তিন দলের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যেসব বিষয়ে আলোচনা হলো

- আপডেট সময় ১১:০৪:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / ২৫৪ বার পড়া হয়েছে
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শনিবার (২৪ মে) বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেছে।
বিএনপি নিয়মিতই রাজপথে কর্মসূচি রাখছে। একই সঙ্গে দলটি সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত না রাখারও ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়েই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে করলেন তারা।
বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ বৈঠক শেষে জানান, তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছেন। একই সঙ্গে সরকারকে নিরপেক্ষ অবস্থানে গিয়ে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংস্কার, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারসহ বেশ কিছু ইস্যুতে আলোচনার কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এর পাশাপাশি নির্বাচনের সময় স্পষ্টকরণের ওপরও বৈঠকে তাগিদ দিয়েছে তারা।
বৈঠক শেষে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যে প্রেক্ষাপটে পদ ছাড়তে চেয়েছেন আমরা তাকে সে অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছি।
এদিকে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছে এনসিপি। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশনের ওপর তাদের আস্থা নেই। নির্বাচনের পরিবেশ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে যেন সেটা তৈরি করা হয়।
সম্প্রতি নির্বাচনের রোডম্যাপসহ বেশ কিছু ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে থাকে বিএনপির। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের শপথকে কেন্দ্র করে রাস্তা আটকে আন্দোলন শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর একটি করিডোর কিংবা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনায় বিদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া প্রসঙ্গেও বিএনপির পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের কথা ভাবছিলেন বলে খবর সামনে আসে।
শনিবার একনেকের বৈঠক শেষে উপদেষ্টা পরিষদের একটি অনির্ধারিত বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না। এ সময় অযৌক্তিক দাবি দাওয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এখতিয়ারবহির্ভূত বক্তব্য এবং কর্মসূচি দিয়ে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে তোলা এবং জনমনে সংশয় ও সন্দেহ সৃষ্টি করা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পরে রাতে তিন দলের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবগুলো দল প্রধান উপদেষ্টাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে।
বিএনপি চায় নির্বাচনের রোডম্যাপ
ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে প্রথমেই কথা বলেন বিএনপি প্রতিনিধি দলের প্রধান খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি নেতাদের সাক্ষাতের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু আলোচনার বিষয়বস্তু আমাদের আগে জানানো হয়নি।
তিনি জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি যা ‘আন্দাজ’ করতে পেরেছিল, তার ওপর ভিত্তি করেই তারা একটি লিখিত বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেন এবং সেটির ভিত্তিতেই আলোচনা হয়।
ওই লিখিত বক্তব্যের সারাংশ সাংবাদিকদের পড়ে শোনান খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে। এছাড়া তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য দাবি জানিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিকভাবে কিংবা পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই, আওয়ামী লীগের বিচার সবচেয়ে বেশি দাবি করে বিএনপি। সুতরাং, বিএনপি যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে বিচারকাজ সম্পন্ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দলটি। তাদের মতে, এই সরকারের মূল দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যতো বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হবে। এর দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে।
এরপর তিনি লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী বলেন, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং, প্রথমদিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে।
এরপর তারা সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের আশ্বাস পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্পেসিফিক কোনো কথা হয় নাই। উনি স্পেসিফিক জানান নাই। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট কি না- জানতে চাইলে এই নেতা বলেন, এখনই প্রতিক্রিয়া জানানোর দরকার নাই। ওনাদের প্রেস সেকশন কী বলে- তারপর আমরা প্রতিক্রিয়া জানাব।
