ঢাকা ০৩:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

    বেনাপোল সীমান্তে ভয়ংকর দালালচক্রের ফাঁদ, সতর্ক না থাকলে সর্বস্ব হারাতে পারেন

    মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
    • আপডেট সময় ০২:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
    • / ২৯৯ বার পড়া হয়েছে

    ভারতে চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন। কিন্তু সীমান্ত পার হওয়ার আগেই অনেকে পড়ছেন ভয়ংকর এক দালাল ও প্রতারকচক্রের হাতে। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এক সংঘবদ্ধ চক্র, যারা চিকিৎসার আশায় যাওয়া সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে।

    বেনাপোল বর্ডারে পা রাখলেই ঘিরে ফেলে দালাল চক্র
    যাত্রী যখন বাস থেকে নামেন, তখনই শুরু হয় প্রতারণার আয়োজন। কিছু লোক ছদ্মবেশে এগিয়ে আসে সহানুভূতির ছায়ায়। ভাই আমরা সাহায্য করি কিছু নিব না, সামান্য সার্ভিস চার্জেই সব করে দিচ্ছি—এমন সব মিষ্টি কথায় যাত্রীদের মন গলিয়ে নেয় তারা। এরপর ফরম পূরণ, ট্রাভেল ট্যাক্স টিকিট কাটা, এমনকি পাসপোর্ট জমা নেওয়ার নাম করে নিয়ে যায় নির্জন এক ঘরে। সেই ঘরে ঘটে ভয়াবহ কাহিনী। অনেক সময় তিন থেকে চারজন মিলে যাত্রীর টাকা গুনার নাম করে তা থেকে বিশাল অঙ্ক ‘হারিয়ে’ ফেলে দেয়। এক লক্ষ টাকা থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়! অনেক যাত্রীকে টাকা গুনে দেখার সুযোগও দেওয়া হয় না। এরপর শুরু হয় ভয়ভীতি দেখানো—“বর্ডার পার হতে হলে আমাদের লোক ছাড়া পারবেন না।

    ভারতীয় সীমান্তে হরিদাসপুরেও একই রকম প্রতারণা চক্র
    বাংলাদেশ পেরিয়ে ভারতের হরিদাসপুরে ঢুকলেই যেন পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি! বর্ডার পার হওয়ার পর শত শত দালাল লাগেজ ধরে টানাটানি শুরু করে। “রেট ভালো দিব”, “আমাদের মানি এক্সচেঞ্জে নিন”—এমন অফারে ঠকিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
    কিছু দালাল পাসপোর্ট গায়েব করে দেওয়ার মতো ভয়ংকর অপরাধেও জড়িত। একজন নারী যাত্রীর অভিজ্ঞতা রীতিমতো হৃদয়বিদারক। তার ব্যাগে ছিল ২৫ হাজার টাকা ও একটি পাসপোর্ট। ভুলবশত এক মানি এক্সচেঞ্জ দোকানে ব্যাগ ফেলে যান। ফিরে এসে দোকানদার অস্বীকার করে বসে এবং পরে বলে, “১৫ হাজার টাকা দিলে পাসপোর্ট খুঁজে দেব।” বাধ্য হয়ে ওই নারী সেই টাকা জোগাড় করে পাসপোর্ট পেলেও, টাকার কোনো হদিস পাননি।

    সতর্ক হোন! এই নিয়মগুলো মেনে চলুন:
    ✅ ট্রাভেল ট্যাক্স নিজে কেটেই নিন — বেনাপোল বর্ডারে ভিড় থাকে না, কাজও সহজ।
    ✅ কোনোভাবেই অপরিচিত কাউকে টাকা, পাসপোর্ট, ব্যাগ ইত্যাদি দেবেন না।
    ✅ বাংলাদেশ এবং ভারত দুইপাশেই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ — তাই দালালের প্রয়োজন নেই।
    ✅ টাকা এক্সচেঞ্জ করতে চাইলে বর্ডারের ভেতরের অথোরাইজড মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করুন।
    ✅ হরিদাসপুরে ‘প্রীতি এন্টারপ্রাইজ’ সহ কিছু বিশ্বস্ত মানি এক্সচেঞ্জ দোকান রয়েছে — যাচাই করে তবেই লেনদেন করুন।

    নিষিদ্ধ হোক দালাল চক্র! চাই প্রশাসনের নজরদারি
    এই দুটি সীমান্তে অন্তত শত শত সক্রিয়ভাবে প্রতারণার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই প্রয়োজন বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কঠোর তদারকি। দালালদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সীমান্তে নিরাপদ যাত্রার জন্য সচেতন হোন — আপনার নিরাপত্তা, আপনার হাতে।

    আপনি যদি এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ, ছবি বা ভিডিও প্রমাণ দিতে চান আমাদের হটলাইন/ইমেইলে যোগাযোগ করুন। আপনার পরিচয় গোপন রাখা হবে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    বেনাপোল সীমান্তে ভয়ংকর দালালচক্রের ফাঁদ, সতর্ক না থাকলে সর্বস্ব হারাতে পারেন

