জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত

- আপডেট সময় ১১:১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে জমা দিচ্ছে। শুক্রবার পর্যন্ত মোট ২৮টি দল তাদের প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তবে প্রধান তিন রাজনৈতিক শক্তি—বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) —এর মধ্যে সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে সুস্পষ্ট ভিন্নমত দেখা যাচ্ছে। যেখানে জামায়াত গণভোট এবং এনসিপি গণপরিষদ গঠনের পক্ষে, সেখানে বিএনপি এই দুটি পন্থাকে ‘সাংবিধানিক ক্যু’ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে।
*বিএনপির প্রস্তাব: দুই বছরে সনদ বাস্তবায়ন*
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে বিএনপি তিন পৃষ্ঠার মতামত দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে গঠিত কোনো সরকার যদি নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করে, তবে তা বিপ্লব নয় বরং ‘ক্যু’ হিসেবে গণ্য হবে। বিএনপি মনে করে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নষ্ট করার এই চেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছে, জুলাই সনদ তিনটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে। প্রথমত, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আশু করণীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করবে। দ্বিতীয়ত, বাকি অংশের কিছু কাজ শুরু করবে। এবং তৃতীয়ত, পরবর্তী নির্বাচিত সরকার দুই বছরের মধ্যে সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে। বিএনপি জোর দিয়ে বলেছে যে, কোনো দল বা গোষ্ঠী যেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অসম্মানজনক পথে ঠেলে না দেয়।
*জামায়াত ও এনসিপির অবস্থান*
অন্যদিকে, জামায়াত ইসলামী জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। দলটি তাদের মতামত শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে জমা দেবে বলে জানিয়েছে। তাদের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, সংবিধানের ৭/১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বা রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক আদেশকে তারা সমর্থন করে।
একইভাবে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। শুক্রবার জমা দেওয়া তাদের মতামতে বলা হয়েছে, জুলাই সনদ জনগণের সর্বজনীন অভিমত প্রতিফলিত করে, তাই এর বাস্তবায়ন জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হওয়া জরুরি। এনসিপি মনে করে, একটি গণপরিষদ গণতান্ত্রিক ভিত্তি সুদৃঢ় করবে এবং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সংকট এড়াতে সহায়ক হবে।
*কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ*
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা করতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবে। এরপর চূড়ান্ত জুলাই সনদ এবং বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। তবে কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশটি কেবল সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নয়। তিনি আরও বলেন, কমিশন সনদের ভাষাগত যথার্থতা মূল্যায়ন করছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু প্রস্তাব সংশোধন করছে।