৫ আগস্ট স্মরণে চট্টগ্রামজুড়ে উদযাপন-হাসিনা পদত্যাগের দিন জনতার উল্লাস ও স্মৃতিচারণ

- আপডেট সময় ১১:৩৮:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দুপুরের আগেই খবর ছড়িয়ে পড়ে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং ভারতে পালিয়ে গেছেন। যদিও প্রথমে অনেকেই এটি গুজব বলে মনে করলেও, দুপুরে টেলিভিশনের স্ক্রলে সেনাপ্রধানের জাতির উদ্দেশে ভাষণের ঘোষণা আসতেই নিশ্চিত হয়ে যায় যে, দেশ এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
খবর ছড়িয়ে পড়তেই চট্টগ্রামের অলিগলি থেকে রাস্তায় নেমে আসেন সাধারণ মানুষ। স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে নগরের প্রতিটি মোড়। কেউ মিষ্টি বিতরণ করেন, কেউ আবার বিজয়ের অনুভূতি ভাগ করে নিতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ছবি তুলে রাখেন স্মৃতির জন্য। অনেকের চোখে ছিল আনন্দাশ্রু। নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে ক্লান্ত মানুষদের কাছে দিনটি ছিল ঈদের চেয়েও বেশি আনন্দের।
তবে শান্তিপূর্ণ উদযাপন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বিকেলের পরপরই নগরীর কোতোয়ালি, পতেঙ্গা, পাহাড়তলী, ডবলমুরিং ও লোহাগাড়া থানায় ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশের অস্ত্র ও গুলি লুট হয়, অনেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যান। কেউ পোশাক পাল্টে জনতার মাঝে মিশে যান। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরেও হামলা হয়।
চোখে দেখা অভিজ্ঞতা স্মরণ করে এক ব্যাংক কর্মকর্তা মো. সাইফ উদ্দিন বলেন, “সেদিন মনে হয়েছিল, শ্বাস নিতে পারছি—স্বৈরতন্ত্রের অবসান হয়েছে। তবে পরে আন্দোলনের পক্ষগুলোতে বিভেদ দেখে হতাশ হয়েছি। তবুও আশা হারাইনি।”
চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, “সেদিন মনে হয়েছিল আমরা মুক্ত। আর কোনো রাজনৈতিক ভয় থাকবে না।”ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল বলেন, “সেদিন আমরা শহীদ হওয়ার মানসিকতা নিয়ে রাজপথে নেমেছিলাম। যখন শুনি শেখ হাসিনা পালিয়েছে, সবাই কাঁদছিল।”
চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, “আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকাল থেকেই রাজপথে ছিলাম। দুপুরে খবর আসে হাসিনা চলে গেছেন—আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে।” এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করতে আজ ৫ আগস্ট চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রয়েছে শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা। রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করেছে।
এই দিনটি আজও মানুষের মনে বয়ে আনে মুক্তির উচ্ছ্বাস, এবং ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন আশার আলো।