এর আগে খন্দকার মোশাররফ হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, আলোচনার মাঝে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এসেছে। আমরা বলেছি, একটির সঙ্গে আরেকটির কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ সংস্কার চলমান বিষয়। এটা চলতে থাকবে। আমরা আশা করেছি, এই সরকার সবার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা সংস্কার প্রস্তাব দেবে, যা চলমান থাকবে। ভবিষ্যতে যদি জনগণ আমাদের ক্ষমতায় বসায়, আমরা সেই সংস্কার বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
দৃশ্যমান সংস্কার ও বিচার চায় জামায়াত
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পরপরই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখান থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা জানিয়েছি, দুইটা বিষয় স্পষ্ট হওয়া দরকার। নির্বাচনটা কখন হবে? আপনি যে সময়সীমা (ড. ইউনূস) দিয়েছেন, এর ভেতরে জনগণের কোনো বড় ধরনের ভোগান্তি না হয়ে একটা সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচন হওয়া উচিত। আর দুই নম্বর হলো, নির্বাচনের আগে সংস্কার ও দৃশ্যমান বিচারের কিছু প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কার শেষ না করেই যদি নির্বাচন হয়, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। আবার সব সংস্কার এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভবও না।
বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন বা বিচার নিয়ে কোনো সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা কোনো সময় বেঁধে দেইনি। আমরা কমফোর্টেবল দুইটা টাইম জাতিকে জানিয়েছি। যদি সংস্কার শেষ হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে এটা (নির্বাচন) হতে পারে। আর যদি আরেকটু সময় লাগে, তাহলে রোজার পরপর হতে হবে। কিন্তু, এটাকে টেনে লম্বা করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না।
জামায়াতের দুই দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কী বলেছেন, জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং আমাদের আস্থা হয়েছে যে তিনি বিষয়টাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন।
এ সময়, বিএনপি যে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছে, সে বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা।
এর উত্তরে তিনি বলেন, পদত্যাগ চাইলো বিএনপি, আর ফতোয়া দেবে জামায়াতে ইসলামী। এটা কি মানায়? যারা পদত্যাগ চেয়েছে, তারাই ব্যাখ্যা করবে। আমরা কারও কোনো পদত্যাগ চাইনি।
এই বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীকে সরকারের ডাকার কারণ জানতে চাইলে জামায়াত আমির বলেন, আমাদের ব্যাপার আর বিএনপির ব্যাপার এক না। একটু পার্থক্য আছে। আমরা কিন্তু নিজেরাই চেয়েছি। টাইমটা ফিক্স-আপ হয়েছে। দাওয়াত আমরা পেয়েছি, কিন্তু এর আগে আমরাই চেয়েছি এবং আমাদের চাওয়ার প্রেক্ষিতেই শনিবার (২৪ মে) সন্ধ্যা ছয়টায় সময় নির্ধারিত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের অন্য একটি দলীয় কর্মসূচির কারণে আমরা চেয়েছিলাম, তাই আমাদের সময় আরও দুই ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, উনি শুধু এটুকুই বলেছেন, দেশ আমাদের সবার। আমি (ড. ইউনূস) অবশ্যই একটি অর্থবহ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন দিতে চাই। আমি যেনতেন কোনো নির্বাচন দিতে চাই না।
বৈঠক নিয়ে যা জানালো এনসিপি
শনিবার বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ৩০ দিনের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যেন জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হয়, সে বিষয়ে আমরা আহ্বান জানিয়েছি। সরকারের ও ড. ইউনূস স্যারের পক্ষ থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীর গতিতে আগাচ্ছে। যে সঞ্চয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল, তা এখনও অনেক শহীদ পরিবার পায়নি। মাসিক ভাতাও শুরু হয়নি। আমরা বলেছি যে, আর্থিক সহায়তাসহ পুনর্বাসনের যে প্রতিশ্রুতি, তা যেন নিশ্চিত করা যায়।
নাহিদ ইসলামের কাছে বিএনপির তরফ থেকে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। সে সময় তিনি বলেন, স্পষ্টভাবে বলেছি, ছাত্র উপদেষ্টাদের সঙ্গে এনসিপির সম্পর্ক নেই। ছাত্র উপদেষ্টারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে গিয়েছেন, সরকারকে বৈধতা দিয়েছেন। ফলে তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দলের বা এনসিপির সম্পর্ক নাই। আজ সকালেও তা পরিষ্কার করেছি। বরং, গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি আকারে তারা গিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করছেন। সেখানে তাদের হেয় করা, অপমান করা এসব বিষয়ে আমরা নিন্দা জানিয়েছি। আমাদের সঙ্গে তাদের জড়িয়ে, ট্যাগ দিয়ে পদত্যাগ করতে বলাটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক।
