ঢাকা ০৬:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

    ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল শহর

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০২:০১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৬৩ বার পড়া হয়েছে

    যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার তিনি বিচার বিভাগকে রাজধানীর স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অনুমতি দেন এবং ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন।

    ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে গতকাল হোয়াইট হাউসের কাছে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে ‘বু’ ধ্বনি দিয়ে তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। ট্রাম্পের দাবি, ওয়াশিংটন ডিসিতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় ফেডারেল কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা এটিকে রাজধানীতে ক্ষমতা দখলের একটি অজুহাত হিসেবে দেখছেন।

    ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ফ্রি ডিসি’-এর নির্বাহী পরিচালক কেয়া চ্যাটার্জি বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের অধিকারের ওপর আঘাত। তিনি এটিকে ‘নজিরবিহীন, অস্বাভাবিক এবং নিরেট কর্তৃত্ববাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন এটি বড় ধরনের উত্তেজনা উসকে দেবে।

    কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর হওয়ায় ওয়াশিংটন ডিসির রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে। এটি কখনো অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পায়নি এবং ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে। নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড এল শার্পটন ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকারের সর্বোচ্চ অবমাননা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন।

    বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আবারও প্রমাণ করেছে যে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত নীতির ওপর তাদের প্রভাব নেই বললেই চলে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কলেজছাত্র আমারি জ্যাক বলেন, তিনি এই পদক্ষেপকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ডিসি যতটুকু স্বায়ত্তশাসন পায়, সেটাও হারিয়ে যাবে।

    ট্রাম্প ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা দিয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিকমতো পরিচালনা করতে না পারার জন্য স্থানীয় সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, অপরাধের হার কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের জন্য অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তিনি বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে অপরাধী গোষ্ঠী, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের দমন করতে চান।

    তবে ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শোয়ালব এই পদক্ষেপকে ‘নজিরবিহীন, অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে কোনো ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ নেই। বাস্তবে, ডিসিতে সহিংস অপরাধের হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে ৩৫ শতাংশ এবং চলতি বছরে আরও ২৬ শতাংশ কমেছে।

    বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, ট্রাম্প অপরাধ দমনের অজুহাত দেখিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিসহ ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোকে ‘অরক্ষিত ও অপরাধপ্রবণ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল শহর

    আপডেট সময় ০২:০১:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

    যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার তিনি বিচার বিভাগকে রাজধানীর স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অনুমতি দেন এবং ৮০০ ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন।

    ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে গতকাল হোয়াইট হাউসের কাছে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়ে ‘বু’ ধ্বনি দিয়ে তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। ট্রাম্পের দাবি, ওয়াশিংটন ডিসিতে অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় ফেডারেল কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। তবে বিক্ষোভকারীরা এটিকে রাজধানীতে ক্ষমতা দখলের একটি অজুহাত হিসেবে দেখছেন।

    ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ফ্রি ডিসি’-এর নির্বাহী পরিচালক কেয়া চ্যাটার্জি বলেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ওয়াশিংটন ডিসির বাসিন্দাদের অধিকারের ওপর আঘাত। তিনি এটিকে ‘নজিরবিহীন, অস্বাভাবিক এবং নিরেট কর্তৃত্ববাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন এটি বড় ধরনের উত্তেজনা উসকে দেবে।

    কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর হওয়ায় ওয়াশিংটন ডিসির রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক চলে আসছে। এটি কখনো অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা পায়নি এবং ফেডারেল সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে। নাগরিক অধিকার নেতা রেভারেন্ড এল শার্পটন ট্রাম্পের পদক্ষেপকে ‘ন্যায়বিচার ও নাগরিক অধিকারের সর্বোচ্চ অবমাননা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন।

    বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত আবারও প্রমাণ করেছে যে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত নীতির ওপর তাদের প্রভাব নেই বললেই চলে। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কলেজছাত্র আমারি জ্যাক বলেন, তিনি এই পদক্ষেপকে শহরটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে দেখছেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ডিসি যতটুকু স্বায়ত্তশাসন পায়, সেটাও হারিয়ে যাবে।

    ট্রাম্প ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা দিয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিকমতো পরিচালনা করতে না পারার জন্য স্থানীয় সরকারকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, অপরাধের হার কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্মের জন্য অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। তিনি বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে অপরাধী গোষ্ঠী, মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের দমন করতে চান।

    তবে ওয়াশিংটন ডিসির অ্যাটর্নি জেনারেল ব্রায়ান শোয়ালব এই পদক্ষেপকে ‘নজিরবিহীন, অপ্রয়োজনীয় এবং অবৈধ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে কোনো ‘অপরাধ বৃদ্ধির কারণে জরুরি অবস্থা’ নেই। বাস্তবে, ডিসিতে সহিংস অপরাধের হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে কমেছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে ৩৫ শতাংশ এবং চলতি বছরে আরও ২৬ শতাংশ কমেছে।

    বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, ট্রাম্প অপরাধ দমনের অজুহাত দেখিয়ে রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিসহ ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত শহরগুলোকে ‘অরক্ষিত ও অপরাধপ্রবণ’ হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন।