জুলাই সনদ-এর খসড়া পাঠালো জাতীয় ঐক্যমত কমিশন, নেই সময়সীমা

- আপডেট সময় ১২:০৪:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৬০ বার পড়া হয়েছে
জাতীয় ঐক্যমত কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই সনদ-২০২৫ এর পূর্ণাঙ্গ খসড়া পাঠিয়েছে, তবে এতে সংস্কার কার্য সম্পাদনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা রাখা হয়নি। এটি কমিশনের আগের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে ২০ আগস্টের মধ্যে এই খসড়ার বিষয়ে মন্তব্য জমা দিতে বলা হয়েছে।
কমিশনের অবস্থান পরিবর্তন
আগের খসড়ায় কমিশন বলেছিল যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সব সংস্কার কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দলগুলোকে দিতে হবে। কিন্তু নতুন খসড়ায় বলা হয়েছে, যেসব সুপারিশ ‘অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য’ বলে বিবেচিত হবে, তা অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে কোন সুপারিশগুলো ‘অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য’, তা খসড়ায় উল্লেখ করা হয়নি। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ঢাকা পোস্টকে জানান যে খসড়ার ‘বিষয়বস্তু অপরিবর্তিত থাকবে’ এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারই চিহ্নিত করবে।
বিএনপির আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট)
বিএনপি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে:
• রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগের একক ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবে বিএনপি রাজি নয়।
• প্রধানমন্ত্রীর পদ: প্রধানমন্ত্রী একসঙ্গে দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন না—কমিশনের এমন প্রস্তাবে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে।
• উচ্চকক্ষ: নিম্নকক্ষের ভোটের অনুপাতে (পিআর) উচ্চকক্ষের ১০০ সদস্য নির্বাচনের প্রস্তাবে বিএনপি রাজি নয়।
• অন্যান্য প্রতিষ্ঠান: ন্যায়পাল, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) নিয়োগে সাংবিধানিক কমিটি গঠনের প্রস্তাবেও বিএনপি আপত্তি দিয়েছে।
• প্রার্থী তালিকা ও নারী প্রতিনিধিত্ব: নিম্নকক্ষের পাশাপাশি উচ্চকক্ষের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ এবং তালিকায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী থাকার বাধ্যবাধকতার প্রস্তাবেও বিএনপি রাজি নয়।
বিএনপি জানিয়েছে, তারা জুলাই সনদে সই করলেও, নির্বাচনে জয়ী হলে তারা যে বিষয়গুলোতে আপত্তি জানিয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করবে না।
অন্যান্য দলের ভিন্নমত
• জামায়াত: জামায়াতে ইসলামী ‘ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপ’-এর পক্ষভুক্ত হওয়া এবং সরাসরি নির্বাচনে নারীদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বাধ্যবাধকতায় রাজি নয়। তারা সংসদে নারী আসন বৃদ্ধি করে ১০০ করতে রাজি, তবে তা পিআর পদ্ধতিতে হতে হবে।
• এনসিপি: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ৮৪টি প্রস্তাবে কোনো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেয়নি। তবে তারা সংসদ সদস্যদের আস্থা ভোট ছাড়া অন্য বিষয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার পক্ষে নয় এবং অন্তত ১৫ শতাংশ আসনে নারীদের মনোনয়নের বাধ্যবাধকতা চেয়েছে।
• বামপন্থী দল: সিপিবি, বাসদ এবং জমিয়ত সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনে রাজি হয়নি। এছাড়া সিপিবি, বাসদ ও বাংলাদেশ জাসদ সংবিধানের মূলনীতিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার যুক্ত করতে রাজি নয়।
• ধর্মভিত্তিক দল: বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় গেলে সংবিধানের মূলনীতিতে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনর্বহাল করবে। ইসলামী আন্দোলনসহ ছয়টি ধর্মভিত্তিক দল নারী আসন বৃদ্ধি এবং সরাসরি মনোনয়নে রাজি নয়।
যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
• এক ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন না।
• স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন।
• জরুরি অবস্থা জারিতে বিরোধী দলের নেতার সম্পৃক্ততা।
• মৌলিক অধিকারের সম্প্রসারণ।
• রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় আইন।
• নির্বাচন কমিশন ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে সাংবিধানিক কমিটি গঠন।
• গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।
• বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ।