ঢাকা ০৮:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে – ম্যাক্রোঁর হুঁশিয়ারি

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:০৭:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৭ বার পড়া হয়েছে

    ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপের স্বাধীনতা সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি এক বক্তৃতায় দাবি করেন, ইউরোপ একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে’ দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বৈশ্বিক রাজনীতি ক্রমশ জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

    রবিবার (১৪ জুলাই) রাজধানী প্যারিসে ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ম্যাক্রোঁ বলেন, “এই পৃথিবীতে স্বাধীন থাকতে হলে, ভয় পাওয়াতে হয়। আর ভয় পাওয়াতে হলে, শক্তিশালী হতে হয়।” সেই শক্তি অর্জনের অংশ হিসেবেই তিনি ঘোষণা দেন, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়ানো হবে।

    ম্যাক্রোঁ জানান, আগামী বছর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) করা হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে বাজেট আরও ৩ বিলিয়ন ইউরো বৃদ্ধি পাবে। তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে যেখানে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৩২ বিলিয়ন ইউরো, সেটি আগামী দুই বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে ৬৪ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছাবে। তবে এই বাজেট বাস্তবায়নের আগে তা ফরাসি পার্লামেন্টের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।

    রাশিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকাকে সরাসরি আক্রমণ করে ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি। তিনি রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী নীতি এবং দখলদারিত্বের তীব্র নিন্দা জানান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধ এখন ইউরোপের মাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

    ম্যাক্রোঁর এই বক্তব্য বাস্তিল দিবসের (ফ্রান্সের জাতীয় দিবস) ঠিক আগের দিন দেওয়া হয়, যা ফরাসি জনগণের জন্য প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কে নতুন বার্তা বহন করে। বক্তব্যে তিনি বিশ্ব রাজনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, পারমাণবিক শক্তির প্রত্যাবর্তন বিশ্বে বড় ধরণের সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। সেই প্রসঙ্গে তিনি ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বোমাবর্ষণ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার কথাও টেনে আনেন।

    এদিকে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো ইতোমধ্যে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগে ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এই সিদ্ধান্ত এবং ম্যাক্রোঁর প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউরোপ নতুন করে সামরিক প্রস্তুতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

    ম্যাক্রোঁর ভাষ্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, ইউরোপীয় নেতৃত্ব এখন আর কেবল কূটনৈতিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না। বরং তারা সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও প্রতিরক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে— যেন ইউরোপ তার স্বাধীনতা ও ভূখণ্ড সুরক্ষায় সক্ষম থাকে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে – ম্যাক্রোঁর হুঁশিয়ারি

    আপডেট সময় ১২:০৭:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

    ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করে বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম ইউরোপের স্বাধীনতা সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছে। তিনি এক বক্তৃতায় দাবি করেন, ইউরোপ একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে’ দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে বৈশ্বিক রাজনীতি ক্রমশ জটিল ও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

    রবিবার (১৪ জুলাই) রাজধানী প্যারিসে ফরাসি সশস্ত্র বাহিনীর উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ম্যাক্রোঁ বলেন, “এই পৃথিবীতে স্বাধীন থাকতে হলে, ভয় পাওয়াতে হয়। আর ভয় পাওয়াতে হলে, শক্তিশালী হতে হয়।” সেই শক্তি অর্জনের অংশ হিসেবেই তিনি ঘোষণা দেন, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা ব্যয় ব্যাপকভাবে বাড়ানো হবে।

    ম্যাক্রোঁ জানান, আগামী বছর প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) করা হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে বাজেট আরও ৩ বিলিয়ন ইউরো বৃদ্ধি পাবে। তার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে যেখানে ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল ৩২ বিলিয়ন ইউরো, সেটি আগামী দুই বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে ৬৪ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছাবে। তবে এই বাজেট বাস্তবায়নের আগে তা ফরাসি পার্লামেন্টের অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।

    রাশিয়ার সাম্প্রতিক ভূমিকাকে সরাসরি আক্রমণ করে ম্যাক্রোঁ বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ইউরোপের জন্য একটি স্পষ্ট হুমকি। তিনি রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী নীতি এবং দখলদারিত্বের তীব্র নিন্দা জানান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধ এখন ইউরোপের মাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

    ম্যাক্রোঁর এই বক্তব্য বাস্তিল দিবসের (ফ্রান্সের জাতীয় দিবস) ঠিক আগের দিন দেওয়া হয়, যা ফরাসি জনগণের জন্য প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কে নতুন বার্তা বহন করে। বক্তব্যে তিনি বিশ্ব রাজনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, পারমাণবিক শক্তির প্রত্যাবর্তন বিশ্বে বড় ধরণের সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। সেই প্রসঙ্গে তিনি ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বোমাবর্ষণ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনার কথাও টেনে আনেন।

    এদিকে সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো ইতোমধ্যে জিডিপির ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আগে ছিল মাত্র ২ শতাংশ। এই সিদ্ধান্ত এবং ম্যাক্রোঁর প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউরোপ নতুন করে সামরিক প্রস্তুতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

    ম্যাক্রোঁর ভাষ্য স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, ইউরোপীয় নেতৃত্ব এখন আর কেবল কূটনৈতিক আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে না। বরং তারা সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও প্রতিরক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে— যেন ইউরোপ তার স্বাধীনতা ও ভূখণ্ড সুরক্ষায় সক্ষম থাকে।