‘অপারেশন সিঁদুর’: ভারত যেসব অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ব্যবহার করলো

- আপডেট সময় ১২:৩৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
- / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বুধবার বিস্ফোরক এক তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ভারতের চালানো হামলায় প্রায় ৭৫ থেকে ৮০টি যুদ্ধবিমান অংশ নিয়েছিল। এই তথ্য তিনি পার্লামেন্টের বাইরে সাংবাদিকদের জানান।
তবে ইসহাক দার আরও বলেছেন, ভারতের এমন আগ্রাসী হামলার মুখেও পাকিস্তান সংযত আচরণ করেছে এবং তাদের আকাশসীমায় অনুপ্রবেশকারী প্রায় ৮০টি যুদ্ধবিমানের মধ্যে মাত্র পাঁচটি ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের এই সামরিক অভিযানটি গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার পর চালায় ভারত। পাকিস্তানের পাঞ্জাব এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়। পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় ৩১ জন নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন এবং অর্ধশতাধিকের বেশি আহত হয়েছেন।
তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দেওয়া তথ্য মতে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পাঞ্জাবের শিয়ালকোট, ভাওয়ালপুর ও মুরিদকে এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফারাবাদ, বাগ ও কোটলিতে—এই ছয়টি স্থানে আঘাত হানে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই হামলায় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং অত্যন্ত নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম সমরাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। পত্রিকাটি আরও জানায়, হামলাগুলো এমনভাবে চালানো হয়েছে যাতে পাকিস্তানের কোনো সামরিক স্থাপনা প্রাথমিকভাবে লক্ষ্যবস্তু না হয়।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই হামলায় মূলত তিনটি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে—স্কাল্প ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, হ্যামার প্রিসিশন-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র এবং আত্মঘাতী ড্রোন।
এবার জেনে নেওয়া যাক এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত:
স্কাল্প ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র: এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামেও পরিচিত। এটি একটি দূরপাল্লার আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। এটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে গভীরভাবে আঘাত হানার জন্য। ইউরোপীয় সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এমবিডিএ এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে। সাধারণত, এটি দুর্ভেদ্য বাঙ্কার ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি ওজনের এই ক্ষেপণাস্ত্র রাফালের মতো অত্যাধুনিক জঙ্গি বিমানে মোতায়েন করা হয়।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর অস্ত্রের ভান্ডারে এই ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত হওয়ায় তারা রাডারকে ফাঁকি দিয়ে শত্রুপক্ষের সীমান্তের ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সক্ষমতা অর্জন করেছে। পূর্বপরিকল্পিত অভিযানে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর। ভারত ছাড়াও ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়া যুদ্ধ এবং ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রেও এই ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহার দেখা গেছে।
হ্যামার প্রিসিশন-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র: হ্যামার (HAMMER)-এর পূর্ণরূপ হলো হাইলি অ্যাগিলে মডুলার মিউনিশন এক্সটেন্ড রেঞ্জ। এটিও আকাশ থেকে ভূমিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। ফ্রান্সের সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারক কোম্পানি সাফরান ইলেট্রনিক্স অ্যান্ড ডিফেন্স এটি তৈরি করেছে। এটি মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং স্থির ও চলমান উভয় ধরনের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
আত্মঘাতী ড্রোন: আত্মঘাতী ড্রোন, যা ‘কামিকাজি ড্রোন’ নামেও পরিচিত, মূলত নজরদারি, লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণ এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই ড্রোনগুলো সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুর ওপর ঘোরাফেরা করতে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটিকে আঘাত হানতে পারে। এছাড়াও, রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে দূর থেকেও এটি পরিচালনা করে হামলা চালানো সম্ভব।
ভারতের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফারাবাদ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল, যার কিছু চিত্র ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।