ঢাকা ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    গোয়ালন্দে বিক্ষুব্ধরা নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিল

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০২:২৬:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
    • / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে

    রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা চালিয়ে তার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। ‘শরিয়ত পরিপন্থি’ পদ্ধতিতে দাফন করা হয়েছে—এমন অভিযোগে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

    শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের কিছুক্ষণ পর এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের দুটি পিকআপ ভাঙচুর করে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীব।

    ঘটনার আগে, জুমার নামাজের পর ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, নুরাল পাগলা কালিমা, আজান ও দুরুদ বিকৃত করেছেন এবং নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেছিলেন। এছাড়া কাবা শরিফের আদলে ১২ ফুট উঁচুতে কবর নির্মাণ ও সেখানে তার মরদেহ দাফন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উত্তেজিত জনতা তার দরবারে গিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং পরে মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে পুড়িয়ে ফেলে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লা পাড়া এলাকায় নুরাল পাগলা নিজের বাড়িতে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ তিনি মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়লেও কিছুদিন পর আবার ফিরে এসে কার্যক্রম চালু করেন। গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তার মৃত্যু হয়।

    ওইদিন রাতেই এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে প্রথম জানাজা এবং ভক্তদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাড়ে ১০টার দিকে বিশেষ কায়দায় মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে তাকে দাফন করা হয়। কবরটি পবিত্র কাবার আদলে রঙ করা হয়।

    বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয়ে ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে তারা উপজেলা মডেল মসজিদ ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন।

    গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মারুফ জানান, নুরাল পাগলার দরবারকে ঘিরে সংঘর্ষে আহত ২২ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯ জনকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়েছে। বাকি তিনজন ভর্তি হলেও পরে নিরাপত্তার জন্য তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান।

    রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার আস্তানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”

    নিউজটি শেয়ার করুন

    গোয়ালন্দে বিক্ষুব্ধরা নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিল

    আপডেট সময় ০২:২৬:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

    রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা চালিয়ে তার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা। ‘শরিয়ত পরিপন্থি’ পদ্ধতিতে দাফন করা হয়েছে—এমন অভিযোগে এ ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

    শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের কিছুক্ষণ পর এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের দুটি পিকআপ ভাঙচুর করে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শরীফ আল রাজীব।

    ঘটনার আগে, জুমার নামাজের পর ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, নুরাল পাগলা কালিমা, আজান ও দুরুদ বিকৃত করেছেন এবং নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করেছিলেন। এছাড়া কাবা শরিফের আদলে ১২ ফুট উঁচুতে কবর নির্মাণ ও সেখানে তার মরদেহ দাফন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হয়েছে। এই অভিযোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উত্তেজিত জনতা তার দরবারে গিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং পরে মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে পুড়িয়ে ফেলে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লা পাড়া এলাকায় নুরাল পাগলা নিজের বাড়িতে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ তিনি মুচলেকা দিয়ে এলাকা ছাড়লেও কিছুদিন পর আবার ফিরে এসে কার্যক্রম চালু করেন। গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তার মৃত্যু হয়।

    ওইদিন রাতেই এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে প্রথম জানাজা এবং ভক্তদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাড়ে ১০টার দিকে বিশেষ কায়দায় মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে তাকে দাফন করা হয়। কবরটি পবিত্র কাবার আদলে রঙ করা হয়।

    বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ক্ষুব্ধ হয়ে ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি গঠন করে। পরবর্তীতে তারা উপজেলা মডেল মসজিদ ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছিলেন।

    গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মারুফ জানান, নুরাল পাগলার দরবারকে ঘিরে সংঘর্ষে আহত ২২ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯ জনকে ফরিদপুরে রেফার্ড করা হয়েছে। বাকি তিনজন ভর্তি হলেও পরে নিরাপত্তার জন্য তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যান।

    রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “উত্তেজিত জনতা নুরাল পাগলার আস্তানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”