কানাডায় পাঠানোর নামে ১৮ কোটি টাকার জালিয়াতি, শিক্ষার্থীদের কান্না

- আপডেট সময় ০১:২৮:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
- / ২৬১ বার পড়া হয়েছে
উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় যাওয়ার আশায় আইনজীবী দম্পতি জাহিদুল হক খান ও রওনক জাহান যোগাযোগ করেন বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটি তাঁদের দুজনের শিক্ষার্থী ভিসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সেই অনুযায়ী তারা প্রতিষ্ঠানটিকে মোট ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরও কোনো ভিসা না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে প্রতিষ্ঠানটি তাও দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
শুধু এই দম্পতি নন, এমন অভিযোগ করেছেন আরও বহু ভুক্তভোগী। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ৫ মে রাজধানীর গুলশান থানায় জাহিদুল-রওনকসহ ১৮ জনের পক্ষ থেকে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের চেয়ারম্যান খায়রুল বাশারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত করছেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম, যিনি জানিয়েছেন, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
এদিকে, উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাঠানোর কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গতকাল সোমবার খায়রুল বাশারকে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় দায়ের করা মামলায় বাশারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, ১৪১ শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে বাশার ও তাঁর পরিবার মিলে ১৮ কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই মামলার বাদী সিআইডির উপপরিদর্শক রুহুল আমিন। সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বাশার, তাঁর স্ত্রী খন্দকার সেলিমা রওশন ও ছেলে আরশ ইবনে বাশার একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্র গড়ে তোলেন। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, স্কলারশিপ ও ভিসার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তারা।
এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন ভুক্তভোগী সিআইডির কাছে প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বাশারের বিরুদ্ধে অন্তত ১০০ মামলা হয়েছে, যেগুলোর বেশিরভাগই গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে দায়ের করা।
এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বাশারের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে এবং আদালত তাঁর বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। শরীয়তপুরের বাসিন্দা আমির হোসেন জানান, তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ককে ১৩ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।
তাঁকে তিন মাসের মধ্যে কানাডার ভিসা দেওয়ার কথা বলা হলেও সেটা না হওয়ায় তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাঁর মতো আরও অনেকেই জমি বিক্রি করে কিংবা ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। গত ২৮ ডিসেম্বর আমিরসহ ২৩ জন গুলশান থানায় বাশারের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। অপরদিকে, জান্নাতুল ফেরদৌস নামের আরেক শিক্ষার্থীও একই ধরনের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন। তাঁর কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এই মামলায় বিএসবি গ্লোবালের মহাব্যবস্থাপক আবু জাহিদকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় এবং চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে মুক্ত হন। আবু জাহিদের আইনজীবী রুবায়েত হাসান দাবি করেন, বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বহু শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠিয়েছে এবং যারা যেতে পারেননি, তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বাশারের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা রয়েছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রতিটি মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে এখন একটাই দাবি—তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ যেন ফেরত দেওয়া হয় এবং প্রতারকদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়।