শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হলো উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধান বীজ উৎপাদন

- আপডেট সময় ০৬:২৬:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
- / ৩১ বার পড়া হয়েছে
জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধান বীজ উৎপাদন শুরু হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি বছর ৭৫০ একর জমিতে চীনা জাতের ঋ১ হাইব্রিড ধান থেকে প্রায় ৭০০ টন বীজ ধান পাওয়া যাবে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কৃষিবিদ সাজ্জাদ হোসাইন তুলিপ, যিনি এর আগে নালিতাবাড়িতে কফি চাষে সফলতা অর্জন করেছেন, তিনি কৃষিবিদ গ্রুপের সহায়তায় চীনা জাতের ঋ১ বোরো হাইব্রিড বীজ ধান নিয়ে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে তিনি নালিতাবাড়ি সদর ইউনিয়নের খালভাঙ্গা গ্রামে ৩৩ একর জমিতে এই জাতের ধানের চাষ করেছেন।
কৃষিবিদ তুলিপ জানান, জমি লিজ, বীজ ধান, সার, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচসহ প্রতি একরে তার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে। ধান কাটা ও মাড়াই শেষে বীজ ধান বিক্রি পর্যন্ত যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে তিনি প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ আশা করছেন।
নালিতাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিস আরও জানায়, ২০২৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে হাইব্রিড বীজ ধান উৎপাদন শুরু হলেও বাম্পার ফলন পাওয়ায় এ বছর ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষিবিদ গ্রুপ, লাল তীর, সিনজেনটা, ইস্পাহানী ও মদীনা সিডের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও চীনা ঋ১ বোরো হাইব্রিড জাতের বীজ ধান চাষে এগিয়ে এসেছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই জাতের ধানগাছে রোগবালাই তুলনামূলকভাবে কম হয়। ফলে অন্যান্য হাইব্রিড ধানের তুলনায় চীনা ঋ১ বোরো হাইব্রিড বীজ ধানে প্রতি একরে গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কেজি ফলন পাওয়া যায়। যেখানে সাধারণ চাষে এই ধানে একরে ১১০ থেকে ১২০ মণ ফলন হয়ে থাকে।
স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সাইফুল ইসলাম (৪৮) জানান, তারা প্রতি বছর বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান চাষ করলেও এবার উন্নত জাতের বীজ ধান তাদের উপজেলাতেই উৎপাদিত হওয়ায় তারা খুবই আশাবাদী। কৃষক ছামেদুল হক (৫০) বলেন, তাদের গ্রামে হাইব্রিড ধানের বীজ উৎপাদন হচ্ছে যা তাদের জন্য আনন্দের বিষয় এবং আগামী বছর তারা এই ধান চাষ করবেন। কৃষি শ্রমিক মো. মামুন মিয়া জানান, বীজ উৎপাদনের জমিতে প্রতিদিন ৭ জন শ্রমিক কাজ করছেন এবং আগামী বছর চাষের পরিমাণ বাড়লে গ্রামের আরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
নালিতাবাড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, একসময় বাংলাদেশে হাইব্রিড বীজ ধান বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। বর্তমানে উন্নত জাতের হাইব্রিড ধান দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। তাই আমদানি নির্ভরতা কমাতে শেরপুরেও এই জাতের বীজ ধান উৎপাদন শুরু হয়েছে। কৃষি অফিসের সহায়তায় আরও বেশি জমিতে এই ধানের চাষ করা গেলে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও শেরপুরে হাইব্রিড বীজ ধান উৎপাদনে আগ্রহী। উপজেলা কৃষি অফিস বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যায্য মূল্যে সার ও সেচ সুবিধা প্রদানে কাজ করছে।
কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই বীজ ধানের ভালো ফলন হলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলাতেও বিক্রি করা সম্ভব হবে। এর ফলে জেলায় নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং জেলার কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হবে।