ঢাকা ০২:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

    পুতিন ও সি চিন পিংকে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প : অডিও ফাঁস

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০৬:৫০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৯ বার পড়া হয়েছে

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে সরাসরি বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে এমন বিস্ফোরক বক্তব্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের এক অনুষ্ঠানে অনুদানদাতাদের সামনে এ হুমকির কথা নিজেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

    সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ওই গোপন অডিওর একটি অনুলিপি প্রকাশ করেছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস হওয়া অডিওতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, যদি তিনি ইউক্রেনে হামলা বন্ধ না করেন, তাহলে ট্রাম্প মস্কোয় বোমা ফেলবেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি পুতিনকে বলেছিলাম, ইউক্রেনে হামলা বন্ধ না করলে আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।” পুতিন তখন ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেননি বলেও জানান তিনি, তবে ট্রাম্পের ধারণা, অন্তত ১০ শতাংশ হলেও পুতিন তার কথাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

    একই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আরও দাবি করেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকেও একই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি সি-কে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যদি চীন তাইওয়ানে হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও বেইজিংয়ে বোমা ফেলবে। ট্রাম্পের ভাষায়, “সি চিন পিং ভেবেছিলেন আমি পাগল।” তবে তিনি এটাও বলেন যে, তাদের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।

    অডিওটিতে ট্রাম্পের এই সব মন্তব্য গত বছর নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত তহবিল সংগ্রহের কয়েকটি বৈঠকে করা হয়। এগুলো আগে কখনোই প্রকাশ পায়নি। সিএনএন জানায়, সাংবাদিক জোশ ডসি, টাইলার পেজার এবং আইজ্যাক আর্নডরফ একটি বইয়ের জন্য এই অডিও সংগ্রহ করেছিলেন। সেই বইটির নাম ‘২০২৪’। বইটি ঘিরেই এই তথ্যগুলো এখন জনসমক্ষে আসছে।

    বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব অডিও ফাঁসের মাধ্যমে ট্রাম্পের এমন এক রূপ সামনে এসেছে, যা সাধারণত জনসমক্ষে দেখা যায় না। পুতিন ও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে কথোপকথনের অংশগুলোর মধ্যে তার আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির ছাপ স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া, ফাঁস হওয়া অডিওতে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা পরিকল্পনাও উঠে এসেছে। তিনি বলেছিলেন, যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী দেশটিতে বিক্ষোভ করছে, তাদের আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য দমন করা হবে এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

    এক দাতা তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, এসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ভবিষ্যতে নেতৃত্বে আসতে পারে। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আপনারা যদি আমাকে জয়ী করেন, আমি এই আন্দোলনগুলোকে ২৫–৩০ বছর পিছিয়ে দেব। তারা বড় ভুল করছে। তাদের দেশ থেকে বের করে দিলেই সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

    পুতিন ও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, যদি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিবর্তে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংঘাত দুই-ই এড়ানো যেত। এই দাবিটি অবশ্য তিনি আগেও বহুবার করেছেন, যদিও বাস্তবে এখনও কোনো সংঘাত বন্ধ করার বাস্তব উদাহরণ তার পক্ষে নেই।

    একটি ভিন্ন তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ডেমোক্র্যাটরা তহবিল সংগ্রহে এগিয়ে রয়েছে, কারণ ‘সরকারি সুবিধাভোগীরা সবসময় তাদের পক্ষেই ভোট দেয়।’ তার দাবি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ও সংগঠিত ইউনিয়ন এবং সিভিল সার্ভিস ডেমোক্র্যাটদের প্রচারে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। ফলে রিপাবলিকানদের পক্ষে তহবিল ঘাটতি পূরণে অধিক অনুদান সংগ্রহ করা জরুরি হয়ে পড়ে।

    এই প্রসঙ্গে ইহুদি সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, “আমার ইহুদি বন্ধুদের প্রতি আহ্বান—আপনাদের উচিত ইহুদি ভোটারদের রিপাবলিকানদের পক্ষে ভোট দিতে উৎসাহিত করা।”

    নিউজটি শেয়ার করুন

    পুতিন ও সি চিন পিংকে বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প : অডিও ফাঁস

    আপডেট সময় ০৬:৫০:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

    মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে সরাসরি বোমা হামলার হুমকি দিয়েছিলেন। ফাঁস হওয়া একটি অডিওতে এমন বিস্ফোরক বক্তব্য উঠে এসেছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহের এক অনুষ্ঠানে অনুদানদাতাদের সামনে এ হুমকির কথা নিজেই জানিয়েছিলেন ট্রাম্প।

    সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ওই গোপন অডিওর একটি অনুলিপি প্রকাশ করেছে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস হওয়া অডিওতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, যদি তিনি ইউক্রেনে হামলা বন্ধ না করেন, তাহলে ট্রাম্প মস্কোয় বোমা ফেলবেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি পুতিনকে বলেছিলাম, ইউক্রেনে হামলা বন্ধ না করলে আমার আর কোনো উপায় থাকবে না।” পুতিন তখন ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেননি বলেও জানান তিনি, তবে ট্রাম্পের ধারণা, অন্তত ১০ শতাংশ হলেও পুতিন তার কথাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন।

    একই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প আরও দাবি করেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকেও একই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন। ট্রাম্প বলেন, তিনি সি-কে জানিয়ে দিয়েছিলেন, যদি চীন তাইওয়ানে হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও বেইজিংয়ে বোমা ফেলবে। ট্রাম্পের ভাষায়, “সি চিন পিং ভেবেছিলেন আমি পাগল।” তবে তিনি এটাও বলেন যে, তাদের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কখনো কোনো সমস্যা হয়নি।

    অডিওটিতে ট্রাম্পের এই সব মন্তব্য গত বছর নিউইয়র্ক ও ফ্লোরিডায় অনুষ্ঠিত তহবিল সংগ্রহের কয়েকটি বৈঠকে করা হয়। এগুলো আগে কখনোই প্রকাশ পায়নি। সিএনএন জানায়, সাংবাদিক জোশ ডসি, টাইলার পেজার এবং আইজ্যাক আর্নডরফ একটি বইয়ের জন্য এই অডিও সংগ্রহ করেছিলেন। সেই বইটির নাম ‘২০২৪’। বইটি ঘিরেই এই তথ্যগুলো এখন জনসমক্ষে আসছে।

    বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব অডিও ফাঁসের মাধ্যমে ট্রাম্পের এমন এক রূপ সামনে এসেছে, যা সাধারণত জনসমক্ষে দেখা যায় না। পুতিন ও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে কথোপকথনের অংশগুলোর মধ্যে তার আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির ছাপ স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া, ফাঁস হওয়া অডিওতে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা পরিকল্পনাও উঠে এসেছে। তিনি বলেছিলেন, যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী দেশটিতে বিক্ষোভ করছে, তাদের আগামী ২৫ থেকে ৩০ বছরের জন্য দমন করা হবে এবং প্রয়োজন হলে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

    এক দাতা তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, এসব বিদেশি শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ভবিষ্যতে নেতৃত্বে আসতে পারে। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আপনারা যদি আমাকে জয়ী করেন, আমি এই আন্দোলনগুলোকে ২৫–৩০ বছর পিছিয়ে দেব। তারা বড় ভুল করছে। তাদের দেশ থেকে বের করে দিলেই সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

    পুতিন ও সি চিন পিংয়ের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প আবারও দাবি করেন, যদি বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিবর্তে তিনি প্রেসিডেন্ট থাকতেন, তাহলে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংঘাত দুই-ই এড়ানো যেত। এই দাবিটি অবশ্য তিনি আগেও বহুবার করেছেন, যদিও বাস্তবে এখনও কোনো সংঘাত বন্ধ করার বাস্তব উদাহরণ তার পক্ষে নেই।

    একটি ভিন্ন তহবিল সংগ্রহ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ডেমোক্র্যাটরা তহবিল সংগ্রহে এগিয়ে রয়েছে, কারণ ‘সরকারি সুবিধাভোগীরা সবসময় তাদের পক্ষেই ভোট দেয়।’ তার দাবি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ও সংগঠিত ইউনিয়ন এবং সিভিল সার্ভিস ডেমোক্র্যাটদের প্রচারে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। ফলে রিপাবলিকানদের পক্ষে তহবিল ঘাটতি পূরণে অধিক অনুদান সংগ্রহ করা জরুরি হয়ে পড়ে।

    এই প্রসঙ্গে ইহুদি সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, “আমার ইহুদি বন্ধুদের প্রতি আহ্বান—আপনাদের উচিত ইহুদি ভোটারদের রিপাবলিকানদের পক্ষে ভোট দিতে উৎসাহিত করা।”