ঢাকা ০৪:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

    ডেলটা মেডিকেলে নবজাতকের হাত ভাঙা, ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:৪৬:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৬১ বার পড়া হয়েছে

    রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ডিসের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই চিকিৎসায় অবহেলার দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

    বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ (সোমবার, ১১ আগস্ট) এই আদেশ দেন। পাশাপাশি, আদালত নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনার তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

    এর আগে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিশুটির বাবা মো. নূরের সাফাহ্ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জন্ডিসের চিকিৎসা করতে গিয়ে নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

    শিশুটির বাবা মো. নূরে সাফাহ্ জানান, গত ৩ এপ্রিল তার সাত দিনের নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকায় মিরপুরের এই হাসপাতালে ডা. এ কে খাইরুল আনাম চৌধুরীর অধীনে তাকে ভর্তি করা হয়। ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য ভর্তির পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লম্বা সময় ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে থেরাপি চলার কারণে দিনে দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করানো হবে। বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে দুধ দিলে তারাই বাচ্চাকে খাইয়ে নেবে। চিকিৎসার সময় শিশুর কাছে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না।

    সাফাহ্ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তার স্ত্রী রাত ১২টায় বাচ্চাকে খাইয়ে দিয়ে আসেন। পরদিন সকাল ৭টায় তাকে আবারও খাওয়ানোর জন্য ডেকে নেওয়া হয়। কিন্তু বাচ্চা ঘুমানোর কারণে তার স্ত্রী অনেক চেষ্টা করেও তাকে খাওয়াতে পারেননি। কর্তব্যরত নার্স জানান, বাচ্চা ঘুম থেকে উঠলে তারা ডেকে দেবেন। তখন তার স্ত্রী ব্রেস্ট পাম্প করে দুধ দিয়ে আসেন।

    তিনি আরও বলেন, পরদিন সকাল ১০টায় ডিউটি চিকিৎসক জানান, বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং তাকে রিলিজ দেওয়া হবে। বেলা ১১টার দিকে তারা বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিয়ে জানায়, ডান হাতে ক্যানোলা পরানোর কারণে ব্যথা আছে, তাই এই হাত যেন কম নাড়াচাড়া করা হয়। তখনো বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল এবং পুরো শরীর কাঁথা দিয়ে মোড়ানো ছিল। বাসায় আনার পর কাঁথা থেকে বের করে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সময় দেখা যায়, বাচ্চার ডান হাত কনুইয়ের ওপরে ভাঙা, যা স্পর্শ করলে সে মারাত্মকভাবে কান্না করছিল।

    ঘটনা বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই বেলা ১২টায় তারা বাচ্চাকে আবার ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিওনেটাল ওয়ার্ডে নিয়ে যান। ডিউটি চিকিৎসক তাদের জানান, ডিসচার্জ করার আগে তিনি নিজে বাচ্চাকে পরীক্ষা করেছেন এবং তাদের দাবি, বাসায় নেওয়ার পর টানাটানি করার কারণে হাত ভেঙেছে।

    শিশুটির বাবা বলেন, “আমার মনে হচ্ছিলো, যেন মোবাইল কেনার মতো কেন চেক করে বাচ্চা নেইনি, সেটাই আমাদের অপরাধ।” এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক্স-রে করার জন্য শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে যেতে বলে, কারণ তাদের হাসপাতালে এক্স-রে করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তখন তারা লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসেন।

    সাফাহ্ বলেন, “সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলাকালীন বাচ্চা ঘুমিয়েই ছিল এবং তাকে খাওয়ানো যায়নি। কিন্তু সন্ধ্যার পরপরই সে স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং খাওয়া শুরু করে। যেহেতু রাত ১২টায়ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিল, তাই আমাদের ধারণা রাতের কোনো এক সময়ে হাত ভেঙেছে। আর বিষয়টি স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, যেন আমরা কিছু বুঝতে না পারি।”

    নিউজটি শেয়ার করুন

    ডেলটা মেডিকেলে নবজাতকের হাত ভাঙা, ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ ও তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

    আপডেট সময় ১২:৪৬:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

    রাজধানীর ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জন্ডিসের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই চিকিৎসায় অবহেলার দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

    বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ (সোমবার, ১১ আগস্ট) এই আদেশ দেন। পাশাপাশি, আদালত নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনার তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

    এর আগে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিশুটির বাবা মো. নূরের সাফাহ্ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, হাসপাতালের চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জন্ডিসের চিকিৎসা করতে গিয়ে নবজাতকের হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

    শিশুটির বাবা মো. নূরে সাফাহ্ জানান, গত ৩ এপ্রিল তার সাত দিনের নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকায় মিরপুরের এই হাসপাতালে ডা. এ কে খাইরুল আনাম চৌধুরীর অধীনে তাকে ভর্তি করা হয়। ফটোথেরাপি দেওয়ার জন্য ভর্তির পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, লম্বা সময় ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে থেরাপি চলার কারণে দিনে দুই থেকে তিনবার ব্রেস্ট ফিডিং করানো হবে। বাকি সময় ব্রেস্ট পাম্প করে দুধ দিলে তারাই বাচ্চাকে খাইয়ে নেবে। চিকিৎসার সময় শিশুর কাছে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না।

    সাফাহ্ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তার স্ত্রী রাত ১২টায় বাচ্চাকে খাইয়ে দিয়ে আসেন। পরদিন সকাল ৭টায় তাকে আবারও খাওয়ানোর জন্য ডেকে নেওয়া হয়। কিন্তু বাচ্চা ঘুমানোর কারণে তার স্ত্রী অনেক চেষ্টা করেও তাকে খাওয়াতে পারেননি। কর্তব্যরত নার্স জানান, বাচ্চা ঘুম থেকে উঠলে তারা ডেকে দেবেন। তখন তার স্ত্রী ব্রেস্ট পাম্প করে দুধ দিয়ে আসেন।

    তিনি আরও বলেন, পরদিন সকাল ১০টায় ডিউটি চিকিৎসক জানান, বাচ্চার বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং তাকে রিলিজ দেওয়া হবে। বেলা ১১টার দিকে তারা বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিয়ে জানায়, ডান হাতে ক্যানোলা পরানোর কারণে ব্যথা আছে, তাই এই হাত যেন কম নাড়াচাড়া করা হয়। তখনো বাচ্চা ঘুমাচ্ছিল এবং পুরো শরীর কাঁথা দিয়ে মোড়ানো ছিল। বাসায় আনার পর কাঁথা থেকে বের করে খাওয়ানোর চেষ্টা করার সময় দেখা যায়, বাচ্চার ডান হাত কনুইয়ের ওপরে ভাঙা, যা স্পর্শ করলে সে মারাত্মকভাবে কান্না করছিল।

    ঘটনা বোঝার সঙ্গে সঙ্গেই বেলা ১২টায় তারা বাচ্চাকে আবার ডেলটা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিওনেটাল ওয়ার্ডে নিয়ে যান। ডিউটি চিকিৎসক তাদের জানান, ডিসচার্জ করার আগে তিনি নিজে বাচ্চাকে পরীক্ষা করেছেন এবং তাদের দাবি, বাসায় নেওয়ার পর টানাটানি করার কারণে হাত ভেঙেছে।

    শিশুটির বাবা বলেন, “আমার মনে হচ্ছিলো, যেন মোবাইল কেনার মতো কেন চেক করে বাচ্চা নেইনি, সেটাই আমাদের অপরাধ।” এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক্স-রে করার জন্য শ্যামলীর পঙ্গু হাসপাতালে যেতে বলে, কারণ তাদের হাসপাতালে এক্স-রে করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তখন তারা লিখিত অভিযোগ দিয়ে চলে আসেন।

    সাফাহ্ বলেন, “সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত ট্রিটমেন্ট চলাকালীন বাচ্চা ঘুমিয়েই ছিল এবং তাকে খাওয়ানো যায়নি। কিন্তু সন্ধ্যার পরপরই সে স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং খাওয়া শুরু করে। যেহেতু রাত ১২টায়ও বাচ্চা স্বাভাবিক ছিল, তাই আমাদের ধারণা রাতের কোনো এক সময়ে হাত ভেঙেছে। আর বিষয়টি স্বাভাবিক দেখানোর জন্য তাকে কোনো ধরনের সিডেটিভ ব্যবহার করে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, যেন আমরা কিছু বুঝতে না পারি।”