যারা বিদেশ ভ্রমণে আগ্রহী, তাদের জন্য একটি দুঃসংবাদ! বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন দেশের পর্যটক ভিসা ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে আসছে। যে দেশগুলোতে একসময় খুব সহজেই ভিসা পাওয়া যেত, এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। ফলে, বাংলাদেশিদের জন্য বিদেশ ভ্রমণ ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অনিয়ম। আর একটি বড় কারণ হলো ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে মানব পাচার। জানা গেছে, অনেকেই পর্যটক ভিসা নিয়ে বিদেশে গিয়ে আর দেশে ফেরেন না।

এছাড়া, দালাল চক্র পর্যটক ভিসা ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে লোক পাঠাচ্ছে। এই ধরনের অনিয়মের কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

ফলস্বরূপ, বিভিন্ন দেশ তাদের ভিসা নীতিতে কঠোরতা এনেছে এবং বাংলাদেশিদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধাও বন্ধ করে দিয়েছে।

ভ্রমণপ্রেমী বাংলাদেশিদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম থাইল্যান্ড। কিন্তু থাইল্যান্ডের ভিসা পেতে এখন দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে। চলতি বছর ২রা জানুয়ারি ই-ভিসা চালু হওয়ার পর প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন ভিসা পাওয়া সহজ হবে।

কিন্তু বাস্তবে ৪০ থেকে ৫০ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ঢাকার থাইল্যান্ড দূতাবাসও এখন ভিসা আবেদনের অন্তত ৪৫ দিন আগে আবেদন করার নির্দেশনা দিচ্ছে।

ইন্দোনেশিয়ার ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ বন্ধ: একসময় বাংলাদেশিদের জন্য ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণে ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ চালু ছিল, যা বিমানের টিকিট কেটেই সরাসরি ভ্রমণের সুযোগ দিতো। কিন্তু মানব পাচারকারীরা অস্ট্রেলিয়া যেতে ইন্দোনেশিয়াকে রুট হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করলে, ইন্দোনেশিয়া সরকার তিন বছর আগে এই সুবিধা বন্ধ করে দেয়।

বহু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা সত্ত্বেও এই সুবিধা আর চালু হয়নি। তবে আশার কথা, গত ১লা জুন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আরামানথা ক্রিস্টিয়ান নাসির ঢাকায় এসে এই ভিসা চালুর আশ্বাস দিয়েছেন।

ভারতের পর্যটক ভিসা বন্ধ: প্রতিবেশী ভারত, যা কম খরচে ভ্রমণের জন্য অনেকের কাছেই পছন্দের, সেখানেও ভিসা নিয়ে জটিলতা। গত ৫ই আগস্ট বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ৯ মাস ধরে ভারতে পর্যটক ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে সাধারণ পর্যটকরা ভারত ভ্রমণ করতে পারছেন না। তবে জরুরি চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা চালু রেখেছে দেশটি।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসা সীমিত: বাংলাদেশিদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিজিট ভিসা প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ থাকার পর, এখন সীমিত আকারে চালু হয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএই রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ঢাকার আরব আমিরাত দূতাবাস প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা ইস্যু করছে এবং ভবিষ্যতে সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অন্যান্য দেশের ভিসা জটিলতা: ভিয়েতনাম, সৌদি আরব, ইতালি— এই দেশগুলোতেও বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা পেতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন মাস ধরে ভিয়েতনামের ভ্রমণ ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশিরা।

সৌদি আরবে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের জন্য ব্লক ওয়ার্ক ভিসা, ওমরাহ, পারিবারিক ভিজিট এবং ব্যবসা সংক্রান্ত ভিসা আগামী ৩০শে জুন পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

ইতালির কর্ম ভিসাতেও দীর্ঘদিনের অপেক্ষা এবং জাল কাগজপত্র জমা দেওয়ার কারণে যাচাই-বাছাইয়ে সময় লাগছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য: বাংলাদেশিদের জন্য বিভিন্ন দেশের ভিসা বন্ধের বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য আমাদের দেশের মানুষ এবং ব্যবসায়ীরাই অনেকাংশে দায়ী, বিশেষ করে যারা মানুষ পাঠানোর কাজে জড়িত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমাদের ঘর সামলাতে হবে।” তিনি স্বীকার করেন, ইতালির ক্ষেত্রে জমা পড়া প্রায় ৬০ হাজার আবেদনপত্রের অনেকগুলোই যথাযথ ছিল না।