ঢাকা ১১:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন, গণতান্ত্রিক শক্তিকে সতর্ক থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:১৮:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

    অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন আদৌ সম্ভব কি না—এই প্রশ্ন এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো মতামত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে কি না, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

    শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান এবং শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা’ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন তারেক রহমান। এই আয়োজনের পেছনে ছিলেন দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

    বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, দেশের সাম্প্রতিক কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ও নৃশংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় কেউ কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে—এই প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই নিয়ে আলোচনা চলছে।

    তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে আদৌ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না—এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো বক্তব্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “দেশে ফ্যাসিবাদী কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিতে হলে একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই হবে।”

    তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে প্রতিটি ভোটার ভয়হীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হলে কোনো রাজনৈতিক আয়োজনই টেকসই হবে না।” তারেক রহমান দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ভুল সিদ্ধান্ত বা আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত যেন আর কখনও চরমপন্থা বা ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের সুযোগ না দেয়—এ জন্য জনগণকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।”

    অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গণতন্ত্র উত্তরণের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তা বাস্তবায়নে আরও সজাগ ও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে।” তিনি সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে তারেক রহমানের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

    জামায়াতে ইসলামীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “১৬–১৭ বছর ধরে মিছিলের আওয়াজ পাই না। হঠাৎ দেখি মিছিল হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে দেখি আওয়ামী লীগের লোকজনও তাতে অংশ নিচ্ছে। এটি রাজনৈতিকভাবে ভাববার বিষয়।”

    তিনি অভিযোগ করে বলেন, “একদিকে আমরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, অন্যদিকে সেই দলের নেতাকর্মীদের মাথায় করে রাখা হচ্ছে—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, “গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই এখনো শেষ হয়নি। ছাত্রসমাজ যে রক্ত দিয়েছে, সেই আন্দোলন চলমান রাখতে হবে।” তিনি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষার আহ্বান জানান।

    অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবু হোরায়রা।

    সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মো. তৌফিকুল ইসলাম এবং স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ওমর শরীফ মো. ইমরান সানিয়াত। অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং কয়েকজন বক্তব্যও দেন। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    নির্বাচনে অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন, গণতান্ত্রিক শক্তিকে সতর্ক থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

    আপডেট সময় ১২:১৮:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন আদৌ সম্ভব কি না—এই প্রশ্ন এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো মতামত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কেউ সময়ক্ষেপণ করতে চাইছে কি না, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

    শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন (কেআইবি) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবদান এবং শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা’ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন তারেক রহমান। এই আয়োজনের পেছনে ছিলেন দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

    বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, দেশের সাম্প্রতিক কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ও নৃশংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় কেউ কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে—এই প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে মুখে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই নিয়ে আলোচনা চলছে।

    তারেক রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে আদৌ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না—এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো বক্তব্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “দেশে ফ্যাসিবাদী কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দিতে হলে একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতেই হবে।”

    তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে প্রতিটি ভোটার ভয়হীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হলে কোনো রাজনৈতিক আয়োজনই টেকসই হবে না।” তারেক রহমান দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ভুল সিদ্ধান্ত বা আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত যেন আর কখনও চরমপন্থা বা ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের সুযোগ না দেয়—এ জন্য জনগণকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।”

    অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গণতন্ত্র উত্তরণের যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তা বাস্তবায়নে আরও সজাগ ও সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে।” তিনি সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে তারেক রহমানের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান।

    জামায়াতে ইসলামীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত জাতীয় সমাবেশের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “১৬–১৭ বছর ধরে মিছিলের আওয়াজ পাই না। হঠাৎ দেখি মিছিল হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে দেখি আওয়ামী লীগের লোকজনও তাতে অংশ নিচ্ছে। এটি রাজনৈতিকভাবে ভাববার বিষয়।”

    তিনি অভিযোগ করে বলেন, “একদিকে আমরা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, অন্যদিকে সেই দলের নেতাকর্মীদের মাথায় করে রাখা হচ্ছে—এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, “গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই এখনো শেষ হয়নি। ছাত্রসমাজ যে রক্ত দিয়েছে, সেই আন্দোলন চলমান রাখতে হবে।” তিনি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষার আহ্বান জানান।

    অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আবদুল হান্নান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মো. আবু হোরায়রা।

    সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মো. তৌফিকুল ইসলাম এবং স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব ওমর শরীফ মো. ইমরান সানিয়াত। অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এবং কয়েকজন বক্তব্যও দেন। বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।