ঢাকা ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

মালিককে শাস্তিও দিতে পারি” বাউফলের ইউএনওর মন্তব্য ঘিরে তোলপাড়!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৯:০১:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
  • / ২৫৫ বার পড়া হয়েছে

ফের বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এলেন এক সরকারি কর্মকর্তা। অভিযোগ ওঠেছে, বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং স্থানীয় এক সাংবাদিককে রীতিমতো জেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন!

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার, বাউফল গার্লস স্কুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আয়োজনে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা চলাকালীন। অভিযোগকারী এমরান হাসান সোহেল, যিনি একইসাথে বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি। তিনি জানিয়েছেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে তাকে এই হুমকি দেন।

শুধু তাই নয়, ইউএনও নাকি এও বলেছেন, “আমি কারও ফোন ধরতে বাধ্য নই। আমাকে চিঠি দিতে হবে। আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর, মালিককে শাস্তিও দিতে পারি!” তার এই মন্তব্যে সেখানে উপস্থিত সকলেই হতবাক হয়ে যান।

এমরান হাসান সোহেল জানান, ওই বিতর্ক অনুষ্ঠানে ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমে বৃহস্পতিবার তিনি ইউএনও’র অফিসে যান, কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর শনি ও রবিবারও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা ইউএনও’র কার্যালয়ে যান আমন্ত্রণ জানাতে, কিন্তু তখনও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

এই তিন দিন এমরান হাসান সোহেল ব্যক্তিগতভাবে ইউএনও’কে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি রবিবার সন্ধ্যায় ফোন করলে তিনি তা কেটে দেন। অথচ, একই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম যখন ইউএনও’কে আমন্ত্রণ জানান, তখন তিনি ঠিকই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। আর এসেই তিনি এমরান হাসান সোহেলকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে স্কুলে আসেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। সেখানে এসেই তিনি আমন্ত্রণ না জানানোর কৈফিয়ত তলব করেন এমরান হাসান সোহেলের কাছে।

জবাবে সোহেল যখন বলেন যে তিনি একাধিকবার ইউএনও’র কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাননি এবং তিন দিন ধরে ফোন করেও তার সাড়া মেলেনি, তখন ইউএনও আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

তিনি নাকি এমরান হাসান সোহেলকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা একটা অ্যারেজমেন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না, আপনারা কিসের অ্যারেজমেন্ট করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার! ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে?”

সোহেল যখন ফের বলেন যে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ইউএনও কমপ্লেক্সে তিন দিন যাওয়া হয়েছিল, তখন ইউএনও অদ্ভুত এক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।”

এর উত্তরে এমরান হাসান সোহেল জানান, ইউএনও’র বাংলোতে সাধারণত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। জবাবে ইউএনও বলেন, “বাংলোতে যখন অ্যালাউ করবো তখন ঢুকবেন।” এখানেই শেষ নয়।

ইউএনও নাকি এমরান হাসান সোহেলকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “আপনারা প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?”

পাল্টা জবাবে এমরান হাসান সোহেল বলেন, “আপনি ফোনই ধরলেন না, তাহলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোন কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।” এরপরই ইউএনও আমিনুল ইসলাম সেই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন, “আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।” যার উত্তরে সভাপতি সোহেল বলেন, “ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।”

শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে ইউএনও আমিনুল ইসলাম খবরপত্রের আরেক সাংবাদিক এইচ বাবলুকেও তার পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন এবং দেখা করে ক্ষমা চাইতে চাপ দিয়েছেন।

এই বিষয়ে জানার জন্য বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তিনি এখনও কোনো তথ্য পাননি এবং তথ্য পেলে মন্তব্য করবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

মালিককে শাস্তিও দিতে পারি” বাউফলের ইউএনওর মন্তব্য ঘিরে তোলপাড়!

আপডেট সময় ০৯:০১:০৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

ফের বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এলেন এক সরকারি কর্মকর্তা। অভিযোগ ওঠেছে, বাউফলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং স্থানীয় এক সাংবাদিককে রীতিমতো জেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন!

