ঢাকা ০৫:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া সেই ২৪ রাজনীতিবিদ কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০৪:৫০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
  • / ২৬০ বার পড়া হয়েছে

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট, ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। দেশজুড়ে তখন চরম সহিংসতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতা।

এমন এক পরিস্থিতিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। এবার সেই গোপন তথ্য প্রকাশ করল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর, সংক্ষেপে আইএসপিআর।

তারা জানিয়েছে, সেদিন মোট ৬২৬ জন বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন ২৪ জন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব! কারা ছিলেন তারা? চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গত ৫ আগস্ট, যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন প্রাণনাশের আশঙ্কায় অনেকেই আশ্রয় খুঁজেছিলেন। আইএসপিআর বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেই সময় সাবেক স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ মোট ৬২৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।

এই ৬২৬ জনের মধ্যে ছিলেন:

  • ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
  • ৫ জন বিচারক
  • ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা
  • ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য
  • ১২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী
  • ৫১ জন পরিবার-পরিজন (স্ত্রী ও শিশু)

আইএসপিআর পরিষ্কার জানিয়েছে, সেই কঠিন সময়ে শুধুমাত্র মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষের জীবন বাঁচানো।

আইএসপিআর আরও জানিয়েছে যে, পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া বেশিরভাগ ব্যক্তি এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই নিজেদের উদ্যোগে সেখান থেকে চলে যান। তবে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলা ছিল, এমন ৫ জনকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সেনানিবাসে আশ্রয়প্রাপ্তদের বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৮ই আগস্ট একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। একই দিনে ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য বাদে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অর্থাৎ, এই বিষয়টি তখনই মীমাংসিত ছিল।

এবার জেনে নিন, সেই ২৪ জন উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদ কারা ছিলেন, যারা ৫ই আগস্টের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন:

১. জুনায়েদ আহমেদ পলক – সাবেক আইসিটি মন্ত্রী

২. সায়েদুল হক সুমন – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৩. শিরীন শারমিন চৌধুরী – সাবেক স্পিকার

৪. নাজমা আকতার – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৫. সামসুল হক টুকু – সাবেক ডেপুটি স্পিকার

৬. ছোট মনির – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৭. ইকবালুর রহিম – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৮. শাজাহান খান – সাবেক সংসদ সদস্য

৯. রাগিবুল আহসান রিপু – তৎকালীন এমপি, বগুড়া-৬

১০. এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন – তৎকালীন এমপি, বগুড়া-৪

১১. এমএ লতিফ – তৎকালীন সংসদ সদস্য

১২. কাজী নাবিল আহমেদ – সাবেক সংসদ সদস্য

১৩. তালুকদার আবদুল খালেক – তৎকালীন মেয়র, খুলনা সিটি করপোরেশন

১৪. হাবিবুন নাহার – তৎকালীন এমপি, বাগেরহাট-৪

১৫. মো. ইকরামুল হক টিটু – তৎকালীন মেয়র

১৬. মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী – তৎকালীন মেয়র, সিলেট সিটি করপোরেশন

১৭. মো. আবু জাহির – তৎকালীন এমপি, হবিগঞ্জ-৩

১৮. জিয়াউর রহমান বিপ্লব – কাউন্সিলর, বরিশাল সিটি করপোরেশন

১৯. এসএম রফিউদ্দিন আহমেদ – ওয়ার্ড কাউন্সিলর

২০. এসএম ফয়সাল আহমেদ রানা – ওয়ার্ড কাউন্সিলর

২১. শরিফ কামাল – তৎকালীন চেয়ারম্যান, মিঠামইন উপজেলা

২২. মো. মাহবুব আলম – তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান, মাদারগঞ্জ

২৩. সুজন সাত্তার – পিএস টু এমপি

২৪. জাকির হাসান – তৎকালীন এসপি, বগুড়া (যদিও প্রশাসনিক পদে ছিলেন, রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত)

নিউজটি শেয়ার করুন

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া সেই ২৪ রাজনীতিবিদ কারা?

