ঢাকা ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫

    মার্কিন শুল্ক ও কর্মবিরতিতে পোশাক রপ্তানি ও মূল্য সংযোজন কমেছে ১২ শতাংশ

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:২৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে

    বিদায়ী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও সমগ্র অর্থবছরের রপ্তানি আয় সামগ্রিকভাবে বেড়েছে, তবে শেষ প্রান্তিকে এই পতনের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

    বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত একটি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে, যা গত জুন পর্যন্ত সময়কালকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেষ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে ছিল তার চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি

    রপ্তানি আয় হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটজনিত কর্মবিরতি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দুই কারণে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং সময়মতো পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। এনবিআরের ধর্মঘটে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটেছে, যার ফলে রপ্তানির চালান সময়মতো প্রক্রিয়াকরণে সমস্যা তৈরি হয়েছে।

    এছাড়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিতে হঠাৎ পরিবর্তনের বিষয়টিও তৈরি পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ, যা পরে সংশোধন করে ২০ শতাংশ করা হয়। যদিও ওই শুল্ক চলতি বছরের ৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে, তবুও তা কার্যকর হওয়ার আগেই বিদেশি ক্রেতারা বড় আকারে রপ্তানির অর্ডার স্থগিত করেন, যা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তোলে।

    তবে মার্কিন প্রশাসনের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ২০ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে, একই বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামকেও ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে, চীনের পণ্যে শুল্ক ৩০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতে মূল্য সংযোজনও কিছুটা কমেছে। এই সময়ে ৯১১ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়েছে, যার ফলে মোট মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে এই হার ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

    এছাড়া, রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্যহীনতা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাও তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।

    সব মিলিয়ে, বিদায়ী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে ধস নেমেছে, তার পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা, শুল্কনীতির পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক অচলাবস্থা এবং বাজার বৈচিত্র্যের অভাব। তবে সাম্প্রতিক শুল্ক সংশোধনের মাধ্যমে সামনের দিনে পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশা করছেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    মার্কিন শুল্ক ও কর্মবিরতিতে পোশাক রপ্তানি ও মূল্য সংযোজন কমেছে ১২ শতাংশ

    আপডেট সময় ১২:২৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ অগাস্ট ২০২৫

    বিদায়ী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যদিও সমগ্র অর্থবছরের রপ্তানি আয় সামগ্রিকভাবে বেড়েছে, তবে শেষ প্রান্তিকে এই পতনের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

    বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত একটি ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে, যা গত জুন পর্যন্ত সময়কালকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেষ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলারে, যা আগের প্রান্তিক জানুয়ারি-মার্চে ছিল তার চেয়ে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি

    রপ্তানি আয় হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধর্মঘটজনিত কর্মবিরতি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দুই কারণে রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে এবং সময়মতো পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। এনবিআরের ধর্মঘটে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটেছে, যার ফলে রপ্তানির চালান সময়মতো প্রক্রিয়াকরণে সমস্যা তৈরি হয়েছে।

    এছাড়া, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিতে হঠাৎ পরিবর্তনের বিষয়টিও তৈরি পোশাক খাতকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ, যা পরে সংশোধন করে ২০ শতাংশ করা হয়। যদিও ওই শুল্ক চলতি বছরের ৮ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে, তবুও তা কার্যকর হওয়ার আগেই বিদেশি ক্রেতারা বড় আকারে রপ্তানির অর্ডার স্থগিত করেন, যা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তোলে।

    তবে মার্কিন প্রশাসনের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ২০ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে, একই বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামকেও ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে, চীনের পণ্যে শুল্ক ৩০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর পাল্টা শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

    বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতে মূল্য সংযোজনও কিছুটা কমেছে। এই সময়ে ৯১১ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়েছে, যার ফলে মোট মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে এই হার ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।

    এছাড়া, রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্যহীনতা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যয়ের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাও তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।

    সব মিলিয়ে, বিদায়ী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে যে ধস নেমেছে, তার পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে অনিশ্চয়তা, শুল্কনীতির পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক অচলাবস্থা এবং বাজার বৈচিত্র্যের অভাব। তবে সাম্প্রতিক শুল্ক সংশোধনের মাধ্যমে সামনের দিনে পরিস্থিতি কিছুটা স্বস্তিদায়ক হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশা করছেন।