ঢাকা ০৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

    ঈদের আনন্দে মুখরিত তাজহাট জমিদার বাড়ি

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৩:২০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
    • / ৩২১ বার পড়া হয়েছে

    ঈদের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে সারা দেশকে। আর এই খুশির আমেজে মুখরিত হয়ে উঠেছে রংপুর বিভাগের ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনগুলো। ঈদকে সামনে রেখে এসব স্থানে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, যা এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

    প্রতি বছর রংপুর এবং দিনাজপুর জেলার তাজহাট জমিদার বাড়ি ও কান্তজীউ মন্দিরে প্রায় ২০ লাখের বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটে, যা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো রংপুর নগরীর তাজহাট জমিদার বাড়ি।

    রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি ১৯৯৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০০২ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। ১৬.৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘর ‘রংপুর জাদুঘর’ নামে পরিচিত। এখানে তিন শতাধিক মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে, যা দেখতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করেন।

    এই জমিদার বাড়ির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, মান্নালাল রায় নামের পাঞ্জাবের এক স্বর্ণকার এই জমিদারির গোড়াপত্তন করেন। স্বর্ণখচিত টুপি বা তাজ তৈরির জন্যই এই অঞ্চলের নাম হয় তাজহাট। ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত হলেও মান্নালালের শিখ ধর্মের প্রতি অনুরাগ ছিল।

    মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে শিখদের সংঘাতের সময় তিনি পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে রংপুরের মাহিগঞ্জে এসে বসতি স্থাপন করেন। এখানেই তিনি হীরা-মনি-মুক্তা খচিত তাজ বিক্রি করতেন এবং ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের জমিদারি। রংপুর শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুনরায় নির্মাণ করা হয়।
    প্রায় ৫৬ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই কমপ্লেক্সের মূল আকর্ষণ হলো পূর্বমুখী দোতলা জমিদার বাড়িটি, যার সামনের দিক প্রায় ৭৭ মিটার দীর্ঘ। বাড়ির সামনে রয়েছে এক বিশাল দরদালান, যেখানে ওঠার জন্য রয়েছে শ্বেতপাথরে আবৃত নজরকাড়া সিঁড়ি।

    ছাদের মূল অংশে আটটি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে রেনেসাঁ গম্বুজ, যা আংশিকভাবে সরু পিলারের উপর ভর করে নির্মিত। প্রাসাদের দুই প্রান্তে অষ্টভুজাকৃতির বহির্গমনের স্থান রয়েছে। প্রায় ১০ মিটার দীর্ঘ গাড়ি বারান্দার উপরে চারটি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে ঝুল বারান্দা। প্রাসাদের ভূমি নকশা অনেকটা ইংরেজি ‘T’ অক্ষরের মতো।

    ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ১৪x১৯ মিটার আকারের এক বিশাল হলঘর, যার দুই দিকে রয়েছে একটি করে ঘর। পুরো প্রাসাদটির ভেতরে ৩ মিটার চওড়া একটি টানা বারান্দা রয়েছে এবং প্রধান ব্লকের উত্তর দিকে দোতলায় ওঠার জন্য রয়েছে বিশাল কাঠের সিঁড়ি।

    এই ভবনে মোট ২২টি কক্ষ রয়েছে। গোপাল লাল রায় জমিদারি গ্রহণের পর বর্তমান ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৯১৭ সালে তা সম্পন্ন হয়। ইতালির শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি করা হয় সামনের সিঁড়ি এবং ভবনের সামনে আজও মার্বেল পাথরের একটি সুন্দর ফোয়ারা বিদ্যমান।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    ঈদের আনন্দে মুখরিত তাজহাট জমিদার বাড়ি

    আপডেট সময় ০৩:২০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

    ঈদের আনন্দ ছুঁয়ে গেছে সারা দেশকে। আর এই খুশির আমেজে মুখরিত হয়ে উঠেছে রংপুর বিভাগের ঐতিহাসিক প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনগুলো। ঈদকে সামনে রেখে এসব স্থানে পর্যটকদের ঢল নেমেছে, যা এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

    প্রতি বছর রংপুর এবং দিনাজপুর জেলার তাজহাট জমিদার বাড়ি ও কান্তজীউ মন্দিরে প্রায় ২০ লাখের বেশি দর্শনার্থীর আগমন ঘটে, যা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধিতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো রংপুর নগরীর তাজহাট জমিদার বাড়ি।

    রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি ১৯৯৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০০২ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। ১৬.৬ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই জাদুঘর ‘রংপুর জাদুঘর’ নামে পরিচিত। এখানে তিন শতাধিক মূল্যবান ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত আছে, যা দেখতে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় করেন।

    এই জমিদার বাড়ির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, মান্নালাল রায় নামের পাঞ্জাবের এক স্বর্ণকার এই জমিদারির গোড়াপত্তন করেন। স্বর্ণখচিত টুপি বা তাজ তৈরির জন্যই এই অঞ্চলের নাম হয় তাজহাট। ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত হলেও মান্নালালের শিখ ধর্মের প্রতি অনুরাগ ছিল।

    মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সাথে শিখদের সংঘাতের সময় তিনি পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে রংপুরের মাহিগঞ্জে এসে বসতি স্থাপন করেন। এখানেই তিনি হীরা-মনি-মুক্তা খচিত তাজ বিক্রি করতেন এবং ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের জমিদারি। রংপুর শহর থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর পুনরায় নির্মাণ করা হয়।
    প্রায় ৫৬ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই কমপ্লেক্সের মূল আকর্ষণ হলো পূর্বমুখী দোতলা জমিদার বাড়িটি, যার সামনের দিক প্রায় ৭৭ মিটার দীর্ঘ। বাড়ির সামনে রয়েছে এক বিশাল দরদালান, যেখানে ওঠার জন্য রয়েছে শ্বেতপাথরে আবৃত নজরকাড়া সিঁড়ি।

    ছাদের মূল অংশে আটটি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে রেনেসাঁ গম্বুজ, যা আংশিকভাবে সরু পিলারের উপর ভর করে নির্মিত। প্রাসাদের দুই প্রান্তে অষ্টভুজাকৃতির বহির্গমনের স্থান রয়েছে। প্রায় ১০ মিটার দীর্ঘ গাড়ি বারান্দার উপরে চারটি পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে ঝুল বারান্দা। প্রাসাদের ভূমি নকশা অনেকটা ইংরেজি ‘T’ অক্ষরের মতো।

    ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ১৪x১৯ মিটার আকারের এক বিশাল হলঘর, যার দুই দিকে রয়েছে একটি করে ঘর। পুরো প্রাসাদটির ভেতরে ৩ মিটার চওড়া একটি টানা বারান্দা রয়েছে এবং প্রধান ব্লকের উত্তর দিকে দোতলায় ওঠার জন্য রয়েছে বিশাল কাঠের সিঁড়ি।

    এই ভবনে মোট ২২টি কক্ষ রয়েছে। গোপাল লাল রায় জমিদারি গ্রহণের পর বর্তমান ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং ১৯১৭ সালে তা সম্পন্ন হয়। ইতালির শ্বেতপাথর দিয়ে তৈরি করা হয় সামনের সিঁড়ি এবং ভবনের সামনে আজও মার্বেল পাথরের একটি সুন্দর ফোয়ারা বিদ্যমান।