    আপডেট সময় ০২:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

    ভারতে চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ বেনাপোল সীমান্ত হয়ে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছেন। কিন্তু সীমান্ত পার হওয়ার আগেই অনেকে পড়ছেন ভয়ংকর এক দালাল ও প্রতারকচক্রের হাতে। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে এক সংঘবদ্ধ চক্র, যারা চিকিৎসার আশায় যাওয়া সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে।

    বেনাপোল বর্ডারে পা রাখলেই ঘিরে ফেলে দালাল চক্র
    যাত্রী যখন বাস থেকে নামেন, তখনই শুরু হয় প্রতারণার আয়োজন। কিছু লোক ছদ্মবেশে এগিয়ে আসে সহানুভূতির ছায়ায়। ভাই আমরা সাহায্য করি কিছু নিব না, সামান্য সার্ভিস চার্জেই সব করে দিচ্ছি—এমন সব মিষ্টি কথায় যাত্রীদের মন গলিয়ে নেয় তারা। এরপর ফরম পূরণ, ট্রাভেল ট্যাক্স টিকিট কাটা, এমনকি পাসপোর্ট জমা নেওয়ার নাম করে নিয়ে যায় নির্জন এক ঘরে। সেই ঘরে ঘটে ভয়াবহ কাহিনী। অনেক সময় তিন থেকে চারজন মিলে যাত্রীর টাকা গুনার নাম করে তা থেকে বিশাল অঙ্ক ‘হারিয়ে’ ফেলে দেয়। এক লক্ষ টাকা থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা মুহূর্তে উধাও হয়ে যায়! অনেক যাত্রীকে টাকা গুনে দেখার সুযোগও দেওয়া হয় না। এরপর শুরু হয় ভয়ভীতি দেখানো—“বর্ডার পার হতে হলে আমাদের লোক ছাড়া পারবেন না।

    ভারতীয় সীমান্তে হরিদাসপুরেও একই রকম প্রতারণা চক্র
    বাংলাদেশ পেরিয়ে ভারতের হরিদাসপুরে ঢুকলেই যেন পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি! বর্ডার পার হওয়ার পর শত শত দালাল লাগেজ ধরে টানাটানি শুরু করে। “রেট ভালো দিব”, “আমাদের মানি এক্সচেঞ্জে নিন”—এমন অফারে ঠকিয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
    কিছু দালাল পাসপোর্ট গায়েব করে দেওয়ার মতো ভয়ংকর অপরাধেও জড়িত। একজন নারী যাত্রীর অভিজ্ঞতা রীতিমতো হৃদয়বিদারক। তার ব্যাগে ছিল ২৫ হাজার টাকা ও একটি পাসপোর্ট। ভুলবশত এক মানি এক্সচেঞ্জ দোকানে ব্যাগ ফেলে যান। ফিরে এসে দোকানদার অস্বীকার করে বসে এবং পরে বলে, “১৫ হাজার টাকা দিলে পাসপোর্ট খুঁজে দেব।” বাধ্য হয়ে ওই নারী সেই টাকা জোগাড় করে পাসপোর্ট পেলেও, টাকার কোনো হদিস পাননি।

    সতর্ক হোন! এই নিয়মগুলো মেনে চলুন:
    ✅ ট্রাভেল ট্যাক্স নিজে কেটেই নিন — বেনাপোল বর্ডারে ভিড় থাকে না, কাজও সহজ।
    ✅ কোনোভাবেই অপরিচিত কাউকে টাকা, পাসপোর্ট, ব্যাগ ইত্যাদি দেবেন না।
    ✅ বাংলাদেশ এবং ভারত দুইপাশেই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ — তাই দালালের প্রয়োজন নেই।
    ✅ টাকা এক্সচেঞ্জ করতে চাইলে বর্ডারের ভেতরের অথোরাইজড মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করুন।
    ✅ হরিদাসপুরে ‘প্রীতি এন্টারপ্রাইজ’ সহ কিছু বিশ্বস্ত মানি এক্সচেঞ্জ দোকান রয়েছে — যাচাই করে তবেই লেনদেন করুন।

    নিষিদ্ধ হোক দালাল চক্র! চাই প্রশাসনের নজরদারি
    এই দুটি সীমান্তে অন্তত শত শত সক্রিয়ভাবে প্রতারণার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই প্রয়োজন বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কঠোর তদারকি। দালালদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সীমান্তে নিরাপদ যাত্রার জন্য সচেতন হোন — আপনার নিরাপত্তা, আপনার হাতে।

    আপনি যদি এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ, ছবি বা ভিডিও প্রমাণ দিতে চান আমাদের হটলাইন/ইমেইলে যোগাযোগ করুন। আপনার পরিচয় গোপন রাখা হবে।