ঢাকা ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫

নানামুখী চাপে অন্তর্বর্তী সরকার – রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
  • আপডেট সময় ১২:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নানামুখী চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। দেশজুড়ে চলমান অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই সরকারের একটি নতুন অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে সরকারি কর্মচারীদের বিক্ষোভের সাথে যোগ দিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

গত আগস্ট মাসে, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই থেকে তাঁর প্রশাসন দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন সংস্কারের চেষ্টা করছে।

কিন্তু এই পথে ড. ইউনূস প্রশাসনকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। বেসামরিক কর্মচারী, শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং এমনকি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকেও আসছে প্রবল চাপ।

সাম্প্রতিক অস্থিরতার সূত্রপাত হয় রবিবার, যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই অসদাচরণের জন্য সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই, এই অধ্যাদেশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

সোমবার, এই ‘দমনমূলক’ অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। অন্যদিকে, বেতন বাড়ানোর দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন।

এর আগে, গত রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে রাজস্ব সংস্থা ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ স্থাপনের আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।

এই চাপ শুধু সরকারি কর্মচারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। গত সপ্তাহে শীর্ষস্থানীয় এক ছাত্রনেতা ইঙ্গিত দেন যে, সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারলে অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও তীব্র হয়।

তবে এরপরই ইউনূস সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান যে, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না। শনিবার তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, “আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোথাও যাচ্ছি না।” তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস প্রতিবন্ধকতাগুলো স্বীকার করেছেন, তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অন্তর্বর্তী সরকার এখন দুই পক্ষের দাবির মুখে পড়েছে: একদিকে দ্রুত সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা, অন্যদিকে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা। ড. ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

এর মধ্যেই, গত সপ্তাহে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক ভাষণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং জানান যে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত। তার এই মন্তব্য চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একই দিনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্র নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে আছি।” তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর বিভিন্নভাবে তাদের অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন চলতি মাসেই স্থগিত করা হয়েছে, ফলে দলটি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

নানামুখী চাপে অন্তর্বর্তী সরকার – রয়টার্স

আপডেট সময় ১২:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, নানামুখী চাপে রয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। দেশজুড়ে চলমান অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই সরকারের একটি নতুন অধ্যাদেশকে কেন্দ্র করে সরকারি কর্মচারীদের বিক্ষোভের সাথে যোগ দিয়েছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

গত আগস্ট মাসে, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হলে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৭ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটির অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই থেকে তাঁর প্রশাসন দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন সংস্কারের চেষ্টা করছে।

কিন্তু এই পথে ড. ইউনূস প্রশাসনকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। বেসামরিক কর্মচারী, শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং এমনকি সামরিক বাহিনীর কাছ থেকেও আসছে প্রবল চাপ।

সাম্প্রতিক অস্থিরতার সূত্রপাত হয় রবিবার, যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছাড়াই অসদাচরণের জন্য সরকারি কর্মচারীদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই, এই অধ্যাদেশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে।

সোমবার, এই ‘দমনমূলক’ অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। অন্যদিকে, বেতন বাড়ানোর দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন।

এর আগে, গত রবিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে রাজস্ব সংস্থা ভেঙে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি বিভাগ স্থাপনের আদেশ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়।

এই চাপ শুধু সরকারি কর্মচারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। গত সপ্তাহে শীর্ষস্থানীয় এক ছাত্রনেতা ইঙ্গিত দেন যে, সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারলে অধ্যাপক ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন। এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও তীব্র হয়।

তবে এরপরই ইউনূস সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান যে, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না। শনিবার তিনি দৃঢ়ভাবে বলেছেন, “আমাদের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোথাও যাচ্ছি না।” তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক ইউনূস প্রতিবন্ধকতাগুলো স্বীকার করেছেন, তবে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

অন্তর্বর্তী সরকার এখন দুই পক্ষের দাবির মুখে পড়েছে: একদিকে দ্রুত সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করা, অন্যদিকে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা। ড. ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজন করার জন্য চাপ দিচ্ছে।

এর মধ্যেই, গত সপ্তাহে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক ভাষণে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং জানান যে, ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া উচিত। তার এই মন্তব্য চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। একই দিনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্র নেতৃত্বাধীন জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে আছি।” তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর বিভিন্নভাবে তাদের অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন চলতি মাসেই স্থগিত করা হয়েছে, ফলে দলটি পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।