ঢাকা ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

    আবু সাঈদ হত্যা মামলায় চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০১:৫৫:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

    জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় চারজন আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। রোববার, ১৩ জুলাই সকালে প্রিজন ভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়।

    আসামিরা হলেন সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ। তারা সবাই অন্য মামলায় আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর গত ৩০ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি আমলে নেয় এবং একইসঙ্গে পলাতক ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও আদেশ দেয়। শুনানির জন্য ২৬ জুন দিন ধার্য করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা ছিল ১৪ জুলাই পর্যন্ত।

    এই মামলার বিচারকার্য চলছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি পরিচালনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ ও এস এম মঈনুল করিম। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন ও দেলোয়ার হোসেন সোহেল।

    প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। ওই সময় তিনি দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিলেন—এমন একটি ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত।

    ১৭ জুলাই থেকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকার ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বহু প্রাণহানি ঘটে। পরে এই আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের দাবিতে। ৫ আগস্ট, টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকাল শেষে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। তিনি তার বোন শেখ রেহানাসহ ভারতে আশ্রয় নেন বলে তখনকার বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

    সরকারি হিসেবে, এই আন্দোলন ও সহিংসতায় সাড়ে ৮০০ জনের মতো মানুষ প্রাণ হারান। এসব ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাবেক সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা নেওয়া শুরু হয়।

    এই সেই ট্রাইব্যুনাল, যা ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য। বর্তমানে, সেই একই ট্রাইব্যুনাল ব্যবহার করা হচ্ছে আন্দোলন দমন ও গুলি চালনার মতো অভিযোগে সাবেক শাসকগোষ্ঠীর বিচারিক প্রক্রিয়ার জন্য। আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে হাজির হয়েছেন এবং ২৬ জন পলাতক রয়েছেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    আবু সাঈদ হত্যা মামলায় চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির

    আপডেট সময় ০১:৫৫:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

    জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় চারজন আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। রোববার, ১৩ জুলাই সকালে প্রিজন ভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়।

    আসামিরা হলেন সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আমির হোসেন, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশ। তারা সবাই অন্য মামলায় আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর গত ৩০ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি আমলে নেয় এবং একইসঙ্গে পলাতক ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল তাদের হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও আদেশ দেয়। শুনানির জন্য ২৬ জুন দিন ধার্য করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময়সীমা ছিল ১৪ জুলাই পর্যন্ত।

    এই মামলার বিচারকার্য চলছে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি পরিচালনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বি এম সুলতান মাহমুদ ও এস এম মঈনুল করিম। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রাশেদুল হক খোকন ও দেলোয়ার হোসেন সোহেল।

    প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। ওই সময় তিনি দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়েছিলেন—এমন একটি ভিডিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত।

    ১৭ জুলাই থেকে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালিত হয়। পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকার ১৯ জুলাই কারফিউ জারি করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বহু প্রাণহানি ঘটে। পরে এই আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের দাবিতে। ৫ আগস্ট, টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনকাল শেষে শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে। তিনি তার বোন শেখ রেহানাসহ ভারতে আশ্রয় নেন বলে তখনকার বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

    সরকারি হিসেবে, এই আন্দোলন ও সহিংসতায় সাড়ে ৮০০ জনের মতো মানুষ প্রাণ হারান। এসব ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সাবেক সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা নেওয়া শুরু হয়।

    এই সেই ট্রাইব্যুনাল, যা ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য। বর্তমানে, সেই একই ট্রাইব্যুনাল ব্যবহার করা হচ্ছে আন্দোলন দমন ও গুলি চালনার মতো অভিযোগে সাবেক শাসকগোষ্ঠীর বিচারিক প্রক্রিয়ার জন্য। আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে ৩০ জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা। এর মধ্যে চারজন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে হাজির হয়েছেন এবং ২৬ জন পলাতক রয়েছেন।