ঢাকা ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    সালাহউদ্দিনকে নিয়ে মন্তব্যে উত্তাল চকরিয়া: এনসিপির মঞ্চ ভাঙচুর, সমাবেশ বাতিল

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:২৭:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
    • / ২৫৮ বার পড়া হয়েছে

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র পথসভা মঞ্চ ভাঙচুর করেছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। শনিবার চকরিয়া পৌর শহরের জনতা শপিং সেন্টার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এনসিপির ওই সমাবেশ ও পূর্বঘোষিত আরেকটি ঈদগাহ সমাবেশ বিক্ষোভের মুখে স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

    বিকেল ৫টার দিকে চকরিয়ায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। এর জন্য একটি ট্রাকের ওপর মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে দুপুরের পর থেকেই স্থানীয় বিএনপি-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে তারা মঞ্চে হামলা চালিয়ে সেটি ভেঙে ফেলেন এবং আশপাশের সড়কের ডিভাইডার ও ট্রাকের কাঁচ ভাঙচুর করেন।

    বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ওই দিন দুপুরে কক্সবাজার শহরের এক সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সালাহউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আগে নারায়ণগঞ্জে গডফাদার শামীম ওসমান ছিল, এখন কক্সবাজারের নতুন গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল, জায়গা দখল ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত।” তিনি আরও বলেন, “নাম বলছি না, তবে কক্সবাজারের জনতা রাজপথেই এর জবাব দেবে।” এই বক্তব্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

    চকরিয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সালাহউদ্দিনের পক্ষে স্লোগান দিয়ে শহরের মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, হঠাৎ বিকেলে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মঞ্চে হামলা করে এবং এনসিপির মাইকিং করা কর্মীদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপরই সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

    এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার কারণে চকরিয়ায় তাদের সমাবেশ আর হয়নি। তাদের গাড়িবহর পরে বান্দরবানের উদ্দেশে যাত্রা করে। কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরাও বহরে ছিলেন।

    এর আগে দুপুর ১টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়। পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে কর্মীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পদযাত্রা শেষে শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির নেতারা।

    সেখানে বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের প্রতি অবিচার করেছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নতুন কোনো গডফাদারের আবির্ভাব হতে দেওয়া যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা শেখ হাসিনার প্রধান গডফাদারত্বের অবসান ঘটিয়েছি, এখন নতুন কোনো গডফাদার তৈরি হতে দেব না।”

    পর্যটন খাত নিয়েও সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, “স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের নামে লুটপাট ও উচ্ছেদ চালিয়েছে। আমরা চাই পরিবেশবান্ধব পর্যটন যেখানে স্থানীয়দের স্বার্থ রক্ষা পাবে।”

    রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, “তাদের প্রতি সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পক্ষে বছরের পর বছর তাদের দায়িত্ব বহন করা সম্ভব নয়। এই সমস্যা সমাধানে ড. ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিশ্ব বিবেকের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা দ্রুত রোহিঙ্গাদের সম্মান ও অধিকারসহ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।”

    উল্লেখ্য, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই অঞ্চলেই এনসিপির বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    সালাহউদ্দিনকে নিয়ে মন্তব্যে উত্তাল চকরিয়া: এনসিপির মঞ্চ ভাঙচুর, সমাবেশ বাতিল

    আপডেট সময় ১২:২৭:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র পথসভা মঞ্চ ভাঙচুর করেছেন বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। শনিবার চকরিয়া পৌর শহরের জনতা শপিং সেন্টার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এনসিপির ওই সমাবেশ ও পূর্বঘোষিত আরেকটি ঈদগাহ সমাবেশ বিক্ষোভের মুখে স্থগিত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

    বিকেল ৫টার দিকে চকরিয়ায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। এর জন্য একটি ট্রাকের ওপর মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে দুপুরের পর থেকেই স্থানীয় বিএনপি-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে তারা মঞ্চে হামলা চালিয়ে সেটি ভেঙে ফেলেন এবং আশপাশের সড়কের ডিভাইডার ও ট্রাকের কাঁচ ভাঙচুর করেন।

    বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ওই দিন দুপুরে কক্সবাজার শহরের এক সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সালাহউদ্দিন আহমদকে ইঙ্গিত করে বলেন, “আগে নারায়ণগঞ্জে গডফাদার শামীম ওসমান ছিল, এখন কক্সবাজারের নতুন গডফাদার শিলং থেকে এসেছে। ঘের দখল, জায়গা দখল ও চাঁদাবাজিতে লিপ্ত।” তিনি আরও বলেন, “নাম বলছি না, তবে কক্সবাজারের জনতা রাজপথেই এর জবাব দেবে।” এই বক্তব্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

    চকরিয়ায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সালাহউদ্দিনের পক্ষে স্লোগান দিয়ে শহরের মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে, হঠাৎ বিকেলে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে মঞ্চে হামলা করে এবং এনসিপির মাইকিং করা কর্মীদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। এরপরই সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

    এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার কারণে চকরিয়ায় তাদের সমাবেশ আর হয়নি। তাদের গাড়িবহর পরে বান্দরবানের উদ্দেশে যাত্রা করে। কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীরাও বহরে ছিলেন।

    এর আগে দুপুর ১টায় কক্সবাজার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হয়। পোস্টার, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে কর্মীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পদযাত্রা শেষে শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির নেতারা।

    সেখানে বক্তব্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের প্রতি অবিচার করেছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে নতুন কোনো গডফাদারের আবির্ভাব হতে দেওয়া যাবে না।” তিনি আরও বলেন, “আমরা শেখ হাসিনার প্রধান গডফাদারত্বের অবসান ঘটিয়েছি, এখন নতুন কোনো গডফাদার তৈরি হতে দেব না।”

    পর্যটন খাত নিয়েও সমালোচনা করে নাহিদ বলেন, “স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পের নামে লুটপাট ও উচ্ছেদ চালিয়েছে। আমরা চাই পরিবেশবান্ধব পর্যটন যেখানে স্থানীয়দের স্বার্থ রক্ষা পাবে।”

    রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, “তাদের প্রতি সহানুভূতি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পক্ষে বছরের পর বছর তাদের দায়িত্ব বহন করা সম্ভব নয়। এই সমস্যা সমাধানে ড. ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিশ্ব বিবেকের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা দ্রুত রোহিঙ্গাদের সম্মান ও অধিকারসহ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে।”

    উল্লেখ্য, বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমদ কক্সবাজারের চকরিয়া-পেকুয়া সংসদীয় আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই অঞ্চলেই এনসিপির বক্তব্য ঘিরে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে।