জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-প্রধান উপদেষ্টা

- আপডেট সময় ০২:০৭:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাঁর সরকার কঠোর পরিশ্রম করছে, যাতে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়। তিনি বলেন, “আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার প্রকৃত মালিক—জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসাস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরের কাছ থেকে তিনি এই সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ গ্রহণ করেন।
সম্মাননা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই স্বীকৃতি তাঁকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি স্মরণ করেন, গত বছর বাংলাদেশের বহু তরুণ একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে, যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদা, ভয়, বৈষম্য এবং অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে। তিনি উল্লেখ করেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যৎ আশার নতুন অর্থ তৈরি করেছে। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি, যেখানে শাসনব্যবস্থা হবে ন্যায়সংগত, অর্থনীতি হবে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে সফল হওয়ার জন্য। আমাদের সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী রয়েছে।”
সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে সংস্কারের কথা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমরা আগামী দিনের নির্মাতা। তোমাদের ভাবনা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্ববোধই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে—শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সমগ্র বিশ্বের।” তিনি তরুণদের বড় স্বপ্ন দেখতে, সাহসিকতার সঙ্গে চিন্তা করতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, “ভয় পেয়ো না, প্রত্যেক ব্যর্থতাই সাফল্যের পথে একটি ধাপ মাত্র।”
মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, আজকের অন্যতম বড় বিপদ হলো সম্পদ ক্রমে অল্প কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে, যা বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি করে। আমাদের এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি দরকার, যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে। তিনি বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী জাম্ব্রি আবদুল কাদির ও ইউকেএমের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সুফিয়ান জুসোহসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।