ঢাকা ১১:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্র এশীয় অভিবাসীদের দক্ষিণ সুদানে নির্বাসনের চেষ্টা করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ০২:২৪:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / ২৫২ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের নির্বাসনের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের বিতর্কিত প্রচেষ্টা দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক সংকট আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত ২১ মে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক জানান, দক্ষিণ সুদানে অভিবাসী পাঠানো আদালতের পূর্ববর্তী আদেশ লঙ্ঘন করেছে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে তৃতীয় দেশে নির্বাসন দেওয়ার আগে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আটজন অভিবাসীকে দক্ষিণ সুদানে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। তাদের মধ্যে দক্ষিণ সুদান ছাড়াও কিউবা, লাওস, মেক্সিকো, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নাগরিক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত।

তবে দক্ষিণ সুদানের পুলিশ মুখপাত্র মেজর জেনারেল জেমস এনোকা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিবাসী দেশটিতে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, যদি কেউ এসে থাকে, তাহলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। তারা দক্ষিণ সুদানের নাগরিক না হলে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

২০১১ সালে স্বাধীনতা অর্জনকারী বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দেশ দক্ষিণ সুদান। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের কবলে পড়ে। প্রায় এক কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই চরম দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাস করে।

দরিদ্র হলেও দক্ষিণ সুদানে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ (তেল) রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল হলেও অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এই খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি অর্জিত হয়নি। বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামোর অভাব এখনও দেশের বেশিরভাগ এলাকায় প্রকট।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক থেকেও দক্ষিণ সুদান অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর দেশটিতে ভয়াবহ বন্যায় তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

এমন এক প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের মার্চে দেশটির সরকার বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশারকে গৃহবন্দী করে। তার বিরুদ্ধে সমর্থকদের উসকানি দিয়ে বিদ্রোহের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

মার্চের শুরুর দিকে মাশার-সমর্থিত ‘হোয়াইট আর্মি’ কমিউনিটি মিলিশিয়া নাসির কাউন্টিতে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে একটি ঘাঁটি দখল করে নেয়। মিলিশিয়ার দাবি, এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ। তবে পাল্টা অভিযানে সরকার বোমা হামলা চালায় ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে।

রিয়েক মাশারের দল এসপিএলএম-আইও দাবি করেছে, মাশারকে গৃহবন্দি করার মধ্য দিয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ অবসানে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি কার্যত ভেঙে গেছে। ওই গৃহযুদ্ধে মাশার-সমর্থিত নুয়্যার যোদ্ধা ও প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের ডিনকা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় চার লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।

চলতি বছর নতুন করে তৈরি হওয়া উত্তেজনায় শান্তিচুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ এরই মধ্যে দক্ষিণ সুদানে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায় সতর্ক করে দিয়েছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট কির গত মঙ্গলবার (২০ মে) তার দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন বোল মেলকে এসপিএলএমের উপ-সভাপতি পদে উন্নীত করেন। তাকে কিরের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কির পদত্যাগ করলে তিনি অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।

এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের, এমনকি কঙ্গোর এক নাগরিককে দক্ষিণ সুদানের নাগরিক বলে দেশটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলো নিয়ে দক্ষিণ সুদান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনার চলছে।

সূত্র: ইউএনবি

নিউজটি শেয়ার করুন

যুক্তরাষ্ট্র এশীয় অভিবাসীদের দক্ষিণ সুদানে নির্বাসনের চেষ্টা করছে

আপডেট সময় ০২:২৪:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের নির্বাসনের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের বিতর্কিত প্রচেষ্টা দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক সংকট আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গত ২১ মে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক জানান, দক্ষিণ সুদানে অভিবাসী পাঠানো আদালতের পূর্ববর্তী আদেশ লঙ্ঘন করেছে। ওই আদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে তৃতীয় দেশে নির্বাসন দেওয়ার আগে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবর অনুযায়ী, মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আটজন অভিবাসীকে দক্ষিণ সুদানে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। তাদের মধ্যে দক্ষিণ সুদান ছাড়াও কিউবা, লাওস, মেক্সিকো, মিয়ানমার ও ভিয়েতনামের নাগরিক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ড, ডাকাতি ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত।

তবে দক্ষিণ সুদানের পুলিশ মুখপাত্র মেজর জেনারেল জেমস এনোকা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিবাসী দেশটিতে পৌঁছায়নি। তিনি বলেন, যদি কেউ এসে থাকে, তাহলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। তারা দক্ষিণ সুদানের নাগরিক না হলে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

২০১১ সালে স্বাধীনতা অর্জনকারী বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দেশ দক্ষিণ সুদান। স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক সংকট, অর্থনৈতিক দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের কবলে পড়ে। প্রায় এক কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই চরম দারিদ্র্যসীমার মধ্যে বসবাস করে।

দরিদ্র হলেও দক্ষিণ সুদানে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ (তেল) রয়েছে। দেশটির অর্থনীতি তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল হলেও অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এই খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি অর্জিত হয়নি। বিদ্যুৎ, পাকা রাস্তা ও অন্যান্য অবকাঠামোর অভাব এখনও দেশের বেশিরভাগ এলাকায় প্রকট।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক থেকেও দক্ষিণ সুদান অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর দেশটিতে ভয়াবহ বন্যায় তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

এমন এক প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের মার্চে দেশটির সরকার বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাশারকে গৃহবন্দী করে। তার বিরুদ্ধে সমর্থকদের উসকানি দিয়ে বিদ্রোহের চেষ্টা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

মার্চের শুরুর দিকে মাশার-সমর্থিত ‘হোয়াইট আর্মি’ কমিউনিটি মিলিশিয়া নাসির কাউন্টিতে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে একটি ঘাঁটি দখল করে নেয়। মিলিশিয়ার দাবি, এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ। তবে পাল্টা অভিযানে সরকার বোমা হামলা চালায় ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে।

রিয়েক মাশারের দল এসপিএলএম-আইও দাবি করেছে, মাশারকে গৃহবন্দি করার মধ্য দিয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ অবসানে স্বাক্ষরিত শান্তিচুক্তি কার্যত ভেঙে গেছে। ওই গৃহযুদ্ধে মাশার-সমর্থিত নুয়্যার যোদ্ধা ও প্রেসিডেন্ট সালভা কিরের ডিনকা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় চার লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।

চলতি বছর নতুন করে তৈরি হওয়া উত্তেজনায় শান্তিচুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘ এরই মধ্যে দক্ষিণ সুদানে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায় সতর্ক করে দিয়েছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট কির গত মঙ্গলবার (২০ মে) তার দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন বোল মেলকে এসপিএলএমের উপ-সভাপতি পদে উন্নীত করেন। তাকে কিরের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছে। কির পদত্যাগ করলে তিনি অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।

এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের, এমনকি কঙ্গোর এক নাগরিককে দক্ষিণ সুদানের নাগরিক বলে দেশটিতে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাগুলো নিয়ে দক্ষিণ সুদান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরেই উত্তেজনার চলছে।

সূত্র: ইউএনবি