বিতাড়নের নয়া কৌশল: জীবিত অভিবাসীদের ‘মৃত’ তালিকায় যুক্ত করছে ট্রাম্প প্রশাসন

- আপডেট সময় ০২:২৪:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
- / ১৬ বার পড়া হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অভিবাসীদের বিতাড়িত করার লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এক নতুন কৌশল অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই কৌশলের অংশ হিসেবে জীবিত অভিবাসীদের নাম মৃত ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তাদের সামাজিক সুরক্ষা নম্বর (এসএসএন) বাতিল করে “স্বেচ্ছা নির্বাসনে” বাধ্য করা যায়।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী হাজার হাজার অভিবাসীর অস্থায়ী বৈধ অবস্থান বাতিল করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবার তিনি অভিবাসীদের বিতাড়নের জন্য আরও কঠোর কৌশল হিসেবে তাদের বৈধভাবে অর্জিত সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর (এসএসএন) কার্যত অকার্যকর করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমস তাদের হাতে আসা নথি এবং ছয়জন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, ওই অভিবাসীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, এই কৌশল বাস্তবায়নের জন্য “ডেথ মাস্টার ফাইল” নামক একটি ডেটাবেস ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সাধারণত মৃত ব্যক্তিদের তালিকা সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখন সেই তালিকায় জীবিত অভিবাসীদের নাম যুক্ত করা হচ্ছে, যাদেরকে সরকার “আইনিভাবে মৃত” হিসেবে গণ্য করতে চায়।
এর ফলে এই ব্যক্তিরা তাদের এসএসএন ব্যবহার করতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রে পরিচয়পত্র, চাকরি, ব্যাংক লেনদেন, ট্যাক্স রিটার্ন এবং এমনকি চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য এসএসএন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাপ্ত নথি অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহেই ৬ হাজার ৩০০ অভিবাসীর নাম এই “মৃতদের” ডেটাবেসে যোগ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, এই ব্যক্তিরা সম্প্রতি তাদের বৈধ অবস্থান হারিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে “অপরাধে দোষী সাব্যস্ত” এবং “সন্ত্রাসের সন্দেহভাজন” ব্যক্তিদের নাম এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভবিষ্যতে এই তালিকা আরও বিস্তৃত হতে পারে এবং যেকোনো “অননুমোদিত অভিবাসী” এতে যুক্ত হতে পারেন।
এই পদক্ষেপ ইতোমধ্যে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সমালোচকরা বলছেন, জীবিত মানুষকে এভাবে “মৃত” ঘোষণা করা এবং তাদের পরিচয় বাতিল করে দেওয়া কেবল আইনি নয়, নৈতিক দিক থেকেও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এর ফলে তারা সামাজিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে উঠবে, যার কারণে তারা বাধ্য হয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই “ডেথ মাস্টার ফাইল”-এ নাম অন্তর্ভুক্তির বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রতিকার আছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এই নীতি ট্রাম্পের “কঠোর অভিবাসন” নীতিরই সম্প্রসারণ, যেখানে সীমান্ত নিরাপত্তা, “অবৈধ অভিবাসন” হ্রাস এবং যুক্তরাষ্ট্রে “বিশুদ্ধ নাগরিকত্ব” রক্ষা করাকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।