চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরে মৃত্যু ৪১ ছাড়ালো

- আপডেট সময় ০৬:০৮:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
- / ২৫২ বার পড়া হয়েছে
চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্য ৪১-এ পৌঁছেছে, এবং হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শত শত। শনিবার (২৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে, যার ফলে চলতি বছরের মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ জন।
এই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬২ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ জন, ঢাকা বিভাগে (ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো উচ্চ ঝুঁকিবাইরে) ১৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৮ জন, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ জন করে এবং সিলেটে ৩ জন রয়েছেন।
চলতি বছরে মোট ৯,৪৮৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, যার ৫৮.৯% পুরুষ এবং ৪১.১% নারী।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন, এবং চলতি বছরে মোট ৮,৩৮০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার (CFR) ২০২৩ সালের তুলনায় কম, যখন ৩,২১,১৭৯ জন আক্রান্ত এবং ১,৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল (CFR ০.৫৩%)। ২০২৪ সালে ১,০১,২১৪ জন আক্রান্ত এবং ৫৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা মৃত্যুর হার কমাতে পারে। ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, পেশি ও জয়েন্টে ব্যথা, বমি এবং ফুসকুড়ি।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বর এডিস ইজিপ্টি এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে ছড়ায়, যা বিশেষ করে বর্ষাকালে (মে-সেপ্টেম্বর) সক্রিয় থাকে। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ছিল। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকায় মশার লার্ভার উপস্থিতি ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে।
বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং বরিশালের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ এবং বর্ষার পরিমাণ বৃদ্ধি ডেঙ্গু ছড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস, কীটনাশক স্প্রে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিক শহুরে পরিকল্পনার অভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. ফজলে শামসুল কবির জানান, জানুয়ারি থেকে বছরব্যাপী মশা নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা চলছে। এছাড়া, জনগণকে পানি জমতে না দেওয়া, মশারি ব্যবহার এবং দিনের বেলা মশার কামড় থেকে সুরক্ষার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।