ঢাকা ০৩:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

    যশোরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি,বালুতে পুঁতে চার কোটি টাকা আদায়: পরিবার নিঃস্ব

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ০২:১৬:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৬৪ বার পড়া হয়েছে

    যশোরের অভয়নগরে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বালুতে পুঁতে রেখে চার কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির স্থগিত হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি এবং নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ধারী এক সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর (৪৮) স্ত্রী আসমা খাতুন সেনাবাহিনীর রাজঘাট ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

    শাহনেওয়াজ কবীর, যিনি জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের মালিক, বর্তমানে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং এলাকা ছেড়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। লিখিত অভিযোগে আসমা খাতুন উল্লেখ করেন, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকালে সৈকত হোসেন হিরা নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্বামীকে কৌশলে বিএনপি নেতা জনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে জনি তাঁকে মারধর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। চাপে পড়ে আসমা খাতুন সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে আসাদুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দুই কোটি টাকা পাঠাতে বাধ্য হন। টাকা পাওয়ার পর তাঁরা শাহনেওয়াজকে মুক্তি দেন।

    এরপর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আবারও শাহনেওয়াজ কবীরকে অপহরণ করা হয়। চলিশিয়া থেকে নওয়াপাড়া যাওয়ার পথে সৈকত তাঁর গতিরোধ করে এবং তাঁকে কনা ইকোপার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আসমা খাতুন ছুটে গেলে জনি, সম্রাট হোসেন ও সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন তাঁর ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখান। এরপর শাহনেওয়াজ কবীরকে বালুতে বুকসমান গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রেখে আরও দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়।

    আসমা খাতুন জানান, প্রাণের ভয়ে তাঁর স্বামী নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন। সাংবাদিক মফিজ উদ্দিনের হিসাবে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। একইসঙ্গে এক কোটি টাকার একটি চেকও আদায় করে নেয় তারা। পরে কাউকে কিছু বললে হত্যার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

    আসমা খাতুন বলেন, “বিএনপি নেতা জনি ও সাংবাদিক মফিজসহ একটি চক্র আমার স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চার কোটিরও বেশি টাকা আদায় করেছে। এখন আমরা নিঃস্ব। ব্যবসা প্রায় বন্ধ, ছেলের ফরম ফিলাপের টাকাও নেই। পথে বসেছি আমরা।”

    ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান জনির মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন ফোনে জানান, ‘আপনি যাকে খুঁজছেন আমি সে মফিজ না।’ এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

    সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করার পর তিন দিনেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন আসমা খাতুন। থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আলিম বলেন, “এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করছি।”

    ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগী পরিবার দ্রুত এবং সুষ্ঠু বিচার চাচ্ছেন।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    যশোরে অস্ত্রের মুখে জিম্মি,বালুতে পুঁতে চার কোটি টাকা আদায়: পরিবার নিঃস্ব

    আপডেট সময় ০২:১৬:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

    যশোরের অভয়নগরে চাঞ্চল্যকর এক ঘটনায় স্থানীয় এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বালুতে পুঁতে রেখে চার কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির স্থগিত হওয়া সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি এবং নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ধারী এক সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর (৪৮) স্ত্রী আসমা খাতুন সেনাবাহিনীর রাজঘাট ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

    শাহনেওয়াজ কবীর, যিনি জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের মালিক, বর্তমানে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং এলাকা ছেড়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। লিখিত অভিযোগে আসমা খাতুন উল্লেখ করেন, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সকালে সৈকত হোসেন হিরা নামে এক ব্যক্তি তাঁর স্বামীকে কৌশলে বিএনপি নেতা জনির ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে জনি তাঁকে মারধর করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন। চাপে পড়ে আসমা খাতুন সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে আসাদুজ্জামানের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দুই কোটি টাকা পাঠাতে বাধ্য হন। টাকা পাওয়ার পর তাঁরা শাহনেওয়াজকে মুক্তি দেন।

    এরপর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আবারও শাহনেওয়াজ কবীরকে অপহরণ করা হয়। চলিশিয়া থেকে নওয়াপাড়া যাওয়ার পথে সৈকত তাঁর গতিরোধ করে এবং তাঁকে কনা ইকোপার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আসমা খাতুন ছুটে গেলে জনি, সম্রাট হোসেন ও সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন তাঁর ওপর আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ভয়ভীতি দেখান। এরপর শাহনেওয়াজ কবীরকে বালুতে বুকসমান গর্ত খুঁড়ে পুঁতে রেখে আরও দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়।

    আসমা খাতুন জানান, প্রাণের ভয়ে তাঁর স্বামী নিজ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপককে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলেন। সাংবাদিক মফিজ উদ্দিনের হিসাবে পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ লাখ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। একইসঙ্গে এক কোটি টাকার একটি চেকও আদায় করে নেয় তারা। পরে কাউকে কিছু বললে হত্যার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

    আসমা খাতুন বলেন, “বিএনপি নেতা জনি ও সাংবাদিক মফিজসহ একটি চক্র আমার স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চার কোটিরও বেশি টাকা আদায় করেছে। এখন আমরা নিঃস্ব। ব্যবসা প্রায় বন্ধ, ছেলের ফরম ফিলাপের টাকাও নেই। পথে বসেছি আমরা।”

    ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান জনির মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাংবাদিক মফিজ উদ্দিন ফোনে জানান, ‘আপনি যাকে খুঁজছেন আমি সে মফিজ না।’ এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

    সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করার পর তিন দিনেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন আসমা খাতুন। থানায় মৌখিকভাবে অভিযোগ করলেও লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আলিম বলেন, “এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তদন্ত করছি।”

    ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভুক্তভোগী পরিবার দ্রুত এবং সুষ্ঠু বিচার চাচ্ছেন।