ঢাকা ০৮:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

    মিশরে পানির নিচে মিলল দুই হাজার বছরের প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ

    নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা
    • আপডেট সময় ১২:২৩:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
    • / ২৫৬ বার পড়া হয়েছে

    মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া উপকূলে সমুদ্রতলে চাপা পড়ে থাকা দুই হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো এক নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। পানির নিচে অভিযান চালিয়ে নিদর্শনের কিছু অংশ উদ্ধার করা হলেও ধারণা করা হচ্ছে, এটি প্রাচীন কানোপাস নগরীর সম্প্রসারিত অংশ।

    উদ্ধার হওয়া নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে মাথাভাঙা ভাস্কর্য, চুনাপাথরের ভবন, বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্রের কাঠামো, প্রত্নবস্তু, ডকইয়ার্ডের ধ্বংসাবশেষ এবং নানা স্থাপনা। কর্তৃপক্ষ জানায়, আবু কির উপসাগরের গভীরে ডুবে থাকা এই শহরটি টলেমীয় যুগে প্রায় ৩০০ বছর এবং রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আরও ৬০০ বছর সমৃদ্ধ ছিল। পরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভূমিকম্পের কারণে শহরটি এবং পাশের হেরাক্লিয়ন বন্দর পানির নিচে তলিয়ে যায়।

    সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযানে ক্রেনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমুদ্রতল থেকে ভাস্কর্য তোলা হয়। এ সময় পানির নিচে কাজ করা ডুবুরিরা তীরে দাঁড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রী শরিফ ফাতি বলেন, সাগরের নিচে এখনো অসংখ্য নিদর্শন রয়ে গেছে। তবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসারে কেবল কিছু নিদর্শনই তোলা হচ্ছে, বাকিগুলো জলমগ্ন ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই থাকবে।

    চুনাপাথরের তৈরি যেসব ভবন উদ্ধার হয়েছে, সেগুলোকে উপাসনালয়, আবাসিক স্থাপনা বা বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া পাওয়া গেছে জলাধার, শিলাকাটা পুকুর, যা পানি সংরক্ষণ ও মাছ চাষে ব্যবহৃত হত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে রাজপরিবারের ভাস্কর্য ও রোমা-পূর্ব যুগের স্ফিংক্স মূর্তি। তবে অনেক ভাস্কর্য অসম্পূর্ণ—কোনোটি মস্তকবিহীন, আবার কোনোটি আংশিক ভাঙা। যেমন, গ্রানাইটে খোদাই করা এক টলেমীয় ব্যক্তিত্বের মূর্তির মাথা নেই, আর মার্বেলের তৈরি এক রোমান অভিজাত ব্যক্তিত্বের মূর্তির শুধু নিম্নাংশ অবশিষ্ট আছে।

    অভিযানে আরও উদ্ধার করা হয়েছে একটি প্রাচীন বাণিজ্যিক জাহাজ, পাথরের নোঙর ও একটি প্রাচীন ক্রেন। এগুলো পাওয়া গেছে ১২৫ মিটার দীর্ঘ নোঙরঘাট থেকে, যা টলেমীয় ও রোমান যুগে ছোট নৌকার জন্য ব্যবহৃত হত এবং বাইজান্টাইন আমল পর্যন্ত সচল ছিল।

    তবে ইতিহাসখ্যাত আলেকজান্দ্রিয়া বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, শহরটি প্রতি বছর গড়ে তিন মিলিমিটার ডুবে যাচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়ার এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে বা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

    নিউজটি শেয়ার করুন

    মিশরে পানির নিচে মিলল দুই হাজার বছরের প্রাচীন নগরীর ধ্বংসাবশেষ

    আপডেট সময় ১২:২৩:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

    মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া উপকূলে সমুদ্রতলে চাপা পড়ে থাকা দুই হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো এক নগরীর ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। পানির নিচে অভিযান চালিয়ে নিদর্শনের কিছু অংশ উদ্ধার করা হলেও ধারণা করা হচ্ছে, এটি প্রাচীন কানোপাস নগরীর সম্প্রসারিত অংশ।

    উদ্ধার হওয়া নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে মাথাভাঙা ভাস্কর্য, চুনাপাথরের ভবন, বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্রের কাঠামো, প্রত্নবস্তু, ডকইয়ার্ডের ধ্বংসাবশেষ এবং নানা স্থাপনা। কর্তৃপক্ষ জানায়, আবু কির উপসাগরের গভীরে ডুবে থাকা এই শহরটি টলেমীয় যুগে প্রায় ৩০০ বছর এবং রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আরও ৬০০ বছর সমৃদ্ধ ছিল। পরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভূমিকম্পের কারণে শহরটি এবং পাশের হেরাক্লিয়ন বন্দর পানির নিচে তলিয়ে যায়।

    সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, উদ্ধার অভিযানে ক্রেনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমুদ্রতল থেকে ভাস্কর্য তোলা হয়। এ সময় পানির নিচে কাজ করা ডুবুরিরা তীরে দাঁড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। মিশরের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রী শরিফ ফাতি বলেন, সাগরের নিচে এখনো অসংখ্য নিদর্শন রয়ে গেছে। তবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুসারে কেবল কিছু নিদর্শনই তোলা হচ্ছে, বাকিগুলো জলমগ্ন ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই থাকবে।

    চুনাপাথরের তৈরি যেসব ভবন উদ্ধার হয়েছে, সেগুলোকে উপাসনালয়, আবাসিক স্থাপনা বা বাণিজ্য ও শিল্পকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া পাওয়া গেছে জলাধার, শিলাকাটা পুকুর, যা পানি সংরক্ষণ ও মাছ চাষে ব্যবহৃত হত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে রাজপরিবারের ভাস্কর্য ও রোমা-পূর্ব যুগের স্ফিংক্স মূর্তি। তবে অনেক ভাস্কর্য অসম্পূর্ণ—কোনোটি মস্তকবিহীন, আবার কোনোটি আংশিক ভাঙা। যেমন, গ্রানাইটে খোদাই করা এক টলেমীয় ব্যক্তিত্বের মূর্তির মাথা নেই, আর মার্বেলের তৈরি এক রোমান অভিজাত ব্যক্তিত্বের মূর্তির শুধু নিম্নাংশ অবশিষ্ট আছে।

    অভিযানে আরও উদ্ধার করা হয়েছে একটি প্রাচীন বাণিজ্যিক জাহাজ, পাথরের নোঙর ও একটি প্রাচীন ক্রেন। এগুলো পাওয়া গেছে ১২৫ মিটার দীর্ঘ নোঙরঘাট থেকে, যা টলেমীয় ও রোমান যুগে ছোট নৌকার জন্য ব্যবহৃত হত এবং বাইজান্টাইন আমল পর্যন্ত সচল ছিল।

    তবে ইতিহাসখ্যাত আলেকজান্দ্রিয়া বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, শহরটি প্রতি বছর গড়ে তিন মিলিমিটার ডুবে যাচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়ার এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে বা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।