ঘটনার সূত্রপাত সোমবার, বাউফল গার্লস স্কুলে দুর্নীতি দমন কমিশনের আয়োজনে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা চলাকালীন। অভিযোগকারী এমরান হাসান সোহেল, যিনি একইসাথে বাউফল উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি। তিনি জানিয়েছেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বসে তাকে এই হুমকি দেন।

শুধু তাই নয়, ইউএনও নাকি এও বলেছেন, “আমি কারও ফোন ধরতে বাধ্য নই। আমাকে চিঠি দিতে হবে। আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর, মালিককে শাস্তিও দিতে পারি!” তার এই মন্তব্যে সেখানে উপস্থিত সকলেই হতবাক হয়ে যান।

এমরান হাসান সোহেল জানান, ওই বিতর্ক অনুষ্ঠানে ইউএনওকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য তিনি বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন। প্রথমে বৃহস্পতিবার তিনি ইউএনও’র অফিসে যান, কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর শনি ও রবিবারও প্রতিরোধ কমিটির সদস্যরা ইউএনও’র কার্যালয়ে যান আমন্ত্রণ জানাতে, কিন্তু তখনও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।

এই তিন দিন এমরান হাসান সোহেল ব্যক্তিগতভাবে ইউএনও’কে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি রবিবার সন্ধ্যায় ফোন করলে তিনি তা কেটে দেন। অথচ, একই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম যখন ইউএনও’কে আমন্ত্রণ জানান, তখন তিনি ঠিকই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। আর এসেই তিনি এমরান হাসান সোহেলকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১২টার দিকে বিতর্ক প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অংশ নিতে স্কুলে আসেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। সেখানে এসেই তিনি আমন্ত্রণ না জানানোর কৈফিয়ত তলব করেন এমরান হাসান সোহেলের কাছে।

জবাবে সোহেল যখন বলেন যে তিনি একাধিকবার ইউএনও’র কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাননি এবং তিন দিন ধরে ফোন করেও তার সাড়া মেলেনি, তখন ইউএনও আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন।

তিনি নাকি এমরান হাসান সোহেলকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা একটা অ্যারেজমেন্ট করতেছেন ইউএনও জানে না, আপনারা কিসের অ্যারেজমেন্ট করতেছেন, আশ্চর্য ব্যাপার! ইউএনওকে অবহিত না করে আপনাকে এ আয়োজন করার এখতিয়ার কে দিয়েছে?”

সোহেল যখন ফের বলেন যে তাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ইউএনও কমপ্লেক্সে তিন দিন যাওয়া হয়েছিল, তখন ইউএনও অদ্ভুত এক মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “উপজেলা কমপ্লেক্সে কে গেছে? কমপ্লেক্সে তো কাউয়া বক থাকে। আপনি আমার বাংলোতে গেলেন না কেন? আমার বাংলো একটা অফিস।”

এর উত্তরে এমরান হাসান সোহেল জানান, ইউএনও’র বাংলোতে সাধারণত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। জবাবে ইউএনও বলেন, “বাংলোতে যখন অ্যালাউ করবো তখন ঢুকবেন।” এখানেই শেষ নয়।

ইউএনও নাকি এমরান হাসান সোহেলকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, “আপনারা প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে মনে করছেন আপনারা রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি হয়ে গেছেন। আমি আপনার ফোন ধরতে বাধ্য না। আপনি আপনার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ফোন দিলে আমি ধরব কেন?”

পাল্টা জবাবে এমরান হাসান সোহেল বলেন, “আপনি ফোনই ধরলেন না, তাহলে ব্যক্তিগত স্বার্থ, নাকি রাষ্ট্রীয় কোন কাজ বুঝলেন কীভাবে? আপনি একজন কৃষকের ফোনও ধরতেও বাধ্য।” এরপরই ইউএনও আমিনুল ইসলাম সেই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন, “আমি প্রজাতন্ত্রের এমন চাকর মালিককে শাস্তিও দিতে পারি।” যার উত্তরে সভাপতি সোহেল বলেন, “ক্ষমতা আছে, আপনি দেন শাস্তি।”

শুধু তাই নয়, অভিযোগ উঠেছে ইউএনও আমিনুল ইসলাম খবরপত্রের আরেক সাংবাদিক এইচ বাবলুকেও তার পিয়ন দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন এবং দেখা করে ক্ষমা চাইতে চাপ দিয়েছেন।

এই বিষয়ে জানার জন্য বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরকারি নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

অন্যদিকে, জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন জানিয়েছেন, এই বিষয়ে তিনি এখনও কোনো তথ্য পাননি এবং তথ্য পেলে মন্তব্য করবেন।