প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনার বিষয়ে এনসিপির অবস্থান কী এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বলেছি উনি যাতে দায়িত্বে থাকেন। দায়িত্বে থেকে আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষের সমস্যা সমাধান করেন। কোনো রাজনৈতিক দল নয়, জনগণ ও গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতা, তাদের আহ্বানেই তিনি দায়িত্বে এসেছিলেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্যই তিনি কমিটেড। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি উনি কমিটেড না। উনি যেন এ বিষয়টা যে কোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করেন।
সরকার কেন এনসিপিকে ডেকেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে। এই পরিস্থিতিতে উনি কাজ করতে পারছেন না। উনি দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন কি না- এ বিষয়ে ওনার চিন্তাভাবনা রয়েছে। তার প্রেক্ষিতেই ওনার সঙ্গে আজকের এই বৈঠক।
নাহিদ ইসলাম জানান, ড. ইউনূস হতাশা ব্যক্ত করেছেন। কারণ যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে উনি দায়িত্বে এসেছেন সেসময় আমরা ওনাকে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য আহ্বান করেছিলাম। সবাই জনগণের কাছে নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছি। সেই প্রতিশ্রুতি থেকে কোনো কোনো পক্ষ সরে আসছে বলে মনে করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওনাকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন দাবি আদায়ের চেষ্টা চলছে। এর ফলে এভাবে ওনার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয় এবং সংস্কার বা পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। সেই জায়গা থেকে উনি হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, এনসিপির তরফ থেকে বলা হয়েছে, মুহাম্মদ ইউনূস যেন কোনো রাজনৈতিক দল নয়, গণঅভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার প্রতি কমিটেড থাকেন।
জুন ৩০ কাট-অফ টাইম: প্রেস সচিব
তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বৈঠকের আলোচনা ও সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, তারা (রাজনৈতিক দলগুলো) বলেছে, তার (ড. ইউনূসের) নেতৃত্বে তাদের আস্থা আছে। তারা পদত্যাগের বিষয়ে তাকে অনুরোধ করেছেন। ওনার নেতৃত্বেই যেন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হয়। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকশন চেয়েছে। জামায়াত মনে করে, সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করতে ডিসেম্বর লেগে যাবে। জামায়াত তার টাইমলাইনকে সমর্থন জানিয়েছে। এনসিপিও একই।
প্রেস সচিব আরও বলেন, নির্বাচন ২০২৬ এর জুনের ৩০ তারিখের মধ্যেই হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিকে জানিয়েছেন। ড. ইউনূস বিএনপির মিটিংয়ে বলেছেন, জুনের ৩০ তারিখ কাট-অফ টাইম। জুনের ওই পাড়ে যাবে না। উনি এককথার মানুষ। উনি যে কথাটা বলেন, সে কথাটা রাখেন।
নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে এনসিপি ও জামায়াত মনে করে যে, এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশনের যে পরিবেশ দরকার, সেই পরিবেশ নাই। এমন কথা জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, তাদের দাবি কোনো লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড নাই। তারা জোর দিয়েছে, যাতে ইলেকশন কমিশনের সংস্কারের মাধ্যমে লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড এনশিওর করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এ মাসেই জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচার শুরু হবে। পার্টিগুলো তাকে অনুরোধ করেছেন, যেন দ্রুত হয়।
আজকের বৈঠকের পর দেশের রাজনৈতিক সংকট কাটবে কি না- জিজ্ঞেস করলে শফিকুল আলম বলেন, এটা সংকটের কী হলো আমরা জানি না। আজ খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশের তিনটি নেতৃস্থানীয় পার্টির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার মিটিং হয়েছে। এনসিপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন চেয়েছে। তারা মনে করে, এটা হওয়া উচিত। অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশে নির্বাচন হচ্ছে না। তারা খুব জোর দিয়েছে, যাতে দ্রুত এটা শুরু হয়। সেই সঙ্গে তারা পুরো আওয়ামী লীগ আমলে যতো নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটিকে অবৈধ ঘোষণা করার অনুরোধ করেছে। তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি (প্রধান উপদেষ্টা) এটা শুনেছেন।
উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপি তাদের কথা বলেছে, আমরা শুনেছি।
সূত্র: বিবিসি বাংলা