ঢাকা ০৮:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫

পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে বিদেশি বিমান সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০১:০০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
  • / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আকাশপথেও প্রভাব ফেলেছে। নয়া দিল্লির বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে, লক্ষণীয় বিষয় হলো, শুধু ভারতীয় বিমান সংস্থাই নয়, বেশ কিছু বিদেশি বিমান সংস্থাও পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে।

দিল্লিগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ় এবং সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের মতো বিমানগুলো তাদের স্বাভাবিক রুট পরিবর্তন করে পাকিস্তানের উত্তর দিক ঘেঁষে ভারতে প্রবেশ করছে। এরপর তারা আরব সাগরের উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে দিল্লি পৌঁছাচ্ছে।

জার্মানির জাতীয় বিমান সংস্থা লুফত্‌হানসা তাদের বিমানচালকদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে, এই বিমান সংস্থার এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময় লাগছে। শুধু এই দুটি সংস্থাই নয়, এয়ার ফ্রান্স এবং এমিরেটসের মতো খ্যাতনামা বিমান সংস্থাগুলোও একই পথ অনুসরণ করছে।

এয়ার ফ্রান্সের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করা হয়েছে। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণেই তারা পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ় যদিও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, তবে মনে করা হচ্ছে তারাও একই কারণে পাকিস্তানের আকাশপথ এড়িয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত রবিবার লুফত্‌হানসার একটি বিমান জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে সেটি দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিমানটি পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে।

বিভিন্ন বিদেশি বিমান সংস্থার এই সম্মিলিত সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারের উপর একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বিমানগুলোকে অতিরিক্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে হওয়ায় তাদের জ্বালানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই বর্ধিত ব্যয়ের কারণে অদূর ভবিষ্যতে বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়ও বিলম্বিত হতে পারে, যা যাত্রী ভোগান্তির কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল নীতির অধীনে, কোনো বিমান যখন অন্য কোনো দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে গন্তব্যে যায়, তখন সেই দেশটি ‘ওভারফ্লাইট ফিজ়’ নামক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাজস্ব হিসেবে পেয়ে থাকে।

এই অর্থের পরিমাণ বিমানের ওজন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আকাশসীমায় অতিক্রান্ত দূরত্বের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলায়, পাকিস্তান এই গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা যে কেবল স্থল বা সমুদ্র সীমাকে প্রভাবিত করে না, বরং আকাশপথেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, এই ঘটনা তারই একটি স্পষ্ট উদাহরণ। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে বিদেশি বিমান সংস্থা

আপডেট সময় ০১:০০:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আকাশপথেও প্রভাব ফেলেছে। নয়া দিল্লির বিরুদ্ধে কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তান ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে, লক্ষণীয় বিষয় হলো, শুধু ভারতীয় বিমান সংস্থাই নয়, বেশ কিছু বিদেশি বিমান সংস্থাও পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলছে।

দিল্লিগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ় এবং সুইস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের মতো বিমানগুলো তাদের স্বাভাবিক রুট পরিবর্তন করে পাকিস্তানের উত্তর দিক ঘেঁষে ভারতে প্রবেশ করছে। এরপর তারা আরব সাগরের উপর দিয়ে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে দিল্লি পৌঁছাচ্ছে।

জার্মানির জাতীয় বিমান সংস্থা লুফত্‌হানসা তাদের বিমানচালকদের পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে, এই বিমান সংস্থার এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে অতিরিক্ত সময় লাগছে। শুধু এই দুটি সংস্থাই নয়, এয়ার ফ্রান্স এবং এমিরেটসের মতো খ্যাতনামা বিমান সংস্থাগুলোও একই পথ অনুসরণ করছে।

এয়ার ফ্রান্সের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করা হয়েছে। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণেই তারা পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ় যদিও এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, তবে মনে করা হচ্ছে তারাও একই কারণে পাকিস্তানের আকাশপথ এড়িয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত রবিবার লুফত্‌হানসার একটি বিমান জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে সেটি দিল্লি বিমানবন্দরে অবতরণ করে। যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিমানটি পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে।

বিভিন্ন বিদেশি বিমান সংস্থার এই সম্মিলিত সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারের উপর একটি তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। বিমানগুলোকে অতিরিক্ত দূরত্ব অতিক্রম করতে হওয়ায় তাদের জ্বালানি খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই বর্ধিত ব্যয়ের কারণে অদূর ভবিষ্যতে বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি, যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছানোর সময়ও বিলম্বিত হতে পারে, যা যাত্রী ভোগান্তির কারণ হতে পারে।

অন্যদিকে, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল নীতির অধীনে, কোনো বিমান যখন অন্য কোনো দেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে গন্তব্যে যায়, তখন সেই দেশটি ‘ওভারফ্লাইট ফিজ়’ নামক একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রাজস্ব হিসেবে পেয়ে থাকে।

এই অর্থের পরিমাণ বিমানের ওজন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আকাশসীমায় অতিক্রান্ত দূরত্বের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়। বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলায়, পাকিস্তান এই গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা যে কেবল স্থল বা সমুদ্র সীমাকে প্রভাবিত করে না, বরং আকাশপথেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে, এই ঘটনা তারই একটি স্পষ্ট উদাহরণ। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোর এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।