চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক আন্দোলন দমানোর জন্য ৫ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চট্টগ্রাম নগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী নিজাম উদ্দিন।

তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগের একটি ভিডিও রোববার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দেড় মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নিজাম উদ্দিন আন্দোলন বন্ধ করতে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলছেন। ভিডিওতে আফতাব হোসেন রিফাত নামে এক ব্যক্তিকে মেসেঞ্জার কলে নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।

কথোপকথনের শুরুতে আফতাব জানতে চান, “যদি মীর ভাইয়েরা আন্দোলন বন্ধ না করে, তখন কী করব?” জবাবে নিজাম বলেন, “আন্দোলন বন্ধ করাব। তোমারে টাকা দিছে?” উত্তরে আফতাব “হ্যাঁ” বলেন। কত টাকা দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে আফতাব জানান, “পাঁচ লাখ।” তখন নিজাম বলেন, “আরও বেশি নিতা প্রেসার দিয়ে… তোমরা দেখো ওর থেকে আরও পাঁচ লাখ নিতে পারো কি না, নিতে পারলে ওদেরকে আমি এনে, রোহান, মীরদেরকে এসে কিছু দিয়ে দিলাম।”

দলীয় সূত্র মতে, আফতাব হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক সমন্বয়ক। এই ভিডিওটি ফেসবুকে আপলোড করেন সংগঠনটির চট্টগ্রাম নগর শাখার সাবেক যুগ্ম সদস্যসচিব রাহাদুল ইসলাম। তিনি ভিডিওর ক্যাপশনে লিখেছেন, “সাইফ পাওয়ারটেকবিরোধী আন্দোলন দমন করতে গিয়ে নিজাম উদ্দিন ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এটা শুধু দুর্নীতিই নয়, এটি ছাত্র ও জনতার বিশ্বাসের সঙ্গে সরাসরি বিশ্বাসঘাতকতা।”

রাহাদুল ইসলাম জানান, ভিডিওটি তিনি একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “নিজামের বিরুদ্ধে আগেও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছিল। এবার সাইফ পাওয়ারটেক থেকে বন্দরকেন্দ্রিক আন্দোলন দমাতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠল।”

এর আগে গত ৫ জুলাই এক নারী পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেন যে, দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে নিজাম উদ্দিন তার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন। তখন নিজাম উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম নগর শাখার সদস্যসচিব ছিলেন। ওই অভিযোগের পর তার পদ স্থগিত করা হলেও পরে পুনর্বহাল করা হয়।

এই অভিযোগ প্রসঙ্গে নিজাম উদ্দিন দাবি করেন, ভিডিওটি পুরোনো এবং রাজনৈতিকভাবে তাকে কোণঠাসা করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “যে ভিডিও করেছে (আফতাব), সে লাইভে এসে বিস্তারিত বলবে।”

এ বিষয়ে এনসিপি চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সমন্বয়কারী মীর আরশাদুল হক বলেন, “এর আগে অভিযোগ ওঠার পর কমিটি গঠনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে তার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাদের ইতিবাচক জবাবেই তাকে কমিটিতে রাখা হয়। এখন যেহেতু নতুন অভিযোগ উঠেছে, আমরা নিয়ম অনুযায়ী তার কাছে ব্যাখ্যা চাইব।”

উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল ‘বন্দর রক্ষা আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন, যা এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, নগরের কাস্টমস মোড়ে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল ইস্যুতে মিছিল ও সমাবেশ করে।