জনি হত্যা মামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল-হাইকোর্ট

- আপডেট সময় ০৩:২৬:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে
রাজধানীর পল্লবীতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে গাড়িচালক ইশতিয়াক হোসেন জনি নিহত হওয়ার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় পল্লবী থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) জাহিদুর রহমান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) কামরুজ্জামানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (১১ আগস্ট) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের রায়ে আরেক আসামি এএসআই রাশেদুল হাসানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। একইসঙ্গে, আসামি রাসেলকে (পুলিশের সোর্স) নিম্ন আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মামলার অপর আসামি সুমন নিম্ন আদালতের দেওয়া সাত বছরের সাজা ভোগ করে ইতোমধ্যে কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন এবং তিনি কোনো আপিল করেননি।
উল্লেখ্য, এটি নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইন-২০১৩-এর অধীনে হওয়া কোনো মামলার হাইকোর্টে প্রথম রায়। রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি এসআই জাহিদুর রহমান ও এএসআই কামরুজ্জামানকে ভুক্তভোগী জনির পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি এএসআই রাশেদুল হাসানকে ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ইরানি ক্যাম্পের বাসিন্দা মো. বিল্লালের গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে পুলিশের সোর্স সুমন নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। এ সময় ইশতিয়াক হোসেন জনি ও তার ভাই ইমতিয়াজের সঙ্গে সুমনের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমনের ফোনে পুলিশ এসে জনি ও ইমতিয়াজকে ধরে নিয়ে যায় এবং থানায় নিয়ে দুই ভাইকে নির্যাতন করে। এতে জনির অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন একই বছরের ৭ আগস্ট নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় তৎকালীন পল্লবী থানার এসআই জাহিদুর রহমানসহ মোট আটজনকে আসামি করা হয়। এটি ২০১৩ সালে প্রণীত নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে প্রথম মামলা ছিল।
আদালতের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়, যাদের মধ্যে এএসআই রাশেদুল ও কামরুজ্জামানকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বিচার শেষে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিম্ন আদালত রায় দেন, যেখানে তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন এবং দুই সোর্সকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিলের শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় দিলেন।