রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মালয়েশিয়ার সহায়তা চায় বাংলাদেশ-ড. ইউনূস

- আপডেট সময় ০৭:০৬:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫
- / ২৫৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে মালয়েশিয়ার প্রভাবকে কাজে লাগাতে চান। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সভাপতি হিসেবে মালয়েশিয়ার এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ব্যবহার করতে চায় ঢাকা। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।
বারনামা বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। এতে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানের অভিজ্ঞতা এবং আসিয়ানে নেতৃত্বের অবস্থান বিবেচনা করে মালয়েশিয়া এই আঞ্চলিক সংকট সমাধানে একটি অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরারাজ, ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং এবং ইকোনমিক নিউজ সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারী সুসেদারাম।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া পুরো আলোচনায় তাদের প্রভাব খাটাবে, যাতে আমরা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি।’ তিনি সতর্ক করে বলেন যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের ফলে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে, যা এই সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।
তিনি জানান, গত ১৮ মাসে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, যা আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গার সাথে যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা।
ড. ইউনূস জানান, রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হবে। প্রথমটি এই মাসের শেষের দিকে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হবে, যা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার আট বছর পূর্তি উপলক্ষে।
দ্বিতীয় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় অনুষ্ঠিত হবে, এবং তৃতীয়টি বছরের শেষের দিকে কাতারের দোহায় আয়োজনের কথা রয়েছে।
২০২১ সাল থেকে মিয়ানমারে চলমান সশস্ত্র সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়েছে। এই দীর্ঘস্থায়ী মানবিক সংকট কেবল বাংলাদেশ নয়, বরং মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মতো আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোকেও প্রভাবিত করছে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া ১৯৫১ সালের জাতিসংঘের শরণার্থী সনদ বা ১৯৬৭ সালের প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী না হলেও মানবিক দিক বিবেচনায় প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিলে এই সংকটের সূত্রপাত হয়।