আপডেট সময় ০৪:৫০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট, ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। দেশজুড়ে তখন চরম সহিংসতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতা।

এমন এক পরিস্থিতিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছিলেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ছিল। এবার সেই গোপন তথ্য প্রকাশ করল আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর, সংক্ষেপে আইএসপিআর।

তারা জানিয়েছে, সেদিন মোট ৬২৬ জন বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন ২৪ জন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব! কারা ছিলেন তারা? চলুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গত ৫ আগস্ট, যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন প্রাণনাশের আশঙ্কায় অনেকেই আশ্রয় খুঁজেছিলেন। আইএসপিআর বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সেই সময় সাবেক স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ মোট ৬২৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।

এই ৬২৬ জনের মধ্যে ছিলেন:

  • ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
  • ৫ জন বিচারক
  • ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা
  • ৫১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য
  • ১২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী
  • ৫১ জন পরিবার-পরিজন (স্ত্রী ও শিশু)

আইএসপিআর পরিষ্কার জানিয়েছে, সেই কঠিন সময়ে শুধুমাত্র মানবিক দায়বদ্ধতা থেকেই এই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল আইন বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঝুঁকিতে থাকা এসব মানুষের জীবন বাঁচানো।

আইএসপিআর আরও জানিয়েছে যে, পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া বেশিরভাগ ব্যক্তি এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই নিজেদের উদ্যোগে সেখান থেকে চলে যান। তবে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও মামলা ছিল, এমন ৫ জনকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সেনানিবাসে আশ্রয়প্রাপ্তদের বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৮ই আগস্ট একটি আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। একই দিনে ১৯৩ জন ব্যক্তির একটি তালিকা (৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্য বাদে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। অর্থাৎ, এই বিষয়টি তখনই মীমাংসিত ছিল।

এবার জেনে নিন, সেই ২৪ জন উল্লেখযোগ্য রাজনীতিবিদ কারা ছিলেন, যারা ৫ই আগস্টের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন:

১. জুনায়েদ আহমেদ পলক – সাবেক আইসিটি মন্ত্রী

২. সায়েদুল হক সুমন – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৩. শিরীন শারমিন চৌধুরী – সাবেক স্পিকার

৪. নাজমা আকতার – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৫. সামসুল হক টুকু – সাবেক ডেপুটি স্পিকার

৬. ছোট মনির – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৭. ইকবালুর রহিম – তৎকালীন সংসদ সদস্য

৮. শাজাহান খান – সাবেক সংসদ সদস্য

৯. রাগিবুল আহসান রিপু – তৎকালীন এমপি, বগুড়া-৬

১০. এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন – তৎকালীন এমপি, বগুড়া-৪

১১. এমএ লতিফ – তৎকালীন সংসদ সদস্য

১২. কাজী নাবিল আহমেদ – সাবেক সংসদ সদস্য

১৩. তালুকদার আবদুল খালেক – তৎকালীন মেয়র, খুলনা সিটি করপোরেশন

১৪. হাবিবুন নাহার – তৎকালীন এমপি, বাগেরহাট-৪

১৫. মো. ইকরামুল হক টিটু – তৎকালীন মেয়র

১৬. মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী – তৎকালীন মেয়র, সিলেট সিটি করপোরেশন

১৭. মো. আবু জাহির – তৎকালীন এমপি, হবিগঞ্জ-৩

১৮. জিয়াউর রহমান বিপ্লব – কাউন্সিলর, বরিশাল সিটি করপোরেশন

১৯. এসএম রফিউদ্দিন আহমেদ – ওয়ার্ড কাউন্সিলর

২০. এসএম ফয়সাল আহমেদ রানা – ওয়ার্ড কাউন্সিলর

২১. শরিফ কামাল – তৎকালীন চেয়ারম্যান, মিঠামইন উপজেলা

২২. মো. মাহবুব আলম – তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান, মাদারগঞ্জ

২৩. সুজন সাত্তার – পিএস টু এমপি

২৪. জাকির হাসান – তৎকালীন এসপি, বগুড়া (যদিও প্রশাসনিক পদে ছিলেন, রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট হিসেবে তালিকাভুক্ত)