ঢাকা ০৮:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    স্বৈরাচার গেছে, কিন্তু কথা বলার স্বাধীনতা আসেনি : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:২৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
    • / ২৬০ বার পড়া হয়েছে

    স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরেও দেশে এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তার ভাষায়, “বলা হয়, দল যার যার, দেশ সবার। কিন্তু বাস্তবে দেশ সবার নয়, যার হাতে ক্ষমতা, দেশটি তার।”

    শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর ফার্মগেটস্থ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) কার্যালয়ে ‘কেলেঙ্কারির অর্থনীতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. দেবপ্রিয় বলেন, “আমরা স্বৈরাচারকে সরিয়েছি, কিন্তু এখনো অনেকেই স্বাধীনভাবে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। রাষ্ট্রের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো সহায়তা থেকে বঞ্চিত। সরকার বৈষম্য কমানোর কথা বললেও বাজেট বরাদ্দে দেখা গেছে, শহুরে মধ্যবিত্তদের মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় বরাদ্দ বেশি, অথচ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ খুবই কম।”

    তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যম এখন আর কেবল সরকার বা মালিকপক্ষের মুখোমুখি নয়, বরং ‘নৈতিক খবরদারি’ করতে চাওয়া এক উগ্র পাঠকগোষ্ঠীও তৃতীয় প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে, যারা কখনো কখনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বা সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করার মতো হুমকি দিচ্ছে।”

    সাংবাদিকদের দুর্বলতা নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “সাংবাদিকতা দুর্বল হলে নাগরিক সমাজও দুর্বল হয়। এর প্রভাব পড়ে রাজনীতি ও উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে। এভাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সরকার তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে না। দেশে আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি সংস্কারবিরোধী শক্তিশালী জোট গড়ে উঠেছে।”

    তিনি মনে করেন, “ভবিষ্যতের যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের উচিত অর্থনীতি বিষয়ে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা।” অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমীন নীলরমি বলেন, “বইটিতে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের নাম থাকলেও, হুকুমদাতাদের নাম উল্লেখ নেই।”

    বইটির লেখক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, “গত কয়েক দশকে কীভাবে ব্যাংক, শেয়ারবাজার ও অন্যান্য আর্থিক খাতে লুটপাট হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণই এই বইয়ের মূল বিষয়বস্তু।” ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রকাশিত ‘কেলেঙ্কারির অর্থনীতি’ বইটিতে রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে খেলাপি ঋণ, অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুটপাটের মাধ্যমে কিভাবে লুটেরা ধনিকশ্রেণি গড়ে উঠেছে, তার বিশদ বিশ্লেষণ রয়েছে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    স্বৈরাচার গেছে, কিন্তু কথা বলার স্বাধীনতা আসেনি : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

    আপডেট সময় ১২:২৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

    স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পরেও দেশে এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তার ভাষায়, “বলা হয়, দল যার যার, দেশ সবার। কিন্তু বাস্তবে দেশ সবার নয়, যার হাতে ক্ষমতা, দেশটি তার।”

    শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর ফার্মগেটস্থ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল) কার্যালয়ে ‘কেলেঙ্কারির অর্থনীতি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. দেবপ্রিয় বলেন, “আমরা স্বৈরাচারকে সরিয়েছি, কিন্তু এখনো অনেকেই স্বাধীনভাবে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। রাষ্ট্রের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো সহায়তা থেকে বঞ্চিত। সরকার বৈষম্য কমানোর কথা বললেও বাজেট বরাদ্দে দেখা গেছে, শহুরে মধ্যবিত্তদের মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবিলায় বরাদ্দ বেশি, অথচ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ খুবই কম।”

    তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যম এখন আর কেবল সরকার বা মালিকপক্ষের মুখোমুখি নয়, বরং ‘নৈতিক খবরদারি’ করতে চাওয়া এক উগ্র পাঠকগোষ্ঠীও তৃতীয় প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে, যারা কখনো কখনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার বা সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করার মতো হুমকি দিচ্ছে।”

    সাংবাদিকদের দুর্বলতা নিয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “সাংবাদিকতা দুর্বল হলে নাগরিক সমাজও দুর্বল হয়। এর প্রভাব পড়ে রাজনীতি ও উৎপাদনশীল অর্থনীতিতে। এভাবে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সরকার তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে না। দেশে আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি সংস্কারবিরোধী শক্তিশালী জোট গড়ে উঠেছে।”

    তিনি মনে করেন, “ভবিষ্যতের যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের উচিত অর্থনীতি বিষয়ে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা।” অনুষ্ঠানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শারমীন নীলরমি বলেন, “বইটিতে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের নাম থাকলেও, হুকুমদাতাদের নাম উল্লেখ নেই।”

    বইটির লেখক শওকত হোসেন মাসুম বলেন, “গত কয়েক দশকে কীভাবে ব্যাংক, শেয়ারবাজার ও অন্যান্য আর্থিক খাতে লুটপাট হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণই এই বইয়ের মূল বিষয়বস্তু।” ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড প্রকাশিত ‘কেলেঙ্কারির অর্থনীতি’ বইটিতে রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে খেলাপি ঋণ, অবৈধ অর্থের প্রবাহ এবং ব্যাংক ও শেয়ারবাজার লুটপাটের মাধ্যমে কিভাবে লুটেরা ধনিকশ্রেণি গড়ে উঠেছে, তার বিশদ বিশ্লেষণ রয়েছে।