সুন্দরবনের ১০ কিমিতে নতুন শিল্প স্থাপন নিষিদ্ধ

- আপডেট সময় ০৪:৪৬:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের পরিবেশগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সুন্দরবন সংরক্ষিত বনের চারপাশের ১০ কিলোমিটার এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (Ecologically Critical Area – ECA) হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এই প্রজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো এই সংবেদনশীল এলাকায় নতুন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন অথবা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো প্রকল্প গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা।
‘বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫’-এর ক্ষমতাবলে সোমবার (১২ মে) এই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়।
এর আগে, মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন কমিটির নির্বাহী কমিটির ১৬তম সভায় এই নীতিগত সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করাই ছিল এই সভার প্রধান লক্ষ্য।
প্রজ্ঞাপনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পরিবেশগত গুণগত মান বৃদ্ধি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং একটি দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য পরিকল্পিত এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবে।
এর অর্থ হলো, এমন কিছু কার্যক্রম চালানো যেতে পারে যা প্রকৃতির সুরক্ষা করবে এবং পরিবেশের উন্নতিতে সহায়ক হবে। তবে, কোনো প্রকার নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, যা পরিবেশ দূষণ করতে পারে বা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করতে পারে, তা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে এই ইসিএ এলাকা ঘোষণার সিদ্ধান্তটি পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সুন্দরবনের অমূল্য জীববৈচিত্র্য এবং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব হবে।
এই বনভূমি শুধু বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ নয়, এটি বিশ্বজুড়ে প্রকৃতির এক অনন্য নিদর্শন। এটিকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সুন্দরবনের নিকটবর্তী এলাকায় ভবিষ্যতে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। এতদিন ধরে এই এলাকায় শিল্প স্থাপনের যে সম্ভাবনা ছিল, তা এখন আইনি বাধার মুখে পড়বে। তবে, পরিবেশ সচেতন মহল এবং প্রকৃতিপ্রেমীরা সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশের সুরক্ষা অপরিহার্য, এবং সুন্দরবনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য এই ধরনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। এই প্রজ্ঞাপন সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই বনভূমিকে অক্ষত রাখবে বলে আশা করা যায়।