ক্ষমতা হারানোর পর আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে একটি ছবি, যেখানে দাবি করা হয়েছে তিনি ভারতের কলকাতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই ছবিটি আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ওবায়দুল কাদেরের কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে শনিবার একটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি কলকাতার অভিজাত রাজারহাট নিউটাউন এলাকায় অবস্থান করছেন। এর আগে গত ১১ মার্চ গাজী নাসির উদ্দীন ফেসবুকে পোস্ট করে দাবি করেন, তার এক বন্ধু কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরকে দেখেছেন। এসব দাবির মধ্যেই ভাইরাল হয় কলকাতার রাস্তায় ‘নর্থ সিটি’ নামক একটি হাসপাতালের সামনে ওবায়দুল কাদেরের দাঁড়িয়ে থাকার ছবি।

তবে রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আসল সত্য। ছবিটি কোনো বাস্তব চিত্র নয়, বরং এটি তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির মাধ্যমে।

‘নর্থ সিটি’ হাসপাতাল নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, কলকাতার বাগমারী রোডে একই নামে একটি হাসপাতাল রয়েছে। গুগলে পাওয়া সেই হাসপাতালের একাধিক ছবির সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ছবিটির তুলনা করলে বেশ কিছু সুস্পষ্ট পার্থক্য চোখে পড়ে।

প্রথমত, বাগমারীর ‘নর্থ সিটি’ হাসপাতালের সামনের দিকে পাঁচটি জানালা দেখা যায়, যেখানে ভাইরাল হওয়া ছবিতে রয়েছে মাত্র চারটি জানালা। দ্বিতীয়ত, বাগমারীর হাসপাতালের প্রবেশপথের ডান পাশে নীল রঙের একটি সাইনবোর্ডে ‘নর্থ সিটি ডায়গনস্টিক সেন্টার’ লেখা এবং সেখানে কিছু মানুষের ছবিও রয়েছে। কিন্তু ভাইরাল হওয়া ছবিতে সাইনবোর্ডে শুধু ‘নর্থ সিটি ইমেজিং সেন্টার’ লেখা এবং কোনো মানুষের ছবি নেই। তৃতীয়ত, বাগমারীর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালের নামের পাশাপাশি ঠিকানা ও জরুরি ফোন নম্বর উল্লেখ থাকলেও ভাইরাল হওয়া ছবির অ্যাম্বুলেন্সে কেবল হাসপাতালের নাম দেখা যায়।

শুধু বাহ্যিক পার্থক্যই নয়, ছবিটিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি হওয়ার আরও কিছু লক্ষণ স্পষ্ট। ছবিতে ওবায়দুল কাদেরকে কোটের কলার টেনে মুখ ঢাকতে দেখা যায়, যা সাধারণত কোটের কাপড়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়াও পেছনের ভবনের রং ও গঠন অস্বাভাবিক মসৃণ এবং জানালাগুলোতে অতিরিক্ত প্রতিসাম্য লক্ষ্য করা যায়। এমনকি ছবিতে দৃশ্যমান রাস্তাটিও অস্বাভাবিকভাবে মসৃণ, যা অনেকটা কার্টুন চিত্রের মতো।

বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভাইরাল হওয়া ছবিটি এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম সাইট ইঞ্জিনে পরীক্ষা করা হলে, সেটি ৯৯ শতাংশ সম্ভাবনা নিয়ে এআই দ্বারা তৈরি বলে প্রমাণ হয়।

সুতরাং, ওবায়দুল কাদেরের কলকাতায় থাকার যে ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তা আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারসাজি এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তির অপব্যবহার করে কিভাবে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো সম্ভব।