ঢাকা ০৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫

    শহীদদের জাতীয় বীরের স্বীকৃতি-জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৭:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

    গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানে জাতীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেছেন ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের পাশাপাশি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

    ঘোষণাপত্র পাঠকালে ড. ইউনূস বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবেই এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।” এই ঘোষণাপত্রে মোট ২৮টি দফা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২৪ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করছে এবং শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

    ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে গঠিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানে এই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
    ঘোষণাপত্রের ২৮ দফা:

    ১. উপনিবেশবিরোধী লড়াই এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবৃত।
    ২. সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের ত্যাগের স্বীকৃতি।
    ৩. ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগে গণতন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার ব্যাখ্যা।
    ৪. বাকশালের একদলীয় শাসন ও মতপ্রকাশ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণে উদ্বেগ প্রকাশ।
    ৫. আশির দশকের ছাত্র আন্দোলন ও ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার গুরুত্ব।
    ৬. ১/১১ ষড়যন্ত্র এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রতিষ্ঠার পটভূমি।
    ৭. সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার অভিযোগ।
    ৮. গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের বিবরণ।
    ৯. ফ্যাসিবাদী শাসনে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বর্ণনা।
    ১০. দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, এবং পরিবেশ ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসের বিবরণ।
    ১১. ১৬ বছরের গণআন্দোলনে জনগণের ওপর জেল-জুলুম, নির্যাতন ও হত্যা স্মরণ।
    ১২. বিদেশি খবরদারিত্ব ও শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনের নিন্দা।
    ১৩. ২০১৪, ২০১৮, ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগ।
    ১৪. দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যে তরুণ সমাজের ক্ষোভ বৃদ্ধি।
    ১৫. বিরোধী রাজনীতির দমন-পীড়নে দীর্ঘমেয়াদি জনরোষ সৃষ্টির কথা।
    ১৬. কোটাব্যবস্থা বিরোধী আন্দোলনে দমন-পীড়নের ফলে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ সৃষ্টি।
    ১৭. আন্দোলনে প্রায় এক হাজার নিহত, অসংখ্য আহত ও সেনাবাহিনীর জনসমর্থনের বিবরণ।
    ১৮. অসহযোগ আন্দোলন ও গণভবন অভিযানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের প্রেক্ষাপট।
    ১৯. গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বৈধতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
    ২০. সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আইনগত ভিত্তি।
    ২১. ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জনগণের আকাঙ্ক্ষা।
    ২২. সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের প্রতি জনগণের প্রতিশ্রুতি।
    ২৩. দমন-পীড়ন, হত্যা ও অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার অভিপ্রায়।
    ২৪. শহীদদের জাতীয় বীরের স্বীকৃতি ও আহতদের আইনি সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত।
    ২৫. সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রয়োজনীয়তা।
    ২৬. জলবায়ু সহিষ্ণু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষণ।
    ২৭. ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের অঙ্গীকার।
    ২৮. ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের বিজয়ী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    শহীদদের জাতীয় বীরের স্বীকৃতি-জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

    আপডেট সময় ০৭:০৬:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫

    গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই পুনর্জাগরণ’ অনুষ্ঠানে জাতীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠ করেছেন ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের পাশাপাশি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

    ঘোষণাপত্র পাঠকালে ড. ইউনূস বলেন, “২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবেই এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে।” এই ঘোষণাপত্রে মোট ২৮টি দফা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২৪ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহীদদের জাতীয় বীর হিসেবে ঘোষণা করছে এবং শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত যোদ্ধা ও আন্দোলনকারী ছাত্রজনতাকে প্রয়োজনীয় সকল আইনি সুরক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।

    ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে গঠিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানে এই ঘোষণাপত্র অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
    ঘোষণাপত্রের ২৮ দফা:

    ১. উপনিবেশবিরোধী লড়াই এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবৃত।
    ২. সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জনগণের ত্যাগের স্বীকৃতি।
    ৩. ১৯৭২ সালের সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতা ও অপপ্রয়োগে গণতন্ত্র ব্যর্থ হওয়ার ব্যাখ্যা।
    ৪. বাকশালের একদলীয় শাসন ও মতপ্রকাশ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণে উদ্বেগ প্রকাশ।
    ৫. আশির দশকের ছাত্র আন্দোলন ও ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার গুরুত্ব।
    ৬. ১/১১ ষড়যন্ত্র এবং শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রতিষ্ঠার পটভূমি।
    ৭. সংবিধানের অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার অভিযোগ।
    ৮. গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের বিবরণ।
    ৯. ফ্যাসিবাদী শাসনে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বর্ণনা।
    ১০. দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার, এবং পরিবেশ ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংসের বিবরণ।
    ১১. ১৬ বছরের গণআন্দোলনে জনগণের ওপর জেল-জুলুম, নির্যাতন ও হত্যা স্মরণ।
    ১২. বিদেশি খবরদারিত্ব ও শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমনের নিন্দা।
    ১৩. ২০১৪, ২০১৮, ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটাধিকার হরণ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগ।
    ১৪. দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যে তরুণ সমাজের ক্ষোভ বৃদ্ধি।
    ১৫. বিরোধী রাজনীতির দমন-পীড়নে দীর্ঘমেয়াদি জনরোষ সৃষ্টির কথা।
    ১৬. কোটাব্যবস্থা বিরোধী আন্দোলনে দমন-পীড়নের ফলে দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ সৃষ্টি।
    ১৭. আন্দোলনে প্রায় এক হাজার নিহত, অসংখ্য আহত ও সেনাবাহিনীর জনসমর্থনের বিবরণ।
    ১৮. অসহযোগ আন্দোলন ও গণভবন অভিযানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের প্রেক্ষাপট।
    ১৯. গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বৈধতা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
    ২০. সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আইনগত ভিত্তি।
    ২১. ফ্যাসিবাদ, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জনগণের আকাঙ্ক্ষা।
    ২২. সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের প্রতি জনগণের প্রতিশ্রুতি।
    ২৩. দমন-পীড়ন, হত্যা ও অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার অভিপ্রায়।
    ২৪. শহীদদের জাতীয় বীরের স্বীকৃতি ও আহতদের আইনি সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত।
    ২৫. সুষ্ঠু নির্বাচন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের প্রয়োজনীয়তা।
    ২৬. জলবায়ু সহিষ্ণু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার সংরক্ষণ।
    ২৭. ২০২৪ সালের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানকে রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের অঙ্গীকার।
    ২৮. ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের বিজয়ী জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন।