পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীর আশঙ্কা ভারত ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা করতে পারে

- আপডেট সময় ১০:৫৭:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
- / ৭ বার পড়া হয়েছে
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, জম্মু ও কাশ্মির প্রদেশের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার শোধ নিতে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানে সামরিক হামলা করতে পারে ভারত। গত মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ভারতের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী সেই বৈঠকের কিছুক্ষণ পরেই এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানী ইসলামাবাদে মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে এ সংবাদ সম্মেলন করেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেনন, নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দাসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, ভারত পেহেলগাম ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে যে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ করেছে তার জের ধরে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে দেশটি।
সংবাদ সম্মেলনে আতাউল্লাহ অভিযোগ অভিযোগ করেন, ভারত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই ‘স্বঘোষিত’ এবং ‘এককভাবে’ বিচারক, জুরি ও জল্লাদের ভূমিকা নেয়। যা পুরোপুরি বেপরোয়া। ভারতের এই ভূমিকা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে ভারত।
আতাউল্লাহ বলেন, সন্ত্রাসের অভিশাপের যন্ত্রণা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে সক্ষম পাকিস্তান। কারণ পাকিস্তান নিজেই বারবার সন্ত্রাসবাদের শিকার। আমারা পৃথিবীর যেকোনো স্থানে যে
কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে নিন্দা জানাই।
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা তদন্তের জন্য যদি একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠিত হয়, তাহলে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে সেই কমিশনকে খোলা মনে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত পাকিস্তান। বলেন আতাউল্লাহ তারার।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু ভারত দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন এক পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অযৌক্তিক ও সংঘর্ষে পরিপূর্ণ; এবং এই পথ শেষ পর্যন্ত এই উপমহাদেশ সংলগ্ন অংঞ্চলগুলোর চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটাবে।
নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য তদন্ত এড়িয়ে যেতে চায় ভারত। দেশটির সত্যিকারের উদ্দেশ্য কী তা বোঝার জন্য এটি এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। ভারত সচেতনভাবে তার জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ে খেলছে। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তার প্রভাব আমরা কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও
দেখছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখজনক।
তবে আতাউল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে পাকিস্তান তার সমুচিত জবাব দেবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ইস্যুতে সজাগ থাকবে এবং যেকোনো উত্তেজনা বা হঠকারিতা এবং এর ফলে সৃষ্ট পরিণতির দায় ভারতের ওপর বর্তাবে।
ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগাঁও জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার উপশাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।
হামলাকারীরা স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে অন্তত ২৬ পর্যটককে গুলি করে হত্যা করেছে। এ সময় তাদের গুলিতে আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মিরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা।
ভারত ভয়াবহ এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে। তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সিন্ধু নদের পানিবন্টন চুক্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতের জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
ভারতের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী হত্যাকারীদের ধরতে জম্মু ও কাশ্মিরে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে । এছাড়া ২২ এপ্রিলের পর থেকে পাঁচ রাত ধরে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজনের নিহত হওয়ার সংবাদও পাওয়া গেছে।
সূত্র: ডন