুটি ভাগনে।”

    মাহরীন চৌধুরীর এই আত্মত্যাগ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাজারো মানুষ তাকে ‘বীর’ আখ্যা দিয়ে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাচ্ছেন। তার ছাত্রছাত্রীরা আবেগে ভেসে লিখেছে, এমন শিক্ষকের হাত ধরেই তারা সাহস, দায়িত্ববোধ এবং মানবতার শিক্ষা পেয়েছে।

    এই ঘটনা অনেককেই মনে করিয়ে দিয়েছে ফেলেসিয়া ডরোথিয়া হেমানস-এর সেই বিখ্যাত কবিতা asabianca-র সেই সাহসী ছেলেটিকে, যে আগুনে জ্বলতে থাকা জাহাজের ডেকে বাবার নির্দেশে দাঁড়িয়ে ছিল মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। তবে মাহরীন চৌধুরী সেই সাহসিকতার বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকবেন, যিনি শিশুদের প্রাণ রক্ষার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছিলেন।

    নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রামের মেয়ে মাহরীন চৌধুরীর এই আত্মত্যাগ শুধু একটি স্কুল বা একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়—এটি একটি জাতির জন্য অনুপ্রেরণার মহাকাব্য। আমরা যারা বেঁচে আছি, তারা তার মতো সাহসী মানুষদের শ্রদ্ধায় মাথা নত করি, চোখ ভিজিয়ে বুক বাঁচিয়ে চলতে শেখি।

    মাহরীন চৌধুরী আজ নেই, কিন্তু তার এই সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্মরণে থাকবে। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন—একজন জাতির বীর।