ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগের সমর্থনে অনলাইন পোস্টেও গ্রেপ্তার, বন্ধ হচ্ছে দলীয় পেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:৩৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর, এবার দলটির নেতাকর্মীদের শুধু মাঠেই নয়, ভার্চুয়াল জগতেও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারের নতুন পদক্ষেপ অনুযায়ী, ফেসবুক ও ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো কথা বললেই গ্রেপ্তার হতে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এমনকি, বিদেশে অবস্থান করেও যদি কেউ দলটির সমর্থনে পোস্ট দেন বা মন্তব্য করেন, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে।

এতদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে আইনি প্রশ্ন থাকলেও, দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় পুলিশ এখন সেই দ্বিধা থেকে মুক্ত। একটি নির্ভরযোগ্য পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, সোমবার সরকারি আদেশ জারির পরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে গ্রেপ্তারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাঠানো হবে।

সরকারের আদেশ অমান্যকারী যে কেউ, তা সে গোপন বৈঠক, সমাবেশ বা মিছিল যেখানেই হোক না কেন, গ্রেফতারের আওতায় আসবে। এতদিন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আইনি জটিলতার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের মিছিলে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা বোধ করতেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে চলেছে।

শুধু রাজপথের আন্দোলন নয়, এবার সাইবার স্পেসেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো ধরনের প্রচারণা বরদাস্ত করা হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা, ফেসবুক ও ইউটিউবে দলের পক্ষে কোনো কনটেন্ট তৈরি, পোস্ট দেওয়া বা কমেন্ট করাও এখন গ্রেপ্তারের কারণ হতে পারে। পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু অফলাইন নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজসহ সাইবার স্পেসে দলটির কার্যক্রম বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপত্র জারির পরই বিটিআরসির মাধ্যমে মেটাসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পেজগুলো বন্ধের অনুরোধ পাঠানো হবে। প্রায় ৪০ লক্ষ ফলোয়ার সমৃদ্ধ ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজটিও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত পুলিশের জন্য আইনি জটিলতা অনেকাংশে দূর করবে। এতদিন কোনো রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ না থাকায়, তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন উঠত। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত পুলিশকে আইনি সুরক্ষা দেবে এবং দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আরও ক্ষমতা যোগাবে।

তবে সরকারের এই পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, মুক্ত মত প্রকাশ এবং রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধান পরিপন্থী। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক দলের সমর্থন বা ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার সীমিত করা হলে, তা বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূলনীতির পরিপন্থী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলটির সমর্থকদের অনলাইন কার্যকলাপের ওপর কঠোর নজরদারি ও গ্রেপ্তারের এই পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

একদিকে সরকারের যুক্তি হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখা, অন্যদিকে সমালোচকদের আশঙ্কা, এই পদক্ষেপ বিরোধী মত দমন এবং ডিজিটাল স্পেসে নাগরিক অধিকার সীমিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগের সমর্থনে অনলাইন পোস্টেও গ্রেপ্তার, বন্ধ হচ্ছে দলীয় পেজ

আপডেট সময় ১২:৩৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর, এবার দলটির নেতাকর্মীদের শুধু মাঠেই নয়, ভার্চুয়াল জগতেও কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারের নতুন পদক্ষেপ অনুযায়ী, ফেসবুক ও ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো কথা বললেই গ্রেপ্তার হতে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এমনকি, বিদেশে অবস্থান করেও যদি কেউ দলটির সমর্থনে পোস্ট দেন বা মন্তব্য করেন, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাবে।

এতদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে আইনি প্রশ্ন থাকলেও, দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় পুলিশ এখন সেই দ্বিধা থেকে মুক্ত। একটি নির্ভরযোগ্য পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী, সোমবার সরকারি আদেশ জারির পরই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছে গ্রেপ্তারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাঠানো হবে।

সরকারের আদেশ অমান্যকারী যে কেউ, তা সে গোপন বৈঠক, সমাবেশ বা মিছিল যেখানেই হোক না কেন, গ্রেফতারের আওতায় আসবে। এতদিন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আইনি জটিলতার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগের মিছিলে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে দ্বিধা বোধ করতেন। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞার পর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে চলেছে।

শুধু রাজপথের আন্দোলন নয়, এবার সাইবার স্পেসেও আওয়ামী লীগের পক্ষে কোনো ধরনের প্রচারণা বরদাস্ত করা হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা, ফেসবুক ও ইউটিউবে দলের পক্ষে কোনো কনটেন্ট তৈরি, পোস্ট দেওয়া বা কমেন্ট করাও এখন গ্রেপ্তারের কারণ হতে পারে। পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু অফলাইন নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজসহ সাইবার স্পেসে দলটির কার্যক্রম বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপত্র জারির পরই বিটিআরসির মাধ্যমে মেটাসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পেজগুলো বন্ধের অনুরোধ পাঠানো হবে। প্রায় ৪০ লক্ষ ফলোয়ার সমৃদ্ধ ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজটিও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত পুলিশের জন্য আইনি জটিলতা অনেকাংশে দূর করবে। এতদিন কোনো রাজনৈতিক দল আনুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ না থাকায়, তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন উঠত। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের এই সিদ্ধান্ত পুলিশকে আইনি সুরক্ষা দেবে এবং দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আরও ক্ষমতা যোগাবে।

তবে সরকারের এই পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, মুক্ত মত প্রকাশ এবং রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধান পরিপন্থী। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক দলের সমর্থন বা ভিন্নমত প্রকাশের অধিকার সীমিত করা হলে, তা বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের মূলনীতির পরিপন্থী হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং দলটির সমর্থকদের অনলাইন কার্যকলাপের ওপর কঠোর নজরদারি ও গ্রেপ্তারের এই পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

একদিকে সরকারের যুক্তি হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ পরিবেশ বজায় রাখা, অন্যদিকে সমালোচকদের আশঙ্কা, এই পদক্ষেপ বিরোধী মত দমন এবং ডিজিটাল স্পেসে নাগরিক অধিকার সীমিত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।