মোহনগঞ্জে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের অনাস্থা

- আপডেট সময় ০১:৫০:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
- / ৪৩৩ বার পড়া হয়েছে
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শনগরের শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ২০টি অভিযোগ এনে অনাস্থা দিয়েছেন ২৬ শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারী। গত ১২ মে (সোমবার) অভিযোগপত্রটি নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের কাছে জমা দেওয়া হয়।
এছাড়া গত ২০ মে (মঙ্গলবার) শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করে কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা বর্জন ও মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মানববন্ধন করেন।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ আমিনুল হক চরম গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে দিয়ে কলেজের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আচরণ না করে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে থাকেন। শিক্ষকদের অহেতুক হয়রানি ও অশোভন আচরণ করেন। এমনকি কলেজের হিসাবপত্রেও অসঙ্গতি রয়েছে।
সম্প্রতি কলেজের একটি ব্যাটারি চুরি হয়। সেই ব্যাটারি চুরির জন্য কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক লতা চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও এ. কে এম. আজহারুল হক ভূঁঞাকে কো- অপ্ট সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি করেন। কিন্তু তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অধ্যক্ষের মন:পুত না হওয়ায় প্রভাষক লতা চৌধুরী ও প্রভাষক এ. কে এম. আজহারুল হক ভূঁঞাকে অন্যায়ভাবে শোকজ প্রদান করেন।
অভিযোগসূত্রে আরও জানা যায়, অধ্যক্ষ আমিনুল হকের বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতিরও ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। কলেজের সি সি টিভি মেরামত, শিক্ষাসফরের এন্ট্রি ফি, পহেলা বৈশাখের বিল ভাউচার, কলেজ স্টাফদের বাদ দিয়ে রমজান মাসে কলেজ ফান্ডের টাকায় ইফতারি করেছেন তিনি। এছাড়াও জেনারেল শিক্ষক ও কারিগরি শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন তৈরির অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কলেজের সিসিটিভি ভর্তুকির ৩৪ হাজার টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা করা, পিআইও অফিস থেকে প্রাপ্ত এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাত করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্রে আরও জানা যায়, অধ্যক্ষ আমিনুল হকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর যৌন হয়রানির বিষয়টি তদন্ত পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ময়মনসিংহ বোর্ডে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রীকে ফেসবুকে কুপ্রস্তাব দেন অধ্যক্ষ আমিনুল হক। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে তিনি প্রভাশালীদের দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন। মেয়েটির পরিবার অসহায় হওয়ায় কোনো বিচার পাননি।
অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন, প্রভাষক চম্পা রানী সরকার, অসীম কুমার রায়, মো. খায়রুজ্জামান, মশিউর রেজা চৌধুরী, আমিনা ইসলাম চার্মি, লতা চৌধুরী, সুমনা সরকার, মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী, এ এম মিলকীসহ ১৮ জন প্রভাষক ও আটজন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আমিনুল হক ঢাকা প্রেসকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে। তার তদন্ত চলছে। আশা করি আমি তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হব। কিন্তু তার আগেই ছাত্ররা আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে। আমার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তাই আগাম নিউজ করা ভালো না। এরই মধ্যে কয়েকটি পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে নিউজ করেছে। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলে প্রেস কনফারেন্স করব। তখন কিন্তু আপনাদের আমার পক্ষে লিখতে হবে।
শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকসানা কানিজ চৌধুরী (পলমল) ঢাকা প্রেসকে বলেন, শিক্ষক ও কর্মচারীরা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর অনাস্থা দিয়েছে বলে শুনেছি। মানববন্ধনও হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষকরা আমাকে কিছু জানাননি। তবে আমি আশা করছি বিষয়গুলো সুন্দরভাবে সমাধান হবে। অধ্যক্ষ দোষী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।