যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছাড়ে সুবিধা পেতে বাংলাদেশ ২৫টি বোয়িং কিনছে

- আপডেট সময় ০৪:৫৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্ক কমাতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা জোরদার করতে এবার বড় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। দেশটির কাছ থেকে ২৫টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। এমন তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
রোববার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, এরই মধ্যে বোয়িং কেনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ শুরু হয়েছে। আগেও ১৪টি বোয়িং কেনার অর্ডার ছিল, তবে রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ ইস্যুতে সেটিকে বাড়িয়ে ২৫-এ উন্নীত করা হয়েছে। এই ক্রয়াদেশ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের ইতিবাচক অবস্থান প্রতিষ্ঠার কৌশলের অংশ বলেই জানান সচিব।
তিনি বলেন, বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে অর্ডার পেলে সরবরাহ পেতে সময় লাগবে, কারণ কোম্পানিটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরবরাহ করে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশ দ্রুত কিছু উড়োজাহাজ পেতে চায়, তাই সরকারের পরিকল্পনায় বিষয়টি আগে থেকেই ছিল।
সচিব আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর)-এর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে এবং খসড়া চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশের চূড়ান্ত অবস্থান গত ২৩ জুলাই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই আলোচনার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ও বুধবার ওয়াশিংটনে ইউএসটিআর কার্যালয়ে সরাসরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাণিজ্য উপদেষ্টা, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব উপস্থিত থাকবেন। সম্ভব হলে ১ আগস্টের আগেই একটি সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম ও সয়াবিন তেল আমদানির বিষয়েও সচিব বলেন, সম্প্রতি ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এছাড়া বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। সরকার যখন ইউএসটিআর-এর সঙ্গে আলোচনায় বসবে, তখন একইসঙ্গে সয়াবিন আমদানি নিয়েও প্রাইভেট খাত যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি ঘাটতির বাস্তবতা তুলে ধরে সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বছরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হলেও তারা আমাদের থেকে খুব অল্পই পণ্য নেয়। অথচ আমরাই তাদের কাছ থেকে গম, তুলা, সয়াবিনসহ নানান পণ্য আমদানি করি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার পাশাপাশি রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ হ্রাসেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বোয়িং কেনা একটি বাস্তব প্রয়োজন, কারণ আমাদের জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের ফ্লিট ও হ্যাঙ্গার উভয়ই বোয়িং-নির্ভর। তবে শুধু বোয়িং নয়, ভবিষ্যতে এয়ারবাস বা অন্য উড়োজাহাজও কেনা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির কারণে বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
বাণিজ্য সচিব বলেন, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব ব্যাপক, যার ফলে উৎপাদন ব্যবস্থার স্থানান্তর ঘটছে। এই সুযোগে বাংলাদেশও লাভবান হতে পারে। এ অঞ্চলের অন্য প্রতিযোগী যেমন ভারত বা ভিয়েতনাম যেসব সুবিধা পেয়েছে, বাংলাদেশও অন্তত সমপরিমাণ সুবিধা পাবে বলে আশাবাদী সরকার।
সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়িয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা, যাতে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতা ও কূটনৈতিক অবস্থান দুটিই শক্তিশালী হয়।