স্কুলের দোলনায় আর দেখা যাবেনা আয়মানকে : মাইলস্টোন দুর্ঘটনায় ঝরে গেল ছোট্ট আয়মান

- আপডেট সময় ০১:৫৯:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়মান (১০)।
প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষে স্কুলের দোলনায় দোল খাচ্ছিল সে। ঠিক সেই মুহূর্তেই হঠাৎ বিকট শব্দে বিধ্বস্ত হয় একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান। বিমান থেকে ছিটকে পড়া জ্বলন্ত জেট ফুয়েলে ঝলসে যায় আয়মানের শরীরের ৪০ শতাংশ। চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত হার মানে ছোট্ট এই শিশুটি।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকালে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়মান মারা যায়। রাত ৯টায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
নিহত আয়মান বাসুদেবপুর গ্রামের বাপ্পি হাওলাদার ও আয়েশা আক্তার কাকন দম্পতির মেয়ে। দুই ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল ছোট। বাবা বাপ্পি হাওলাদার ব্যবসার সুবাদে পরিবার নিয়ে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়িতে বসবাস করতেন। দুর্ঘটনার দিন বিকেলে স্কুল ছুটির অপেক্ষায় থাকা মা আয়েশা আক্তার ক্লাস শেষের পর মেয়ের ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু ফিরে আসেনি আদরের সেই কন্যা। স্কুলে দগ্ধ আয়মান নিজের অবস্থার কথা জানিয়েছিল এক শিক্ষিকার ফোনে বাবাকে—বলে গিয়েছিল শেষবারের মতো, “আমি পুড়ে গেছি আব্বু।”
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মুহূর্তে আয়মান স্কুলের দোলনায় ছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে আকাশ থেকে স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয় একটি প্রশিক্ষণ বিমান। আতঙ্কিত আয়মান দৌড় দেয়ার চেষ্টা করলে তার শরীরে এসে পড়ে দগ্ধ ফুয়েল। শরীরের পিঠ, হাত ও পা ভয়াবহভাবে পুড়ে যায়। সে নিজেই গিয়ে এক শিক্ষিকার ফোন থেকে বাবাকে দুর্ঘটনার কথা জানায়।
বাবা বাপ্পি হাওলাদার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে আয়মানকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। চারদিন আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকার পর শুক্রবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আয়মান।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর উত্তরায় আয়মানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নেওয়া হয় গ্রামে। রাত ৯টায় বাসুদেবপুর গ্রামে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয় পারিবারিক কবরস্থানে, তার দাদা মাজেদ হাওলাদারের কবরের পাশে।
আয়মানের প্রতিবেশী সিনহা জুয়ালিদ রাফি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আয়মান বাড়িতে এলেই আমাকে জড়িয়ে ধরত, খুব আদুরে ছিল সে। আমরা এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, সে আর নেই।”
আয়মানের ছোট মামা শামীম আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমার ভাগ্নি চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা, যিনি-ই হোন, আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিন—প্রশিক্ষণরত পাইলট কীভাবে এমন জনবহুল এলাকায় যুদ্ধবিমান ওড়ায়? এভাবে তো আরও অনেক শিশু প্রাণ হারাবে। আমরা চাই, ভবিষ্যতে আর কোনো আয়মান যেন ঝরে না যায়।”
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, “বিমান দুর্ঘটনায় আয়মানের মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক। উপজেলা প্রশাসন এই শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকবে।”